× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘প্রকৌশলী’ নাজমুল ষোলো আনাই ভুয়া

ফয়সাল খান

প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৪ ০৯:২৩ এএম

আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৪ ১০:৪৫ এএম

ভুয়া প্রকৌশলী নাজমুল হাসান। ছবি : সংগৃহীত

ভুয়া প্রকৌশলী নাজমুল হাসান। ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ঢাকা সিটি নেইবারহুড আপগ্রেডিং প্রজেক্ট (ডিসিএনইউপি) বাস্তবায়ন করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। অনুন্নত এলাকার উন্নয়নের জন্য নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্প ঘিরে নানা অনিয়মের অভিযোগ মিলছে। কোনো যাচাইবাছাই ছাড়াই এ প্রকল্পে একজন ভুয়া প্রকৌশলী নিয়োগ দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, প্রকল্পের কাজের জন্য ২০১৯ সালে নাজমুল হাসান নামে একজনকে ‘সহকারী প্রকৌশলী’ হিসেবে নিয়োগ দেয় ডিএসসিসি। তিনি প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাজ তদারকি করে যাচ্ছেন। অথচ বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাসের যে সার্টিফিকেট তিনি জমা দিয়েছেন সেটি ভুয়া। অনুসন্ধানে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। যদিও সরকারি বিধিমালা ও বিশ্বব্যাংকের গাইডলাইন মেনেই সব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

একটি সূত্রে অভিযোগ পাওয়া যায় যে প্রকল্প পরিচালক ও ডিএসসিসির প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম অর্থের বিনিময়ে ভুয়া সনদধারী এক ব্যক্তিকে প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। অভিযোগের সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী নাজমুল হাসানের বিএসসি পাসের সনদ সংগ্রহ করা হয়। সনদ অনুযায়ী তিনি ২০১৩ সালে বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেছেন। কিন্তু ওই সনদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করে কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ এই রেজিস্ট্রেশন নম্বরে কোনো সার্টিফিকেট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইস্যু করেনি। 

বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির দুটি সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সেখান থেকে জানানো হয়, এই সার্টিফিকেটটি তাদের নয়। এরপর সার্টিফিকেটের ফটোকপি সংযুক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ই-মেইল করা হয়। এর জবাবে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হেলালুজ্জামান চৌধুরী জানান, ‘সার্টিফিকেটটি জাল’। ওই ফটোকপিতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সিল-স্বাক্ষরসহ ইংরেজিতে ‘ফলস সার্টিফিকেট’ লিখে দেওয়া হয়। পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে গেলে, সেখান থেকেও একই উত্তর দেওয়া হয়।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যে কেউ সনদ যাচাই করতে পারেন। তা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিস থেকে সনদ যাচাইয়ের জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তথ্য সরবরাহ করা হয়। এমনকি ই-মেইলে সনদ যাচাই করতে চাইলেও তারা তথ্য সরবরাহ করে থাকেন।

অভিযোগ প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে

সনদ যাচাই করার এত সহজ প্রক্রিয়া থাকার পরও সিটি করপোরেশনের মতো একটি প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে যাচাইবাছাই ছাড়াই এমন ভুয়া সনদের ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দেওয়ায় এর নেপথ্যের কারণ নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগের ক্ষেত্রে এত বড় ভুল হওয়ার কথা নয়। কেউ অবৈধ সুবিধা নিয়ে জেনেশুনেই কাজটি করেছেন। ভুয়া ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগের খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা বলছেন, প্রকল্প পরিচালক চাইলেই তার মোবাইল ফোন দিয়েও সনদ যাচাই করে নিতে পারতেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, এই প্রকল্পে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে অযোগ্য লোকজন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে পিডির (প্রকল্প পরিচালক) একক আধিপত্য ছিল। স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক সুবিধা নিয়ে তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। এমনকি ভুয়া সার্টিফিকেট জেনেই নিয়োগ দিয়েছেন।

অনুসন্ধানের একপর্যায়ে ডিএসসিসির প্রকল্প অফিসে গিয়ে দেখা যায়, দরজার সামনে নামফলকে লেখা রয়েছেÑ ‘নাজমুল হাসান, সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল), ঢাকা সিটি নেইবারহুড আপগ্রেডিং প্রজেক্ট (ডিসিএনইউপি)- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন’। সনদের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে নাজমুল হাসান জানান, সব ঠিক আছে। এক দিন পর তার সনদের কপি এ প্রতিবেদককে দেবেন বলেও জানান। ওই ভুয়া সনদের ফটোকপি তার সামনে উপস্থাপন করা হলে এটি নিজের বলে স্বীকারও করেন নাজমুল। তবে বারবার দাবি করেন সনদটি সঠিক। 

এ বিষয়ে নাজমুল হাসানের সঙ্গে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আবারও কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তখন তিনি জানান, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ৪৪ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন তিনি। ২২ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন। 

এদিকে নাজমুলের ভুয়া সার্টিফিকেটের বিষয়টি সামনে আসার পর নানা রকম ফন্দি আঁটতে শুরু করেন সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা। সূত্র জানায়, তারা নাজমুলের ফাইলে থাকা কাগজপত্র পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন। সর্বশেষ গতকাল রবিবার আবারও নাজমুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, সবকিছু প্রমাণ করার জন্য তিনি আরও সময় চান। 

জাল সনদের বিষয়ে জানতে গত এক সপ্তাহে একাধিকবার অফিসে গিয়েও প্রকল্প পরিচালক সিরাজুল ইসলামের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, আমরা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে সব করেছি। এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করেছি। তার বিরুদ্ধে ওঠা অবৈধ অর্থের বিনিময়ে নিয়োগের বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেন। 

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ঘটনা সত্যি হলে তার (নাজমুল হাসান) চাকরি থাকবে না। এমনকি তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। 

যা আছে প্রকল্পে

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নেইবারহুড এলাকা, যেমন কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, নয়াবাজার-সূত্রাপুর, খিলগাঁও-বাসাবো-মুগদার পরিবেশের উন্নয়নে ডিসিএনইউপি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় পুকুর/ঝিল, উন্মুক্ত স্থান, খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার/মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স নির্মাণ, রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাথ উন্নয়ন, ময়লার ডাম্পিং ঘর নির্মাণ, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধি ইত্যাদি কাজ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। 

২০১৯ সালের মার্চে শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা আগামী বছরের মার্চে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা