× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বসুন্ধরার পেটে বহু মালিকের দেড় হাজার কোটি টাকার জমি

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৩২ এএম

আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:২৪ এএম

বসুন্ধরার পেটে বহু মালিকের দেড় হাজার কোটি টাকার জমি

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি গ্রাস করে রেখেছে ভূমিদস্যু বসুন্ধরা গ্রুপ। রাজধানীর ভাটারা থানাধীন এই আবাসিক এলাকায় সাতটি প্লটে জমিগুলোর অবস্থান। এসব প্লটে মোট জমির পরিমাণ ৩১৮ কাঠার বেশি। কোনো ন্যায়নীতি বা নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ সন্ত্রাসী কায়দায় বসুন্ধরার চেয়ারম্যান ভূমিদস্যু আহমেদ আকবর সোবহান ওরফে শাহ আলমের নির্দেশে জমিগুলো জবরদখল করে রাখা হয়েছে। জমির মালিকরা বলছেন, শত চেষ্টা করেও ভূমিদস্যু শাহ আলমের কবল থেকে তারা জমিগুলো উদ্ধার করতে পারছেন না।

জানা গেছে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ‘আই’ এক্সটেনশন ব্লকের ২২১৯/এ প্লটে ৩০৪ শতাংশ বা ১৯০ কাঠা জমির মালিক কাউসার আহমেদ অপু। দেশে শিক্ষার প্রসারে এই জমিতে তিনি ‘রয়্যাল গ্রামার স্কুল গিল্ডফোর্ড’ নামে একটি অত্যাধুনিক ইংরেজি মাধ্যম স্কুল প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেন। কিন্তু শুরুতেই স্কুল প্রতিষ্ঠার মহতী পরিকল্পনাটিকে ‘গলা টিপে হত্যা’ করেছেন বসুন্ধরার চেয়ারম্যান ভূমিদস্যু শাহ আলম। ২২১৯/এ নম্বর প্লটটির মালিকানার ফিরিস্তি খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, কাউসার আহমেদ অপু তিনটি এওয়াজ দলিলমূলে এই জমির মালিকানাপ্রাপ্ত হন। রাজধানীর বাড্ডা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে ২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সম্পাদিত ১৪৩৪ নং দলিলমূলে কাউসার আহমেদ অপু প্রথম পক্ষ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার বাসুলিয়া মৌজায় ৩২ শতাংশ জমি ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রা.) লিমিটেডের (বসুন্ধরা হাউজিং) সঙ্গে এওয়াজ বদল করেন। এতে দ্বিতীয় পক্ষ ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টির দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে মো. আবুল কালাম, মোহাম্মদ মাহবুব হায়দার খান ও ময়নাল হোসেন চৌধুরী স্বাক্ষর করে ৩৩ শতাংশ বা ২০ কাঠা জমি এওয়াজ বদল করেন। 

একইভাবে কাউসার আহমেদ অপু বাড্ডা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর সম্পাদিত ৮৪৫১ নম্বর দলিলমূলে প্রথম পক্ষ হিসেবে রূপগঞ্জের বাসুলিয়া মৌজায় ৩৫ দশমিক ৮২ শতাংশ, নাওড়া মৌজায় ৩৮ শতাংশ, বরুনা মৌজায় ২৩ দশমিক ২৭ শতাংশ জমি ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টির সঙ্গে এওয়াজ বদল করেন। দলিলে অপু ভাটারা মৌজায় বসুন্ধরার আই এক্সটেনশনের ২২১৯/এ প্লটে আরও ১ একর ৫ শতাংশ জমির মালিকানাপ্রাপ্ত হন। 

এ ছাড়া প্রথম পক্ষ হিসেবে কাউসার আহমেদ অপু রূপগঞ্জের হরিনাগ্রাম মৌজায় ৪ শতাংশ, কায়েমসাইর মৌজায় ৩৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ, বরুনা মৌজায় ৩৩ দশমিক ৮০ শতাংশ, বাসুলিয়া মৌজায় ৭৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ জমি বাড্ডা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে ১৩২২ দলিলমূলে এওয়াজ বদল করেন। দ্বিতীয় পক্ষ হিসেবে সিটি মাল্টি অ্যাগ্রিকালচারাল কোম্পানির পক্ষে নিযুক্ত আমমোক্তার ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টির পক্ষে চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর আহমেদ আকবর সোবহান ওরফে শাহ আলম ভাটারা মৌজার ১ একর ৬৫ শতাংশ জমির এওয়াজ বদল দলিলে স্বাক্ষর করেন। এই দলিলে আই এক্সটেনশন ব্লকের ২২১৯/এ প্লটের আরও ১ দশমিক ৬৫ একর বা ১০০ কাঠা জমির মালিকানাপ্রাপ্ত হন অপু। তিনটি দলিলে তার জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৯০ কাঠা। 

অপরদিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ‘ই’ ব্লকে রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ রফিকুল ইসলামের মালিকানাধীন ৫টি প্লট দখল করে রেখেছে বসুন্ধরার ভূমিদস্যুরা। এসব প্লটের মালিকানা দলিলের তথ্যে দেখা যায়, হাজী মো. রফিকুল ইসলাম ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বাড্ডা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে সম্পাদিত দলিলমূলে রূপগঞ্জের নাওড়া মৌজায় ১ একর ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ জমি এওয়াজ বদল করেন ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রা.) লিমিটেডের সঙ্গে। দ্বিতীয় পক্ষ হেদায়েতুল ইসলামের পক্ষে আমমোক্তার হিসেবে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রা.) লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর আহমেদ আকবর সোবহান এওয়াজ বদল দলিলে স্বাক্ষর করেন। এই দলিল অনুযায়ী রফিকুল ইসলাম ভাটারা মৌজায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ‘ই’ ব্লকের ৫৫১, ৫৫২, ৫৫৬, ৫৫৭ ও ৫৫৮ প্লটের ৯৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ ও জোয়ার সাহারা মৌজায় ৩২ দশমিক ৯০ শতাংশ জমির দুটি মৌজায় এওয়াজ বদলকৃত ১ একর ২৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ জমির মালিকানাপ্রাপ্ত হন। 

এখানেই বসুন্ধরার ভূমিদস্যুতা থেমে নেই। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ‘এ’ ব্লকের ৩৭৬ ও ৩৮৩ নম্বর প্লটের ২০ কাঠা জমি আছে মোসা. জোবেদা বেগমের। এই প্লট দুটিও অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। জমির মালিকানা ফিরিস্তি খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, ২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর সম্পাদিত দলিল অনুযায়ী মোসা. জোবেদা বেগমকে ৩৭৬ নম্বর প্লটের ১০ কাঠা জমি ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রা.) লিমিটেডের (বসুন্ধরা হাউজিং) পক্ষে দাতা হিসেবে দলিল করে দেন মো. তৌহিদুল ইসলাম, মো. মাহবুব হায়দার খান ও ময়নাল হোসেন চৌধুরী। একইভাবে ‘এ’ ব্লকের ৩৮৩ নম্বর প্লটের ১০ কাঠা জমি মোসা. জোবেদা বেগমকে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রা.) লিমিটেডের পক্ষে দাতা হিসেবে দলিল করে দেন মো. তৌহিদুল ইসলাম, মো. মাহবুব হায়দার খান ও ময়নাল হোসেন চৌধুরী। দলিল সম্পাদনের তারিখ ছিল ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর। 

শাহ আলমের ভূমিদস্যুতার আরেক শিকার মালিহা হোসেন। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ‘আই’ এক্সটেনশন ব্লকে মালিহা হোসেনের মালিকানায় রয়েছে ১ একর ৭ শতাংশের (৬৪ কাঠা) একটি প্লট। যার নম্বর ১১৩৬/টি। এই প্লটটিও অবৈধভাবে দখলে রেখেছে বসুন্ধরার লোকজন। বসুন্ধরা হাউজিংয়ের সঙ্গে চারটি জমি এওয়াজ বদলের মাধ্যমে এই প্লটের মালিকানা পান মালিহা হোসেন। বসুন্ধরার ভূমিদস্যুরা প্লটটির দখল বুঝিয়ে না দিয়ে জমিতে বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে দখল করে রেখেছে। 

