× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বেইলি রোডে আগুন

এখনও ঘুমের মধ্যে আঁতকে উঠি

সাইফ বাবলু

প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৪ ১০:২৮ এএম

আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৪ ১০:৪০ এএম

বেইলি রোডে আগুনে পুড়ে যাওয়া গ্রিন কোজি ভবনের ষষ্ঠ তলায় একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন সজল রায়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া সজল সোমবার এসেছিলেন ভবনটি দেখতে। প্রবা ফটো

বেইলি রোডে আগুনে পুড়ে যাওয়া গ্রিন কোজি ভবনের ষষ্ঠ তলায় একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন সজল রায়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া সজল সোমবার এসেছিলেন ভবনটি দেখতে। প্রবা ফটো

বেইলি রোডে ভয়াবহ আগুন থেকে যারা বেঁচে ফিরেছেন, তাদের একজন সজল রায়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সজল কাজ করতেন ওই ভবনের ছয় তলার একটি রেস্টুরেন্টে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া সজল দুর্ঘটনার চার দিন পরও ভুলতে পারছেন না দুঃসহ সেই স্মৃতি। এখনও রাতদুপুরে ঘুমের মধ্যে আঁতকে ওঠেন সজল। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেছেন তার সেই অভিজ্ঞতার কথা।

সজল বলেন, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার জোবারপাড় গ্রামের সুশীল রায় ও তৃষ্ণা রায়ের একমাত্র ছেলে তিনি। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছোট। বোনের বিয়ে হওয়ার পর মা-বাবার একমাত্র ভরসাস্থল এখন সজলই। তাকে ঘিরেই মা-বাবার সব স্বপ্ন। এলাকার স্কুল থেকে এসএসসি পাস করার পর স্বপ্নপূরণে পাড়ি জমান ঢাকায়। ওয়ারী এলাকার আর কে চৌধুরী কলেজ থেকে এইচএসসি ও অনার্সের পাট চুকিয়ে ভর্তি হন হাবিবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে। সমাজকল্যাণ বিষয়ে মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা চলছে তার। গতকাল সোমবারও তার পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষ করে ফের ছুটে যান বেইলি রোডে গ্রিন কোজি ভবনের সামনে। দীর্ঘ সময় ধরে নানাভাবে দেখতে থাকেন ভবনের ধ্বংসস্তূপের দৃশ্যগুলো। ওপরে তাকিয়ে দেখছিলেন তার রেস্টুরেন্টটি।

সেদিন আগুন থেকে বেঁচে যাওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে সজল বলেন, ছয়তলায় দুটি রেস্টুরেন্ট। একটি জাসদি, অন্যটি স্ট্রিট ওভেন। তিনি এর একটিতে কাজ করেন। রেস্টুরেন্টের নাম বলতে চাননি তিনি। সজল বলেন, ওইদিন পরীক্ষা দিয়ে রেস্টুরেন্টে এসে কাজ শুরু করেন। তিনি ছাড়াও ১৬ জন স্টাফ কাজ করেন সেখানে। সজল বলেন, ‘রাত তখন সাড়ে ৯টা। দুটি টেবিলে পাঁচ-ছয় জন কাস্টমার। স্টাফরা যে যার কাজ করছেন। এমন সময় হঠাৎ নিচতলায় শোরগোল শুরু হয়। শোরগোর বাড়লে পাঁচতলায় গিয়ে দেখি চারদিকে ধোঁয়া। আগুন ধেয়ে আসছে আমাদের রেস্টুরেন্টের দিকে। দৌড়ে গিয়ে কাস্টমার ও স্টাফদের বলি, আগুন লেগেছে। সবাই ছাদে উঠে যাও। কিচেন রুমে গিয়ে চুলা বন্ধ করতে বলি। এরই মধ্যে ধোঁয়া ছয়তলায় ঢুকতে শুরু করে। কী করব সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। মাকে ফোন করি। বলি ভবনে আগুন লেগেছে, ভগবানের কাছে আশীর্বাদ করো। মা বলে, কিচ্ছু হবে না। এরপর ধোঁয়া বাড়তে থাকে। সাদা ধোঁয়া থেকে কালো ধোঁয়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে নিঃশ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে অক্সিজেনের অভাব অনুভব করতে থাকি। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ চলে যায়। অন্ধকারে কোনোমতে গিয়ে ছাদে উঠি। দেখি পরিস্থিতি খুবই খারাপ। বহু লোক ছাদে। যে যার মতো প্রার্থনা করছে। আমিও মনে মনে প্রার্থনা করি। এরপর ছাদ থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা লোকজনকে উদ্ধার শুরু করেন। তখনও বিশ্বাস হচ্ছিল না শেষ পর্যন্ত সুস্থভাবে উদ্ধার হব। কিন্তু সবার শেষে আমাকে উদ্ধার করা হয়। এরপর বাসায় ফিরি। মা-বাবার সঙ্গে কথা হয়। খোঁজখবর রাখি পরিস্থিতির। পরে জানলাম আগুনে ৪৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। হয়তো মনকে শক্ত করে মাথা ঠান্ডা রেখে ছাদে না উঠলে আমারও প্রাণহানি হতো।’

