ফারুক আহমাদ আরিফ
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪৮ এএম
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৫৪ এএম
প্রবা ফটো
জানুয়ারি মাসে এক দিনও নির্মল বাতাস পায়নি ঢাকাবাসী। ওই ৩১ দিনের মধ্যে তিন দিনের বায়ুমান ছিল অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর বা দুর্যোগপূর্ণ। বাকি ২৮ দিন খুব অস্বাস্থ্যকর। এর রেশ চলছে ফেব্রুয়ারিতেও। প্রায় প্রতিদিনই বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দূষিত বায়ুর শহরের নামের তালিকায় ঢাকা থাকছেই। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি পর্যায়ে কিছু কাজ থাকলেও নাগরিক পর্যায়ে তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না। নির্মল বায়ু পাওয়া ও বায়ুকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা সামাজিক দায়িত্ব হলেও নাগরিকদের এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেই বললেই চলে। গত রবিবারও সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ৩৯৪ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষে ছিল ঢাকা। অনেক দিন ধরেই বুক ভরে শ্বাস নেওয়ারও উপায় নেই এই শহরে।
গত রবিবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁও তেজকুনীপাড়া এলাকায় দেখা যায়, বাতাসে ধুলাবালি উড়ছে। অনেকেই নাকে-মুখে কাপড় চেপে ধরে গন্তব্যে ছুটছেন। রাজীব আহমেদ নামের এক পথচারী বলেন, দেখুন, এই ব্রিজের নিচে প্রচুর ধুলাবালি উড়ছে। অথচ এখানকার কারও কোনো দায়দায়িত্ব নেই পানি ছিটানোর। আমরা সবাই যে যার কাজে ছুটছি। নাগরিক হিসেবে আমাদেরও যে কিছু দায়িত্ব আছে তা যেন ভুলেই গেছি।
ঢাকাসহ দেশের বিভ্ন্নি স্থানে বায়ুমান কেমন থাকে তা নিয়ে গবেষণা করে চলেছে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। তাদের দেওয়া প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মাসওয়ারি হিসাবে ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জানুয়ারি মাসের নিরিখে মোট ২৪২ দিনের মধ্যে ৩৮ দিন ঢাকার বায়ুমান ছিল দুর্যোগপূর্ণ ও ১৭৩ দিনের বায়ুমান ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর। এই ৮ বছরের প্রতিটি জানুয়ারি মাসে কোনো একটা দিন ভালো বায়ু পায়নি ঢাকাবাসী।
একিউআই’র তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত টানা তিন দিন বায়ুদূষণে শীর্ষে ছিল ঢাকার অবস্থান। বিশ্বের ১০০টি শহরের মধ্যে ঢাকা ছিল এক নম্বরে। অবশ্য গত মঙ্গলবার বায়ুদূষণ কিছুটা কমায় সেই অবস্থান চারে নেমে আসে। ওইদিন সকাল ৮টা ৪৮ মিনিটে একিউআই স্কোর ছিল ১৭২, যাকে অস্বাস্থ্যকর হিসেবে ধরা হয়। তার আগে সোমবার সকালেও ঢাকার বায়ু ছিল দুর্যোগপূর্ণ। সেদিন একিউআইয়ে ঢাকার স্কোর ছিল ৩৩৫। রবিবার সকাল সাড়ে ৮টায় স্কোর ছিল ৩৯৪ এবং শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ছিল ২২৭। গতকাল বুধবার সকালে বায়ুদূষণে বিশ্বের ১০০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল তৃতীয়। সকাল ১০টার দিকে বাতাসের মানসূচকে ঢাকার স্কোর ছিল ১৬৭। এ স্কোরকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়।
সরকারের ‘বায়ুদূষণ নিয়্ন্ত্রণ মনিটরিং সেলে’র তথ্যের দিকে নজর দিলেও দেখা যায়, শুধু ঢাকা নয়, দেশের প্রায় অনেক অঞ্চলেই বায়ুদূষণ বাড়ছে। এই সেল ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সাভার, ময়মনসিংহ, রংপুর, নরসিংদী ও কুমিল্লাসহ দেশের ১৩টি জেলা ও অঞ্চলের দৈনিক এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স নামে বায়ুমান প্রকাশ করে থাকে।
সেলের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর বায়ু ছিল নারায়ণগঞ্জ ও রংপুরে। খুব অস্বাস্থ্যকর বায়ু ছিল ঢাকা, গাজীপুর, খুলনা, রাজশাহী, সাভার, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, নরসিংদীতে এবং অস্বাস্থ্যকর বায়ু ছিল চট্টগ্রাম ও সিলেটে। তার আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি খুব অস্বাস্থ্যকর বায়ু ছিল ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, রংপুর, কুমিল্লা ও নরসিংদীতে। ৮ ফেব্রুয়ারিতে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর ছিল রংপুরে। খুব অস্বাস্থ্যকর বায়ু ছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, সাভার ও কুমিল্লায়। ২ ফেব্রুয়ারি খুব অস্বাস্থ্যকর বায়ু ছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও রংপুরে।
বায়ুদূষণের কারণ
পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, বায়ুদূষণের কারণগুলো দুই ভাগে বিভ্ক্ত। তার মধ্যে রয়েছে মানব সৃষ্ট ও প্রাকৃতিক। মানব সৃষ্ট কারণের মধ্যে আছে ভূ-অভ্যন্তর থেকে উত্তোলিত জ্বালানি, যেমনÑ ডিজেল, পেট্রোল, কেরোসিন তেল পোড়ানো, যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া, শিল্প-কারখানার ধোঁয়া, বর্জ্য পোড়ানো, ইটভাটা ও রান্নার কাজে নির্গত ধোঁয়া, কয়লা পোড়ানো ইত্যাদি। প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে আছে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, গ্যাসক্ষেত্র বিস্ফোরণ, জৈব ও অজৈব পদার্থের স্বাভাবিক পচন থেকে গ্যাস নির্গত হওয়া, দাবানল ও ধূলিঝড় ইত্যাদি। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মানব সৃষ্ট কারণেই বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে।
ঢাকার বায়ূদূষণের পেছনে বিশেষভাবে পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। সেগুলো হচ্ছেÑ অপরিকল্পিতভাবে ছোট ও বড় পরিসরে অব্যাহত নির্মাণকাজ, ইটভাটা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে নির্গত ধোঁয়া, বিপুলসংখ্যক ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল ও যত্রতত্র বর্জ্য পোড়ানো। এর বাইরে আবহাওয়াবিদরা দূষণের আরও যে একটি কারণ উল্লেখ করে থাকেন সেটি হলোÑ ‘রিজিওনাল এয়ার পলিউশন’। বর্ষাকালে বাংলাদেশের বায়ু ভালো থাকলেও জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারির দিকে দিল্লি, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশসহ ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে ‘ট্রান্স-বাউন্ডারি ইফেক্ট’ হিসেবে বাংলাদেশে দূষিত বায়ু প্রবেশ করে। এটিকে বলা হয়ে থাকে ট্রান্স-বাউন্ডারি এয়ার পলিউশন বা আন্তঃমহাদেশীয় বায়ু দূষণ।
বায়ুর মান নির্ধারণের ৬ সূচক
বায়ুমান সূচকের জন্য ৬টি সূচক ধরা হয়। তার মধ্যে একিউআই বায়ুর মান সূচকে ‘ভালো’ মানের বায়ুর ক্ষেত্রে স্কোর শূন্য থেকে ৫০। স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে তাকে ‘মধ্যম’ বা ‘গ্রহণযোগ্য’ মানের বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়। ১৫১ থেকে ২০০ স্কোর হলে তাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলে মনে করা হয়। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তাকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু ধরা হয়। আর ৩০১ থেকে তার ওপরের স্কোরকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ধরা হয়।
বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে। সেগুলো হলোÑ বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ এবং ওজোন (ও৩)।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ধুলাবালি নিবারণে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন শুষ্ক মৌসুমে রাস্তায় পানি ছিটিয়ে থাকে। কোথাও কোথাও রাস্তার পাশের গাছপালাতেও পানি ছিটানো হয়। তা ছাড়া বাড়ি নির্মাণের সময় চারপাশ ঢেকে দেওয়ার আইন রয়েছে। যাতে ধুলাবালু বাইরে আসতে না পারে। এ ছাড়া কিছু কার্যক্রম নিয়ে থাকে দুই সিটি করপোরেশন। তবে এসব কার্যক্রমকে নির্মল বাতাস নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট মনে করেন না পরিবেশবিদরা। তারা দুই সংস্থাকে আরও গোছালো পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, আমরা ২৫ বছর ধরে পরিবেশ নিয়ে কথা বলছি। আমাদের দাবি ছিল প্রতিদিন ভোরে সিটি করপোরেশন ঝাড়ু দেওয়ার পর রাস্তায় ও গাছে পানি ছিটাবে। কিন্তু তাদের কাজটা উল্টো হয়ে গেছে। তারা রাত ১০টার পর থেকে রাস্তায় ঝাড়ু দেওয়া শুরু করে। এতে ধুলাবালি মুখে নিয়ে মানুষ বাসায় ফিরছে। আবার গাছে পানি দেওয়া শুরু করে সকাল ১০টা থেকে। এসব পানি দিতে দিতেই রোদে শুকিয়ে যায়। গাছের পাতা থেকে ধুলা সরে না। আর সেই ধুলা আমাদের ফুসফুসে ঢোকে। তাদের এসব কাজকর্ম বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে তেমন কাজে আসছে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন বলেন, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বায়ুদূষণের মারাত্মক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়েছে। উচ্চমাত্রার দূষিত বায়ুর কারণে ফুসফুসে সংক্রমণ, হৃদরোগ ও ক্যানসার হতে পারে। বায়ুদূষণ মানব শরীরের সব প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমনÑ মস্তিষ্ক, ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড, কিডনি ইত্যাদিকে আক্রান্ত করে। যা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তা ছাড়া অসংক্রামক রোগগুলোও অন্যতম কারণ বায়ুদূষণ। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রায় ১১ শতাংশের ফুসফুস ক্যানসারে মৃত্যু হচ্ছে দূষিত বায়ুর কারণে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম জাকির হোসেন খান বলেন, ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে বায়ুদূষণের ফলে মানুষসহ সকল প্রাণ ও প্রকৃতির স্বাস্থ্য ও উৎপাদনশীলতার ওপর স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বায়ুদূষণের অভিশাপ থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে ব্যাপক হারে দূষণ কর আরোপ করা উচিত। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পরিবহন খাত গড়ে তুলতে সব ধরনের প্রণোদনা দিতে হবে। নাগরিকদের দায়িত্ব হবে বায়ূদূষণকারী ও জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক পরিবহন বর্জন করা। একই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব ইট ব্যবহার বাড়াতে হবে। যেকোনো দালান নির্মাণের সময় এমনভাবে ঢেকে দিতে হবে যাতে কোনো অবস্থাতেই বালুকণা বাতাসে মিশতে না পারে।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বায়ুদূষণ এখন সার্বিক সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এর উৎসগুলোর মধ্যে নাগরিক হিসেবে সরাসরি সম্পৃক্ত না হলেও পরোক্ষভাবে আমরা যুক্ত। বিশেষ করে যারা নির্মাণকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত, গাড়িচালক ও মালিক এবং ইটভাটার মালিক হিসেবে সম্পৃক্ত। তাই বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সবারই অংশীদারিত্বমূলক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এই দায়িত্ব পালনে নাগরিকরা যখন সচেতন হবে অর্থাৎ যেখানে-সেখানে বর্জ্য পোড়াবে না, যানবাহনে কালো ধোঁয়া ছড়াবে না, অবৈধ ইটভাটা রাখবে নাÑ এমন সিদ্ধান্ত তাদের নিতে হবে। এসব নাগরিক উদ্যোগই পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পরিণত হয়। তাই আইন প্রয়োগের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজ থেকে সচেতন হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত বায়ু ছিল গত বছর। ২০২৩ সালের ছয় মাস অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি দূষিত বায়ু ছিল। আবার বাকি ছয় মাস ছিল কম বায়ুদূষণ। কিন্তু যে ছয় মাস বেশি ছিল তা সার্বিকভাবে অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি খারাপ ছিল। ওই বছর ৮ থেকে ৯ ভাগ বেশি বায়ুদূষণ ছিল। তবে আশার দিক হচ্ছে, গত বছরের নভেম্বর, ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বায়ুদূষণের প্রবণতা কম লক্ষ করা গেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জিয়াউল হক বলেন, দেশে অক্টোবরের পর থেকে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যায়। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে ২০২৩ সালে তা কম ছিল। ২০২২ সালে যে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা জারি করা হয়েছে সেটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নে কাজ করা হচ্ছে। বায়ুদূষণের উৎস অনেক থাকলেও সেখান থেকে পাঁচ-ছয়টি নিয়ে কাজ করছে সরকার। তার মধ্যে ঢাকার বায়ুদূষণে রান্নাবান্নার জ্বালানির ধোঁয়ার ভূমিকা বেশি। তারপর রয়েছে শিল্প-কারখানার ধোঁয়া, ইটভাটা, বর্জ্য পোড়ানো, নির্মাণসামগ্রীর ধুলাবালি, গাড়ির কালো ধোঁয়া ইত্যাদি।
তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালে বায়ুদূষণ বিধিমালার আলোকে একটি জাতীয় কমিটি করা হয়েছে। সেখানে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে সভাপতি করা হয়েছে। কমিটি বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিতভাবে কাজ করছে। দুই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমও চলমান আছে। তা ছাড়া আমাদের বায়ুদূষণের জন্য ভারতের দূষিত বায়ু ৩০ ভাগ দায়ী। এটি নিরসনেও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ ও ভুটানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ২০২২ সাল থেকে কাজ করা হচ্ছে।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)-এর আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, যে ব্যক্তি দুবাই এয়ারপোর্টে নিজের ময়লা হাতে নেন, তিনিই ঢাকায় ময়লা ফেলে নোংরা করেন। ২০০৬ সালে ইমারত নির্মাণ বিধিতে বলা হয়েছিল, বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে ৩০ ভাগ বা নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে। যাতে পানি যেতে পারে ও সবুজায়ন করা যায়। কিন্তু কেউ সেটি করে না। দেশে আইন ভঙ্গ করতে মানুষ বেশি আনন্দ পায়। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ববানরা নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে না বিধায় নাগরিকরাও তার দায়িত্ব পালন করে না। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ সংরক্ষণে নাগরিকদের অংশগ্রহণ দরকার। শুধু আইন দিয়ে হবে না, এজন্য প্রত্যেকের আগ্রহ ও উদ্যোগ দরকার।