প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২২ ১৪:২৬ পিএম
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২২ ১৪:৪২ পিএম
মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার ওয়াস কুরুনী। একসময় কয়েক ক্লাস মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। পরে বাসে বাসে বিক্রি করতেন তাবিজ ও বই। পরে এ পেশা ছেড়ে শুরু করেন কবিরাজি। ফেসবুকে পেজ খুলে এর প্রচার চালাতেন। অনেকে রোগমুক্তির আশায় তার কাছে ফোন করতেন।
এই সুযোগে জিন দিয়ে চিকিৎসা ও তাবিজ দেওয়ার নাম করে হাতিয়ে নিতেন টাকাপয়সা ও স্বর্ণালংকার। কেউ তার প্রতারণা বুঝে চিকিৎসা নিতে না চাইলে তাকে নানা ভয়ভীতিও দেখানো হতো। এভাবে অর্ধশতাধিক মানুষের কাছে লাখ লাখ টাকা হাতিয়েছেন এই কবিরাজ। প্রতারণার টাকায় গ্রামে বানিয়েছেন দালান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। তাকে লৌহজং থেকে আটক করেছে র্যাব-৩।
রাজধানীর টিকাটুলি মোড়ের র্যাব-৩ এর কার্যালয়ে বুধবার (২ নভেম্বর) দুপুরে এসব তথ্য জানান অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি জানান, ওয়াস কুরুনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে ‘গোপন রোগের’ চিকিৎসা, অন্যকে বশে আনার আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা করতেন। তার কাছ থেকে দুটি গলার হার, পাঁচটি গলার চেইন, দুই জোড়া কানের দুল, একটি মাথার টিকলি, একটি মাথার চুল, পাঁচটি সাপ, চারটি বিভিন্ন মন্ত্র লেখা কাগজ, একটি তাবিজের খোসা, দুটি বনাজি কাঠের লাঠি, দুটি হরিণের চামড়া, বিভিন্ন ধরনের গাছগাছালি, চারটি সিংগা, দুটি বড় কড়ি, তিনটি হাড়ের টুকরা, একটি মরিয়ম ফুল এবং একটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানান, সামাজিক মাধ্যমে ওয়াস কুরুনীর পক্ষে কাজ করার জন্য তার ২০ থেকে ২২ জন নির্বাচিত এজেন্ট রয়েছে। যাদের কাজ হলো তার পোস্ট বারবার শেয়ারের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া এবং প্রতারণার মাধ্যমে অন্যদের কাছ থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেওয়া।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ৪ বছর আগে মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং এলাকায় বিয়ে করে সেখানেই বসবাস করছেন ওয়াস কুরুনী। প্রতারণার কাজে তার স্ত্রী তাকে সহায়তা করতেন। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যেভাবে প্রতারণা করতেন ওয়াস কুরুনী
বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের (১৫-২০ বছর বয়সি) টার্গেট করে তার নিয়োগ করা নারী এজেন্টরা বিভিন্ন বালিকা বিদ্যালয় এবং মহিলা মাদ্রাসায় গিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে মিশে যেত। অভিভাবক পরিচয়ে তারা স্কুলপড়ুয়া অল্পবয়সি মেয়েদের বিভিন্ন গোপন সমস্যা নিয়ে কথা বলতো।
এক পর্যায়ে কবিরাজি চিকিৎসা ও তাবিজ নেওয়ার মাধ্যমে সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধানের ব্যাপারে তাদেরকে প্রলুব্ধ করতো। তাদের প্রলোভনে পড়ে তারা সমস্যা সমাধানের জন্য মরিয়া হয়ে উঠতো। প্রলুব্ধ করার পর তার সহযোগীরা কবিরাজ ওয়াস কুরুনীর মোবাইল নাম্বার তাদের দিতো। তখন তিনি তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে তাদের কাছ থেকে অর্থ ও স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন মূল্যবান সম্পদ হাতিয়ে নিতেন। যারা টাকা পাঠাতে পারত না তাদের কাছে থাকা স্বর্ণালংকারগুলো তিনি কুরিয়ারে নিতেন।
এ ছাড়াও টার্গেট করা নারী ও পুরুষদের সঙ্গে তিনি বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে চ্যাটিং ও ভয়েস কলের মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। তাদেরকে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে প্রাথমিকভাবে গায়েবি চিকিৎসা শুরু করার জন্য কচি কবুতরের রক্ত, ইঁদুরের মাংস, বানরের লোম, বাদুড়ের পা, গভীর রাতে শ্মশানঘাট হতে মাটির কলসিতে পানি সংগ্রহ করাসহ নানা জিনিস সংগ্রহ করতে বলতেন। কেউ যদি জানাত এসব তার পক্ষে সংগ্রহ করা সম্ভব নয়, তখন তিনি এসব জিনিস সংগ্রহ করার বদলে মোটা অংকের টাকা দাবি করতেন।