নথি থেকে জানা যায়, মালিহা হোসেন রূপগঞ্জ থানাধীন বড়ালুপাড়াগাঁও, ছাতিয়ান, পশ্চিমগাঁও এবং পূর্বগাঁও মৌজায় মোট চারটি জমি বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে এওয়াজ বদল করেন। এসব জমির মোট পরিমাণ ১ দশমিক ৪৬০৪ একর। এর বিপরীতে বসুন্ধরা গ্রুপ রাজধানীর ভাটারা মৌজায় ১ একর ৭ শতাংশ নাল সম্পত্তি দলিল করে দেয়। জমির এওয়াজ বদল দলিল সম্পন্ন করে নামজারি ও খাজনা পরিশোধসহ যাবতীয় দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করা হয়। মালিহা হোসেন বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে যে এওয়াজ বদল দলিল সম্পাদন করেন তার নম্বর ৩০৮১। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলটি ২০২১ সালের ৩ মার্চ সম্পাদন করা হয়। ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রা.) লিমিটেডের পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ মাহবুবুল হায়দার খান, ময়নাল হোসেন চৌধুরী দলিল সম্পাদন করে দেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বসুন্ধরার দখলবাজির আরও অনেক তথ্য। আই ব্লকের ৮৪৪/বি প্লটের জমিটি রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ রফিকুল ইসলামের। এখানে জমির পরিমাণ ৩৮ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৭ সালের ১৩ মার্চ সম্পাদিত এওয়াজ বদল বা বিনিময়পত্র দলিলমূলে বোরাক রিয়েল এস্টেটের পক্ষে সেগুনবাগিচার বাসিন্দা মোহাম্মদ মহসিনের কাছ থেকে মালিকানাপ্রাপ্ত হন আলহাজ রফিকুল ইসলাম। জমিটি হাসপাতাল তৈরির জন্য নির্ধারিত ছিল। 

এ ছাড়াও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ‘ডি’ ব্লকের ৯ নম্বর সড়কের ৩৮৯ নম্বরে ৫ কাঠার প্লটটিও দখল করে নিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। ৫ কাঠা জমির মধ্যে আতিকুর রহমান রুবেল ও রোমাইশা রহমানের কাছ থেকে ২০১৮ সালের ৪ জুন ‘অপ্রত্যাহারযোগ্য ব্যাপক ক্ষমতাযুক্ত পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল’মূলে মালিকানা অর্জন করেন রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ রফিকুল ইসলাম। 

একইভাবে অপ্রত্যাহারযোগ্য ব্যাপক ক্ষমতাযুক্ত পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলে আলহাজ রফিকুল ইসলাম একই প্লটের দুই কাঠা জমির মালিকানাপ্রাপ্ত হন সেগুনবাগিচার বাসিন্দা আনিছুর রহমান খানের কাছ থেকে। 

এ ছাড়া বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ‘জি’ ব্লকের আফরোজা বেগম রোডে জি-৩২৯ নম্বরে আলহাজ রফিকুল ইসলামের ৪ কাঠার প্লটটিও দখল করে রেখেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। দলিলদাতা ছিলেন ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টির পক্ষে মো. লিয়াকত হোসেন, বিদ্যুৎ কুমার ভৌমিক, তৌহিদুল ইসলাম ও জহির উজ্জামান। এই প্লটের প্রকৃত মালিককে সেখান থেকে উচ্ছেদ করে নিজের কবজায় নিয়েছেন শাহ আলম। প্রকৃত মালিক সেখানে যেতেই পারছেন না। 

ভুক্তভোগী জমির মালিকরা বলছেন, দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে এভাবেই ভূমিদস্যুদের সর্দার শাহ আলম সাধারণ মানুষের কাছে জমি বিক্রি করার পর নানা কৌশলে আবার নিজের কবজায় নিয়ে যায়। যাতে করে পরে জাল দলিল বানিয়ে জমি বা প্লটগুলো অন্যের কাছে বিক্রি করে দিতে পারে। বিভিন্ন জনের মালিকানায় থাকা জমিগুলো ভূমিদস্যু শাহ আলমের কাছ থেকে উদ্ধার করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা