অমর একুশে বইমেলা
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:৩৫ এএম
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:১৩ এএম
ভাষার মাসে আবারও খুলছে বইমেলার দুয়ার। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালি হৃদয়ের হাসিকান্না। যার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত এ জাতির প্রতিবাদের চেতনা, ইস্পাতদৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেতনা। টানা ১১ মাস পর আজ বেলা তিনটায় পর্দা উঠছে অমর একুশে বইমেলার। আনুষ্ঠানিকভাবে এ মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে বাঙালির প্রাণের বইমেলা উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘অমর একুশে বইমেলা আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্য বিকাশের অন্যতম অনুষঙ্গ। নতুন প্রজন্মকে বইপড়া ও সাহিত্য চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে মাসব্যাপী বইমেলা ও ভাষাচর্চার এ আয়োজন কার্যকর অবদান রাখবে।’
বাংলা একাডেমি জানিয়েছেন, আজ বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে বইমেলার উদ্বোধন করবেন। বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দিবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা ও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ছোটন। অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হবে। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘কালেক্টেড ওয়ার্কস অব শেখ মুজিবুর রহমান : ভলিউম-২’সহ কয়েকটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করবেন।
এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য : ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। বইমেলায় ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯৩৭টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত বছর বইমেলায় অংশ নিয়েছিল ৬০১টি প্রতিষ্ঠান। সেই হিসাবে এবার প্রকাশনা সংস্থা বেড়েছে ৩৪টি। এবারের বইমেলা হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায়। মেলায় ৩৭টি (একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি) প্যাভিলিয়ন থাকবে।
এবার বইমেলায় গতবারের বিন্যাস অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে। তবে খানিকটা আঙ্গিকগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মেলার ‘বাহির পথ’ এবার একটু সরিয়ে কালীমন্দির গেটের কাছাকাছি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্লান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে মোট আটটি প্রবেশ ও প্রস্থান পথ থাকবে। খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের সীমানা-ঘেঁষে রাখা হয়েছে। এবার এমনভাবে খাবারের স্টলগুলো বিন্যস্ত করা হয়েছে যেন বইমেলায় আসা পাঠকের মনোযোগে বিঘ্ন না ঘটে। নামাজের স্থান, ওয়াশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবাও থাকছে মেলায়।
গত বছরের মতোই মন্দির গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে শিশুচত্বর। যাতে শিশুরা অবাধে বিচরণ করতে পারে এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে।
এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায়। সেখানে প্রায় ১৭০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বইমেলার প্রবেশ ও প্রস্থানপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলায় সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। নিরাপত্তার জন্য মেলা এলাকায় তিন শতাধিক ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইমেলা পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে।
সময়সূচি : ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। প্রতি শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। প্রতিদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে। এ ছাড়াও ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে।
অস্থায়ী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন : বইমেলার অগ্নিনিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। মেলা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন প্রকার গাড়ি, পাম্প ও সরঞ্জাম নিয়ে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত থাকবেন ৭৭ জন। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুটি অস্থায়ী ফায়ার স্টেশনে এ কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
গতকাল বুধবার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া সেল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানায়, দুটি অস্থায়ী ফায়ার স্টেশনের মাধ্যমে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি ৯ জন ফায়ারফাইটার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৬টি পয়েন্ট ও বাংলা একাডেমির ৩টি পয়েন্টে মেলা চলার সময় ২টি করে ফায়ার এক্সটিংগুইশার নিয়ে টহল ডিউটি করবেন। অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলে তারা দ্রুত সাড়া দেবেন। এ উদ্দেশ্যে বাংলা একাডেমির পুকুর ও উদ্যানের লেকে ২৪ ঘণ্টাই দুটি পাম্প স্থাপন করা থাকবে। মেলা প্রাঙ্গণে তাৎক্ষণিক অসুস্থদের সেবা দিতে ও হাসপাতালে পরিবহনের জন্য ২৪ ঘণ্টা একটি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন থাকবে।
বইমেলার সোহরাওয়ার্দী প্রাঙ্গণে ফায়ার সার্ভিসের একটি স্টলও স্থাপন করা হয়েছে (স্টল নং ১৭ ও ১৮ নং স্টলে)। সেখানে ফায়ার সার্ভিস থেকে প্রকাশিত অগ্নিনিরাপত্তাবিষয়ক বিভিন্ন বইও পাওয়া যাবে।