বিএসএফের গুলিতে বিজিবি সদস্য নিহত
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:৩৫ পিএম
যশোরের বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বিজিবি সদস্য মোহাম্মদ রইশুদ্দীন হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকালে আসকের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
ফারুখ ফয়সল বলেছেন, সীমান্তে বিজিবি সদস্যসহ বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ভারতীয় বিএসএফের এহেন আচরণ বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি ভারতের অবজ্ঞারই পরিচায়ক। লিখিত বার্তায় বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, বিজিবির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২২ জানুয়ারি ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বিজিবি যশোর ব্যাটালিয়নের ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্ট এলাকায় ভারত থেকে আসা একদল গরু চোরাকারবারিকে সীমান্ত অতিক্রম করে আসতে দেখে কর্তব্যরত বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর টহল দল চ্যালেঞ্জ করে। চোরাকারবারিরা তখন দৌড়ে ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বিজিবি সদস্য সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীন চোরাকারবারিদের ধাওয়া করে ঘন কুয়াশার কারণে দলবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। প্রাথমিকভাবে তাকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও পরবর্তীতে জানা যায়, তিনি বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে ভারতের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ঘটনার পরপরই এই বিষয়ে ব্যাটালিয়ান কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক করা হয় এবং জানা যায়, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রইশুদ্দীন মারা গেছেন।
অপরদিকে বিএসএফের পক্ষ থেকে সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের মুখপাত্র ডিআইজি গণমাধ্যমে বলেন, ওই রাতে বনগাঁ সীমান্তে বিএসএফের এক জওয়ান একটি গরু পাচারকারী দলকে চিহ্নিত করে। বিএসএফের জওয়ান ওই পাচারকারীদের ধাওয়া করলে তারা পাল্টা আক্রমণ চালায়। তার দাবি, পাচারকারী দলটি ভারতের ভেতরে প্রায় ১০০ মিটার ঢুকে পড়েছিল। পালানোর সময় সীমান্ত থেকে ৫০ মিটার দূরে বিএসএফের জওয়ান গুলি চালান। গুলিবিদ্ধ হয়ে সেখানেই এক ব্যক্তি পড়ে যান। বিএসএফ সদস্যরা এসে তাকে তুলে হাসপাতালে ভর্তি করলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তির কাছে কোনো পরিচয়পত্র ছিল না বলে দাবি বিএসএফের।
আসক জানায়, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের গুলিতে বেসামরিক বাংলাদেশি নাগরিক নিহতের সংবাদ প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে থাকে। তবে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য হত্যার ঘটনা নজিরবিহীন। আসকের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী অন্তত ৩১ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করে। তাদের মধ্যে ২৮ জন গুলিতে ও একজন শারীরিক নির্যাতনের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। এ সময় বিএসএফের নির্যাতনে আহত হন আরও ৩১ জন। ২০২২ সালে বিএসএফের গুলিতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২২, আহত ১৫ জন, এবং অপহরণের শিকার হন ১১ জন। বিএসএফের গুলিতে বিজিবি সদস্য নিহতের এ ঘটনায় বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন আসক। তদন্তাধীন বিষয়ে দুই পক্ষকেই সংযত ও দায়িত্বশীল আচরণ প্রদর্শনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে আসক। আসক মনে করে, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করবে। ভবিষ্যতে এ ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে যেকোনো ধরনের মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা, নির্যাতন বন্ধে ভারত সরকারকে তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছে আসক।