সজল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, তাদের রেস্টুরেন্টে অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধের সব ব্যবস্থা রয়েছে। স্টাফরাও আগুন নেভানোর যাবতীয় সরঞ্জাম ব্যবহারে প্রশিক্ষিত। কিন্তু সেদিন যখন আগুন লাগেÑ সব ভুলে যায় সবাই। তখন শুধু বেঁচে থাকার লড়াই শুরু হয়। যেহেতু নিচতলায় আগুন লেগেছে, শুধু মনে হয়েছে ওপরের দিকে উঠতে হবে। তিনি তার অভিজ্ঞতাÑ সরকারের কাছে আবেদন জানান, আবাসিক ভবনে যেন কেউ বাণিজ্যিক কার্যক্রম করতে না পারে। সেখানে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা যথাযথ আছে কি না তা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যেন তদারক করে। রেস্টুরেন্টোর কাজে অভিজ্ঞতা থাকায় সেই কাজেই আবার ফিরতে চান সজল। এবার দেখেশুনে নিরাপদ ব্যবস্থা আছে এমন কোনো রেস্টুরেন্টেই কাজ নেবেন বলে তিনি জানান। 

পোড়া ভবনের বেজমেন্টে পড়ে আছে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল

পোড়া ভবনের বেজমেন্টে এখনও পড়ে আছে বেশ কয়েকটি প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ব্যবহৃত পানি বেজমেন্টে জমা হওয়ায় গাড়িগুলোর চাকা পানিতে ডুবে আছে। এর মধ্যে কয়েকটি গাড়ির ইঞ্জিনেও পানি ঢুকেছে। আগুনের চার দিন পরও সেগুলো উদ্ধার করা হয়নি। গাড়িগুলোর মালিকদেরও হদিস পাওয়া যায়নি। হয়তো কেউ মারা গেছেন অথবা আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন। 

বেইলি রোডে এখনও উৎসুক জনতার ভিড়

গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, পুড়ে যাওয়া ভবনের সামনে এখনও মানুষ ভিড় জমাচ্ছে। দেখতে আসছেন ওই ভবনের অন্যান্য দোকানের কর্মচারীরা। পুলিশ গতকালও ভবনটি ঘিরে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছে। কোনো গণমাধ্যমকর্মীকে ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে ছবি বা ভিডিও নিতে দিচ্ছে না তারা। 

গ্রেপ্তার আসামিদের রিমান্ড শেষে আদালতে প্রেরণ

আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের মালিকানাধীন ওই ভবনের ম্যানেজারসহ গ্রেপ্তার চারজনের দুই দিনের রিমান্ড গতকাল শেষ হয়েছে। সকালে তাদের আদালতে হাজির করে রমনা থানার পুলিশ। নতুন করে রিমান্ড আবেদন না থাকায় আদালত তাদের হাজতে পাঠান। মামলাটি পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনায় গতকাল তদন্তের জন্য সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে।

সিআইডির মিডিয়া শাখার কর্মকর্তা আজাদ রহমান জানান, মামলাটি ডিএমপি দক্ষিণের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের তত্ত্বাবধানে তদন্ত হবে। ইতোমধ্যে সিআইডির ক্রাইম সিন বিভাগ পোড়া ভবন থেকে বিভিন্ন ধরনের আলামত সংগ্রহ করেছে। সেগুলো সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। মূলত অগ্নিকাণ্ডের কারণ, উৎপত্তিস্থল ও আগুন কেন এত দ্রুত ছড়িয়েছে সেগুলো তদন্তে এ প্রতিবেদন কাজে লাগবে। 

গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জনের প্রাণহানি হয়। আহত হন বহু নারী-পুরুষ ও শিশু। এ ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন ভবনের ম্যানেজার হামিদুল হক বিপুল, কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার জেইন উদ্দিন সিজান, চা চুমুকের দুই মালিক আনোয়ারুল হক ও শফিকুর রহমান রিমন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা