সুন্নতে খতনায় আরেক শিশুর মৃত্যু
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:২১ পিএম
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:৫৯ পিএম
মালিবাগের জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে আহনাফ নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত
ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খতনা করতে গিয়ে শিশু আয়ানের মৃত্যুর রেশ না কাটতেই এবার মালিবাগের জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই শিক্ষার্থীর নাম আহনাফ তাহমিন আয়হাম। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া সেন্টারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আওলাদ হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তার দুই চিকিৎসক হলেন এস এম মুক্তাদির ও মাহবুব।
ওসি মো. আওলাদ হোসেন বলেন, ‘সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে শিশু আহনাফের মৃত্যুর ঘটনায় শিশুটির বাবা বুধবার সকালে ডা. এস এম মুক্তাদিরসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে আটজনের নামে মামলা করেছেন। মামলায় কর্তব্যে অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ঘটনায় চিকিৎসক মুক্তাদির ও মাহবুবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই সঙ্গে জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’
শিশু আহনাফের স্বজনদের অভিযোগ, লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার কথা থাকলেও তারা ফুল অ্যানেসথেসিয়া দিয়েছেন। যে কারণে আহনাফের আর জ্ঞান ফেরেনি। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টায় আহনাফকে সুন্নতে খতনা করাতে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়।ঘণ্টাখানেক পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
জানা গেছে, মালিবাগের জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে অর্থোপেডিক ও ট্রমা সার্জন ডা. এস এম মুক্তাদিরের তত্ত্বাবধানে মঙ্গলবার রাতে সন্তানকে সুন্নতে খতনা করাতে নেন আহনাফের বাবা ফখরুল আলম ও মা খায়কুন নাহার চুমকি। রাত ৮টার দিকে খতনা করানোর জন্য অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার পর আর ঘুম ভাঙে না আহনাফের। ঘণ্টাখানেক পর হাসপাতালটির পক্ষ থেকে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এ বিষয়ে আহনাফের বাবা ফখরুল আলম বলেন, ‘আমরা চিকিৎসককে বলেছিলাম যেন ফুল অ্যানেসথেসিয়া না দেওয়া হয়। তার পরও আমার ছেলের শরীরে সেটি পুশ করেন ডা. মুক্তাদির। আমি বারবার তাদের পায়ে ধরেছি। আমার ছেলেকে যেন ফুল অ্যানেসথেসিয়া না দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানকে অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ মৃত্যুর দায় মুক্তাদিরসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সবারই। আমি তাদের কঠোর শাস্তি চাই।’
এদিকে ঘটনার পরই ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে উধাও হয়ে যান অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. মুক্তাদির।
মুক্তাদির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অর্থোপেডিক বিভাগের জয়েন্ট, ব্যথা, বাতব্যথা, প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা দিতেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কাউকে পাওয়া যায়নি।
এর আগে ৮ জানুয়ারি রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে লাইফ সাপোর্টে থাকা শিশু আয়ান মারা যায়। টানা সাত দিন লাইফ সাপোর্টে ছিল আয়ান।