× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পুরান ঢাকায় সাকরাইন

দিনে ঘুড়ির মাঞ্জা, রাতে আলোক ঝলকানি

ইউসুব ওসমান

প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:২৮ পিএম

আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:৪৭ পিএম

পুরান ঢাকায় পৌষ সংক্রান্তি বা সাকরাইন উদযাপন। ছবি : আলী হোসেন মিন্টু

পুরান ঢাকায় পৌষ সংক্রান্তি বা সাকরাইন উদযাপন। ছবি : আলী হোসেন মিন্টু

আজ রবিবার (১৪ জানুয়ারি) পৌষ সংক্রান্তি। অর্থাৎ বাংলা বর্ষপঞ্জির পৌষ মাসের শেষ দিন। পৌষের শেষে যেন ঝেঁকে বসেছে মাঘের শীত। হিমেল হাওয়ার সঙ্গে দিনভর কুয়াশাচ্ছন্ন মেঘে ঢাকা আকাশ। শীতের এই তীব্রতা পুরান ঢাকায় একটুও যেন হেরফের ঘটাতে পারেনি পৌষ সংক্রান্তি উদযাপনে। স্থানীয়রা এই উৎসবকে বলে থাকে সাকরাইন।

এ উপলক্ষে রবিবার দিনমান ছাদে-ছাদে চলে ঘুড়ি ওড়ানো। গানবাজনার অনুষ্ঠান। সন্ধ্যার পর সেই উৎসবই পরিণত হয় আলোর খেলায়। সঙ্গে ছিল পিঠা উৎসব, আতশবাজি, ফানুস ওড়ানো ও ডিজে পার্টি। তরুণ-তরুণী থেকে বয়স্ক মানুষ– সবাই মেতেছিলেন ঐতীহ্যবাহী এই উৎসবে।

প্রতিবছরের পৌষ মাসের শেষ দিনে অর্থাৎ বাংলা জানুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে সাকরাইন উৎসবে মাতে পুরান ঢাকাবাসী। কথিত আছে– ১৭৪০ সালের পৌষ মাসের শেষ এবং মাঘ মাস শুরুর সন্ধিক্ষণে মোঘল আমলে নায়েব-ই-নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের আমলে ঘুড়ি উৎসবের প্রচলন হয়। সেই থেকেই এই উৎসবকে পালন করে আসছে পুরান ঢাকার স্থানীয়রা। সময়ের সঙ্গে উৎসবে যোগ হয়েছে নতুন-নতুন অনুষঙ্গ।

পুরান ঢাকার কলতাবাজারের পাঁচভাই ঘাট লেনের বাসিন্দা সালমান জোয়ার্দার। সাকরাইন উৎসবকে ঘিরে তার ছয় তলা বাড়ির ছাদে বসেছিল ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব। সারা দিন পঙ্খীরাজ, কাউঠাবাজ, রকঘুড্ডি, গগন্দার ঘুড়ি নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত দিন পার করেছেন তার নাতি-নাতনিরা। নাওয়া-খাওয়া ভুলে সবাই দিনভর ব্যস্ত ছিল সুতা, নাটাই আর মাঞ্জা নিয়ে।

দুপুর গড়িয়ে বিকাল নামতেই সবাই জড়ো হয় বাড়ির ছাদে। যোগ দেয় প্রতিবেশীরাও। সারা দিন নারীরা পিঠা-পুলি বানাতে ব্যস্ত থাকলেও বিকাল গড়াতেই তারাও উপস্থিত বাড়ির ছাদে। সবার হাতেই নাটাই আর ঘুড়ি। সাকরাইন উৎসবে ঘুড়ি ওড়ানোই মূল আকর্ষণ। ঘুড়ির নামগুলোও বাহারি। লাভ, নিউ ইয়ারের পাশাপাশি ছোটদের জন্য ছিল গ্যাস বেলুন, তারাবাতি, মাছলেঞ্জা ইত্যাদি।

শিশু-কিশোরদের পছন্দের শীর্ষে ছিল ছোট ভিম, মোটুপাতলু, পঙ্খীরাজ, বেনটেইন ঘুড়িগুলো। বড়দের হাতে ছিল চারগোয়া, দুই গোয়া, লাভ, ডাব্বা, গরুর মাথা, নাকবাহার, মুখবাহার, গগন্দার, মতিমহল, সিংহদার, মাজদারসহ আরও হরেক রকমের ঘুড়ি।

