× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

এক হাতে ধরা ছিল তার দুখানি মোয়া

সাইফ বাবলু

প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:৪৩ এএম

আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৫২ এএম

এক হাতে ধরা ছিল তার দুখানি মোয়া

সারা দিন অফিসে কাজ করে ফেরার পথে ছেলের জন্য প্রতিদিনই কিছু না কিছু নিয়ে বাসায় ফিরতেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক দিপু সানা। সারা দিন অপেক্ষায় থাকা মাত্র তিন বছর বয়সি ছেলে ঋষি রাজের জন্য কিছু না কিনলে কি চলে? গত বুধবার সন্ধ্যায়ও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সদরঘাট কার্যালয় থেকে অফিসের স্টাফ বাসে শান্তিনগর নেমে ফুটপাথ ধরে তিনি ধীরে ধীরে হেঁটে বাসায় ফিরছিলেন। পথে ছেলের জন্য কিনেছিলেন মোয়া। সন্ধ্যা সাতটার দিকে ওপর থেকে মাথায় ইট পড়ে মুহূর্তেই মৃত্যু ঘটে তার। তারপরও তিনি তার এক হাতে আঁকড়ে রেখেছিলেন দু’খানি মোয়া।

মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটে বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, নিউ সার্কুলার রোডে ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি ও পার্টি সেন্টারের সামনে পৌঁছা মাত্রই একটি ইট এসে পড়ছে দিপু সানার মাথার ঠিক ওপরে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন তিনি। এ ফুটেজ দেখে আবেগাপ্লুত হওয়ার পাশাপাশি অনেকেই বলছেন, ঘটনাটি নিশ্চয়ই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। দিপুর স্বামী তরুণ কুমার বিশ্বাসেরও ধারণা, তার স্ত্রীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) তিনি তার স্ত্রীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ এনে রমনা থানায় মামলা করেছেন।

ইতোমধ্যে পুলিশ মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, দিপু সানার মাথায় পড়া ইটসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছেন। সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের পর দিপুর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা দিপুর মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরায় রওনা হয়েছেন। 

স্বামী তরুণ কুমার বিশ্বাস প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘পুলিশ আমাকে ফোন করে দিপুর মৃত্যুর খবর জানায়। ছুটে যাই মগবাজার সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এসে দেখি সব শেষ হয়ে গেছে। তিন বছরের ঋষিকে এখন কী করব, কী বলব, কিছুই বুঝতে পারছি না।’ তিনি বলেন, ‘এভাবে ইট এসে তার মাথায় পড়বে, এটা মানতে পারছি না। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই। এটিকে হত্যাকাণ্ড মনে হচ্ছে।’ 

তরুণ কুমার বিশ্বাস পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। ঋষি রাজ চাকরিজীবী এ দম্পতির একমাত্র সন্তান। স্বজনরা জানায়, দিপু সানা বাংলাদেশ ব্যাংকের সদরঘাট শাখায় জড় সামগ্রী ও মনিহারি বিভাগে সহকারী পরিচালক (এডি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মেধাবী দিপু লেখাপড়া করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। তার গ্রামের বাড়ি খুলনার পাইকগাছায়। ছয় বছর আগে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে অফিসার হিসেবে যোগ দেন। 

সরেজমিনে ঘটনাস্থল নিউ সার্কুলার রোড

অনুসন্ধানে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিউ সার্কুলার রোডের ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি ও পার্টি সেন্টারের সামনের ফুটপাথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এখানে মূল গেট বরাবর পৌঁছানো মাত্র ওপর থেকে একটি আস্ত ইট এসে তার মাথায় পড়ে। পথচারী ও ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি হাউসের লোকজন দ্রুত তাকে পাশেই সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে ‘মৃত’ ঘোষণা করেন। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি ও পার্টি সেন্টারের অবস্থান সুলতান টাওয়ারে। দুই বছর আগে সুলতানের কাছ থেকে পুরো ভবনটি ভাড়া নেয় ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি কোম্পানি। এর নিচতলায় গ্যারেজ। দ্বিতীয় তলায় রেস্টুরেন্ট ও পার্টি সেন্টার। তিন তলায় পার্টি সেন্টার। চার তলায় কর্মচারীদের থাকার জায়গা। এখানে একটি রুমও রয়েছে, যেটি মালিক ‘স্টোর রুম’ হিসেবে ব্যবহার করে। ভবনটির সামনে কার্নিশে যাওয়ার জন্য তিন তলায় একটি পকেট গেট রয়েছে। পাশে সিদ্ধেশ্বরী কলেজের বহুতল ভবন। উল্টোপাশে শান্তিনগর বাংলামটর উড়ালসেতু।

প্রত্যক্ষদর্শী ফখরুদ্দিন পার্টি সেন্টারের নিরাপত্তাকর্মী হাবিব জানান, তিনি মূল ফটক খানিকটা ফাঁকা রেখে ভেতরে বসে ডিউটি করছিলেন। রেস্টুরেন্টও তখন বন্ধ হওয়ার পথে। হঠাৎ একটি ইট পড়ার শব্দ ও এক নারীর চিৎকারে তিনি দ্রুত বেরিয়ে আসেন। দেখতে পান, একটি ইট পড়ে আছে এবং তার পাশে এক নারী মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছেন। তিনি এ খবর ম্যানেজারকে দেন। এর মধ্যে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। পরে পুলিশ এসে চারতলা ভবনের সব ফ্লোর ও ছাদ ঘুরে দেখে। ইট কোত্থেকে কীভাবে পড়ল, সেই তথ্য হাবিব দিতে পারেননি। 

মামলায় যা বলা হয়েছে

দিপুর স্বামী তরুণ কুমারের মামলায় বলা হয়েছে, দিপু সানা সদরঘাট থেকে ব্যাংকের স্টাফ বাসে করে শান্তিনগর নামেন। সেখান থেকে তার যাওয়ার কথা ছিল বড় মগবাজার জাহানবক্স লেনের বাসায়। শান্তিনগর মোড় থেকে হেঁটে ১৭১/১ নিউ সার্কুলার রোডে ফখরুদ্দিন পার্টি সেন্টারের সামনে আসা মাত্র অজ্ঞাত ব্যক্তি সিমেন্ট ও বালু দিয়ে তৈরি ইট তার মাথায় ফেলে। পরে তার মৃত্যু ঘটে।

ইটের উৎস খুঁজছে পুলিশ

সানার মাথায় যে ইট পড়েছে সেটার উৎস নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। পুলিশ ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিসি ক্যামেরা ফুটেজসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে রমনা থানা পুলিশ, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগশন (পিবিআই)। আশপাশের সিসি ক্যামেরা ফুটেজও সংগ্রহ করেছে তারা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলের ওপরে নির্মাণাধীন কোনো ভবন নেই। ফখরুদ্দিন পার্টি সেন্টার রয়েছে। কিন্তু ব্লকটি কোথা থেকে পড়ল, তা জানা সম্ভব হয়নি ভিডিও দেখে। তিনি আরও বলেন, যেটার আঘাতে মৃত্যু হয়েছে, সেটা ফুটপাথ নির্মাণে ব্যবহার করা হয় এমন সিমেন্টের খাঁজ কাটা ব্লক। দেখতে ইট আকৃতির। ভিডিওতে শুধু ওপর থেকে ব্লকটি পড়তে দেখা যায়। সেটি ফ্লাইওভার নাকি উঁচু ভবন থেকে পড়েছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।

পুলিশের রমনা জোনের সহকারী উপকমিশনার সালমান ফার্সি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, আমরা সব দিক থেকে তদন্ত করছি। ইট সুলতান টাওয়ার থেকে পড়েছে, নাকি পাশের সিদ্ধেশ্বরী কলেজ ভবনের ছাদ থেকে পড়েছে সেই রহস্য ‍উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। পাশে ফ্লাইওভার রয়েছে। সেখান থেকেও ইটটি আসতে পারে। সবকিছু মাথায় রেখে তদন্ত চলছে। 

এদিকে ভবন থেকে ইট পড়ে ব্যাংক কর্মকর্তা দিপু সানার মৃত্যুকে ‘দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন বলেন, এ জাতীয় ঘটনা নতুন নয়, পূর্বে বিভিন্ন ভবন থেকে কিছু না কিছু পড়ে পথচারী আহত হয়েছেন, না হয় মৃত্যু হয়েছে। কমিশন মনে করে নিরাপত্তার অভাবে এ ঘটনা ঘটেছে। দিপু সানার মৃত্যুতে কারও অবহেলা ছিল কি না, সে বিষয়ে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ডিএমপি কমিশনারকে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী, এক্ষেত্রে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে বলা হয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং সিটি করপোরেশনকে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা