বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:৪২ পিএম
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:২৯ পিএম
ঢাবি অধ্যাপক নাদির জুনায়েদকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তার কক্ষের দরজায় সাঁটানো পোস্টার। প্রবা ফটো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে একই বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন একই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ক্লাস বর্জন করে এই অধ্যাপকের অব্যাহতি চেয়ে তাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন তারা।
নাদির জুনায়েদের বিচার দাবিতে রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে বিভাগে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টার দিকে বিভাগের চেয়ারম্যানের রুমের সামনে অবস্থান নেন তারা। সেখানে নাদির জুনাইদের অব্যাহতি দাবি করে স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন চেয়ারম্যান। পরে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে মিছিল নিয়ে গিয়ে নাদির জুনাইদের অব্যাহতি দাবি জানান।
বিভাগের ১৬তম ব্যাচের এক ছাত্রী আগের দিন গতকাল শনিবার সকালে ঢাবির উপাচার্য ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের কাছে নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগপত্রের সঙ্গে কল-রেকর্ডিংসহ সহায়ক প্রমাণ যুক্ত করেছেন ওই শিক্ষার্থী।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অধ্যাপক নাদির জুনাইদের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।
লিখিত অভিযোগে ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘তিনি আমার শারীরিক গঠন নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করতেন এবং যৌন উত্তেজনা প্রকাশ করতেন। একই সঙ্গে তিনি আমাকে যৌন প্রকৃতির ফোনালাপে অংশ নিতে প্ররোচিত করতেন।’
নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ওই শিক্ষক অনুষদ বিভাগের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক বিষয়ে-বিভাগের কমিটির সিদ্ধান্ত, পরীক্ষার ফলাফল এমনকি শিক্ষকদের আচরণ সম্পর্কেও তার সঙ্গে কথা বলেছেন।
ওই শিক্ষার্থী আরও লিখেছেন, ‘তিনি তার রোমান্টিক আলাপ-আলোচনা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু অধ্যাপক নাদির বিভাগে ব্যাপক ক্ষমতাধর হওয়ায় ভয়ে তিনি পুরোপুরি যোগাযোগ বন্ধ করতে পারেননি।’
তিনি বলেন, ‘গত দেড় বছর ধরে আমি প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করেছি। দুর্ভাগ্যবশত, এই যন্ত্রণা সরাসরি তার কাছে প্রকাশ করা আমার পক্ষে চ্যালেঞ্জিং বলে মনে হয়েছিল। মানসিক চাপের তীব্রতা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, আমি ঘুমাতে পারতাম না, রাতে অনিদ্রায় ভুগতাম। পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমি গত বছরের শুরুতে কাউন্সেলিং করেছিলাম এবং এমনকি আমাকে ঘুমের ওষুধের আশ্রয় নিতে হয়েছিল।’
ওই ছাত্রী আরও লিখেছেন, তিনি সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করার চেষ্টা করলে অধ্যাপক নাদির শ্রেণিকক্ষে প্রকাশ্যে তাকে তিরস্কার করেন।
শিক্ষার্থী অভিযোগে লিখেছেন, তিনি বারবার বলেন, আমি ‘স্বাভাবিক’ নই এবং আমার চিকিৎসকের সহায়তা নেওয়া উচিত। তার চাপ ক্রমাগত বাড়ছিল। তিনি আমার অনুভূতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বারবার জিজ্ঞাসা করেন কেন আমি তার রোমান্টিক আলাপে সাড়া দিই না। এটি মৌখিক নির্যাতনে পরিণত হয়েছিল। তিনি আমাকে ‘নির্বোধ’ বলে তিরস্কার করেছিলেন এবং আমাকে ‘অনুভূতিহীন’ বলতে থাকেন।
তিনি বলেন, একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি লাগাতার যৌন হয়রানি সহ্য করেছি, তার কর্তৃত্বের অবস্থানের কারণে নিজেকে দুর্বল মনে করেছি।
এ বিষয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করে ওই শিক্ষার্থী বলেন, 'দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছি। এটিকে আমি কেবল ব্যক্তিগত আগ্রাসন হিসেবে বর্ণনা করতে পারি।'
শিক্ষার্থীদের বারবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার না করার পরামর্শ দিলেও শিক্ষক অন্যের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আলোচনার ওপর ব্যাপক নজরদারি চালান। এতে বিভাগে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে বলেও মনে করেন তিনি।
তিনি আরও লিখেছেন, ‘১৬তম ব্যাচের একটি ক্লাস চলাকালীন তিনি তাদের ফেসবুক পোস্ট যাচাই-বাছাই করার বার্তা দিয়েছিলেন। এটি আমাদের বিভাগের মধ্যে ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে, যা সহপাঠীদের মধ্যে স্ব-সেন্সরশিপকাজ করত। আমি এমন একজন শিক্ষকের দ্বারা কোণঠাসা হয়েছিলাম, যিনি ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছেন বলে মনে হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই জাতীয় আচরণ চলতে থাকবে এই আশঙ্কায় আমি উদ্বিগ্ন।’
অভিযুক্ত অধ্যাপক অন্য নারী শিক্ষার্থীদের নাম উল্লেখ করতেন এবং তাদের শারীরিক গঠন সম্পর্কে অশ্লীল মন্তব্য করতেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করেন ওই শিক্ষার্থী।
তিনি লেখেন, ‘আমি বহুবার জেনেছি যে আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে তিনি এমন প্রস্তাব দিয়েছেন।’
লিখিত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান ওই শিক্ষার্থী।