কুয়াশাচ্ছন্ন বিকালেও বাহারি রকমের ঘুড়ি আকাশে উড়তে শুরু করে। লড়াই ছিল– কার ঘুড়ি উড়বে কত ওপরে। সঙ্গে জমে ওঠে ঘুড়ি কাটাকাটির লড়াই। ষাটোর্ধ্ব সালমান জোয়ার্দার যোগ দেন তার নাতনি সুমাইয়ার সঙ্গে। পরামর্শ দিতে থাকেন কীভাবে ওড়াতে হবে তার পঙ্খীরাজ ঘুড়ি। অভিজ্ঞ দাদার সান্নিধ্যে তীব্র লড়াই শেষে জয়ী হয় সুমাইয়ার ঘুড়িই।

সালমান জোয়ার্দার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাপ-দাদার আমল থেকেই এই উৎসব দেইখা আইতাছি। এখন উৎসবের আমেজ বদলাইছে। পুলাপান নানান আয়োজন করতেছে। বয়স হইলেও আমগো তো মন মানে না। এটা পুরান ঢাকার রীতি। সবাই এই উৎসব পালন করে। তাই সবাই ছাদে উইঠা নাটাই আর ঘুড়ি নিয়ে আনন্দ করতাছি।’

লক্ষ্মীবাজারের বাসিন্দা যতীন বসাকের ছেলে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিতিন বসাক। বাড়ির ছাদে সেও মেতেছিল ঘুড়ি উৎসবে। পাশেই আরেকটি বাড়ির ছাদে সাউন্ড বক্সে বাজছিল ডিজে গান। ডিজে গানের তালে তালে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিল নিতিন।

প্রতিদিনের বাংলাদেশকে সে বলে, ‘প্রতিবছর এই দিনে আমরা সাকরাইন উৎসব পালন করে থাকি। বিকালে সবাই মিলে ঘুড়ি ওড়াই। কয়েক দিন আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়। আমার অন্য এলাকার অনেক বন্ধুও এই উৎসব দেখতে এসেছে। তাদের নিয়েই আনন্দ করছি।’

উৎসবে মেতেছিল লক্ষ্মীবাজারের নবদ্বীপ বসাক লেনের আনন্দ বসাক ও তার বন্ধুরা। গেন্ডারিয়ার ধূপখোলা মাঠেও মজে ছিল ঘুড়ি উৎসব। এ ছাড়া সূত্রাপুর, নারিন্দা, কুলুটোলা, সুরিটোলা, নবাবপুর, শ্যামবাজার, বাংলাবাজার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, ধোলাইখাল, শিংটোলা, ডালপট্টি মোড়, লক্ষ্মীবাজার, ফরাশগঞ্জ গেন্ডারিয়া, মুরগিটোলাসহ পুরো এলাকাই মজে ছিল এই উৎসবে।

কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে বাহারি আর রঙচঙে ঘুড়ির ওড়াওড়ি চলে বিকালজুড়ে। সন্ধ্যা নামতেই পুরান ঢাকার আকাশ ছেয়ে যায় বাহারি সব আতশবাজিতে। এরই মধ্যে তরুণদের কেউ মুখে আগুন নিয়ে নানা কসরত দেখাতে থাকেন। আকাশে উড়তে থাকে বাহারি সব ফানুস। ছিল আলোক ঝলকানি। বাড়ির ছাদে ছাদে সাউন্ড বক্সে বাজে ডিজে গান। 

পুরান ঢাকার বাংলাবাজারের ষাটোর্ধ্ব স্থায়ী বাসিন্দা মনসুর আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সাকরাইন উৎসবের ধরন এখন পাল্টে গেছে। বর্তমানে কার ছাদে কতটি সাউন্ড বক্সের ব্যবস্থা আছে সেটা যেন প্রতিযোগিতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সময় এসব সাউন্ড বক্স ছিল না। তখন মাইকের প্রচলন ছিল। আমরা ছাদে মাইক বাজাতাম, পিঠা পুলির উৎসব করতাম। এখন পিঠাপুলির উৎসব কমে গেছে। সেই সময় কে কতটি ঘুড়ির সুতো কাটতে পারে সেটা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলত।’

দুই দিনব্যাপী উৎসবের প্রথম দিন রবিবার সদরঘাট, লক্ষীবাজার, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, দয়াগঞ্জসহ আশপাশের সাকরাইন উদযাপন করা হয়। পরদিন সোমবার শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, লালবাগসহ আশপাশের এলাকার মানুষজন এই উৎসব পালন করবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা