প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:৪৯ পিএম
বগুড়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে আটক হওয়া মেয়েকে প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যের স্ত্রী ছড়িয়ে নেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সকলকে জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি বলছে, এটি জনপ্রতিনিধি ও তাদের স্বজনদের ক্ষমতার অপব্যবহারকে স্বাভাবিকীকরণের নিয়মিত উদাহরণ।
রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো টিআইবির এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত শুক্রবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে বগুড়ার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ১৯ জনকে প্রতারণার অভিযোগে আটকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এ সময় বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্যের স্ত্রী ডিবি কার্যালয়ে যান এবং ক্ষমতা খাটিয়ে মেয়েকে ছাড়িয়ে নেন। বিষয়টিকে ক্ষমতার অপব্যবহারের চরম হতাশাজনক দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। ক্ষমতাকাঠামোর সর্বস্তরে জনপ্রতিনিধি ও তাদের আত্মীয়-স্বজনরা ক্ষমতার অপব্যবহারকে স্বাভাবিকতায় পরিণত করে তোলার যে চেষ্টা করছেন এটি তারই উদহারণ। আইন সবার জন্য সমান হওয়ার কথা থাকলেও এ ঘটনা প্রমাণ করে, দেশে ক্ষমতাশালীরা চাইলেই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে পারেন। কেননা একই মামলায় আটক অন্য অভিযুক্তদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ধাপে ধাপে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অন্যায় করা হয়েছে উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি প্রথম অপরাধ। এরপর অভিযুক্তকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য সংসদ সদস্যের স্ত্রী একদিকে যেমন পরীক্ষায় জালিয়াতি করাকে অন্যায় সমর্থন জুগিয়েছেন তেমনি প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করায় সমানভাবে অপরাধী। অন্যদিকে, সংসদ সদস্যের স্ত্রীর হস্তক্ষেপ মেনে নিয়ে আইনবহির্ভূতভাবে প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্তকে ছেড়ে দেওয়ার সাথে জড়িতরাও একই মাত্রায় আইন লঙ্ঘন করেছেন। তাই এ ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে জবাবদিহিতার আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
বিবৃতিতে জনপ্রতিনিধি ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে ‘সংসদ সদস্য আচরণ আইন’ প্রণয়ণের দাবি জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সংসদের অভ্যন্তরে সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে কার্যপ্রণালি বিধিতে সুস্পষ্ট বিধি বিধান থাকলেও সংসদের বাইরে তাদের সংযত আচরণ নিশ্চিত ও ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে কোনো আইন নেই। ২০১০ সালের ১৪ জানুয়ারি নবম জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী ১৫টি ধারা সম্বলিত একটি বেসরকারি বিল সংসদে উত্থাপন করেছিলেন। নাগরিক সমাজ থেকে বারবার আহ্বান জানানো হলেও, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিলটি পাসের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট অংশীজনের পরামর্শ ও পর্যালোচনার মাধ্যমে সংসদ সদস্য আচরণ বিলটি অবিলম্বে জাতীয় সংসদে পুনরায় উত্থাপন ও আইন হিসেবে পাস করার দাবি জানাচ্ছে টিআইবি।