প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:৩৯ পিএম
আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:৫৮ পিএম
শরীয়তপুরের সখিপুরে ইজিবাইকচালক হাবিবুর রহমান ওরফে হাবু হত্যার ঘটনায় আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩। তারা হলেন প্রধান আসামি আরিফ, পারভেজ ও সজিব। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জ সদর ও ঢাকার বনানী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে র্যাব।
র্যাবের দাবি, ইজিবাইকচালকের সঙ্গে আরিফের দেনা-পাওনা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর টিকাটুলিতে র্যাব-৩-এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন।
তিনি জানান, হাবিবুর রহমান ওরফে হাবুর সঙ্গে গ্রেপ্তার আরিফের টাকাপয়সার লেনদেন ছিল। তাদের মধ্যে দেনা-পাওনা নিয়ে তর্কবিতর্ক ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আরিফ হাবিবের ওপর ক্ষিপ্ত হন। তাকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করেন। তারই অংশ হিসেবে ১৩ জানুয়ারি সকালে আরিফ ও তার সহযোগীরা সুইচ গিয়ার, চাকু, চাপাতিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সখিপুরের কাচিকাটা ইউনিয়নের ৮৯নং হাজিয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে অপেক্ষা করতে থাকেন। হাবিব অটোরিকশায় যাত্রী নিয়ে নড়িয়া উপজেলার ঘড়িসার বাজার থেকে সখিপুর থানার দুলারচর এলাকায় যান। হত্যাকারীরা পথে অটোরিকশা থামিয়ে হাবুর সঙ্গে কথা-কাটাকাটি শুরু করেন। একপর্যায়ে তার ওপর হামলা চালান আরিফ ও তার লোকজন। হামলার মধ্যে নাহিদ সরদার তার হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে হাবিবের মাথায় সজোরে কোপ দেন। ওই সময় মাথা সরিয়ে নিলে তার কাধে চাপাতির কোপ লাগে। পরে গ্রেপ্তারকৃত পারভেজ, সজিবসহ অন্য সহযোগীরা তাকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। আরিফ হাবুর পেটের মধ্যে সুইচ গিয়ার দিয়ে ছুরিকাঘাত করেন। আঘাতের ফলে হাবু গুরুতর জখম হন। অচেতন অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকেন। এরপর গ্রেপ্তারকৃতরা পালিয়ে যান। কিন্তু পালানোর সময় স্থানীয় জনতা নাহিদ সরদার নামে একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় হাবিবের ভাই বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। নাহিদ সেই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে জবানবন্দি দেন এবং এ ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেন। পাশাপাশি তিনি এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আরিফ ও অন্যদের ভূমিকা কী ছিল তা-ও জানান।
র্যাব অধিনায়ক আরও জানান, এ মামলার অন্য তিন আসামি আশরাফুল দেওয়ান, মাহাবুব বেপারি, ইউসুফসহ অন্য অজ্ঞাতরা পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারে র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
র্যাব জানায়, আরিফ সখিপুর এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের একজন সক্রিয় সদস্য। তিনি মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। মাঝে মাঝে অটোরিকশা চালাতেন, কখনও কখনও ট্রাকের হেলপারি করতেন। কিন্তু তার মূল কাজ ছিল কিশোর গ্যাং ও মাদক কারবার পরিচালনা করা। নিজে বেপরোয়া চলাফেরার পাশাপাশি এলাকায় কিশোরদের টাকার লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করাতেন। অন্যদিকে পারভেজ ও সজিব বেপারি আপন দুই ভাই। পারভেজ অষ্টম শ্রেণি এবং সজিব নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তাদের মা জর্ডানপ্রবাসী এবং বাবার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। অল্পবয়সে বাবা-মাকে কাছে না পেয়ে পড়াশোনা না করে তারা এলাকায় বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তারা আরিফের নেতৃত্বে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। আরিফের পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেপ্তারকৃত পারভেজ সকলকে ফোন করে একত্রিত করেন এবং নিজে এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র্যাব-৩ অধিনায়ক।