প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:২২ পিএম
নগরজুড়ে বিকট শব্দের ঝঙ্কার। ছবি : সংগৃহীত
থার্টি ফার্স্ট নাইটে ঢাকা মহানগরীতে ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি না ফুটাতে নির্দেশনা দিয়েছিল পুলিশ। বরাবরের মতো সেই নির্দেশনা কাজে আসেনি। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে হাজার হাজার ফানুস ওড়ানো হয়েছে। গত রবিবার রাত সাড়ে ১১টার পরপরই ঢাকার আকাশে আলোর ঝলকানি শুরু হয়। রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে আতশবাজির বর্ণিল আলোর সঙ্গে মুহুর্মুহু কান ফাটানো শব্দে বিরক্ত হয়েছে রাজধানীবাসী। শিশুসন্তানকে ঘিরে ভয় উদ্বেগ আর শঙ্কা নিয়ে অনেকটা সময় পার করেছেন অনেক মা। বিকট শব্দে আতঙ্কে কেঁপে কেঁপে উঠেছে অনেক শিশু। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের বিরক্তির কথা প্রকাশ করেছেন।
ঘিঞ্জি ঢাকায় আতশবাজি ও আগুন ধরিয়ে ফানুস ওড়ানো ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ফানুস উড়তে উড়তে বাড়ির ছাদে বা বৈদ্যুতিক তারে পড়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২০২২ সালের থার্টি ফার্স্ট নাইটের আতশবাজি ফোটানো ও ফানুস ওড়ানোর কারণে প্রায় ১০০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে; এতে প্রায় ১৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ক্ষতি হয়। মেট্রোরেলের লাইনে ফানুস পড়ে থাকার কারণে মেট্রোরেল চলাচলে অন্তত দুই ঘণ্টা বিলম্ব হয়েছিল। এবারও থার্টি ফার্স্ট নাইটে মেট্রোরেলের তারে আটকে ছিল ইংরেজি বর্ষবরণের ৩৮টি ফানুস। মুখে কেরোসিন নিয়ে শূন্যে ছুড়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার সময় ভাতিজা ও দুই চাচা দগ্ধ হয়েছেন। এ ছাড়া ধানমন্ডির একটি বাড়িতে ফানুস পড়ে আগুন ধরে গেলে ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে।
জাতীয় জরুরি সেবায় অভিযোগ
থার্টি ফার্স্ট নাইটে বিকট শব্দের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সহযোগিতা চেয়েছেন অনেকে। গতকাল বিকালে ৯৯৯-এ নিয়োজিত পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার জানান, রবিবার রাত ১২টা পর্যন্ত শব্দদূষণ সংক্রান্ত ৯৯৯-এ ফোনকল আসে ৫২৬টি। এর মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগর এলাকা থেকে সেবাপ্রত্যাশী ছিলেন ১০৭ জন। রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে সোমবার দুপুর ১টা পর্যন্ত শব্দদূষণ সংক্রান্ত ৪৪৫টি কল এসেছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগর এলাকা থেকে সেবাপ্রত্যাশী ছিলেন ১৩০ জন। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উচ্চস্বরে লাউডস্পিকারে গান-বাজনা বন্ধ করে শব্দদূষণ সংক্রান্ত অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি করে।
কামরাঙ্গীরচরে চাচা-ভাতিজা দগ্ধ
কামরাঙ্গীরচরে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে বাড়ির ছাদে ফানুস ওড়াতে গিয়ে তিনজন দগ্ধ হয়েছে। দগ্ধরা হলোÑ স্বপন বেপারীর ছেলে সিয়াম (১৪) ও দানেশ বেপারীর দুই ছেলে রাকিব হোসেন (১৭) ও রায়হান (১৭)। সিয়াম ও রাকিব-রায়হান সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। তাদের মধ্যে ভাতিজা সিয়ামের অবস্থা আশঙ্কাজনক জানিয়েছেন চিকিৎসক।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম বলেন, রবিবার রাতে তিনজন দগ্ধ হয়ে আসে। তাদের মধ্যে সিয়ামের শরীরের ৮৮ শতাংশ, রাকিবের ৬ শতাংশ, রায়হানের ২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। সিয়ামের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকি দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানায়, রবিবার রাতে কামরাঙ্গীরচর মুজিবর ঘাট এলাকার সোহেল সাহেবের বাড়ির পঞ্চম তলার ছাদে ঘটনাটি ঘটে।
সিয়ামের খালাতো ভাই মো. সজীব বলেন, রাত ১২টার দিকে সিয়াম মুখে কেরোসিন নিয়ে আগুন জ্বালাচ্ছিল। অসাবধানতাবশত তার শরীরে কেরোসিন পড়ে গিয়ে আগুন ধরে যায়। তখন সেই আগুন নেভাতে গিয়ে সেখানে থাকা যমজ দুই চাচা রাকিব-রায়হান কিছুটা দগ্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাদের উদ্ধার করে বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়।
সিয়ামের বাবা স্বপন বেপারী জানিয়েছেন, সিয়াম তার যমজ দুই চাচাসহ পাশের একটি বাড়ির পঞ্চম তলার ছাদে গিয়েছিল। সেখানে তারা মুখে কেরোসিন ভরে আগুন ধরাতে গিয়ে দগ্ধ হয়। সিয়াম একটি মোটর মেকানিকসের ওয়ার্কশপে কাজ করে।
মেট্রোরেলের লাইনে ফানুস
থার্টি ফার্স্ট নাইটে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মধ্যরাতে ওড়ানো ফানুস এবারও মেট্রোরেলের লাইন ও তারে পড়েছে। সোমবার মেট্রোরেল পরিচালনকারী ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিটিএমসিএল) পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ডিএমটিসিএলের কর্মীরা রাত ৩টার পর থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত টহল দিয়েছে। এ সময় বিভিন্ন এলাকায় মেট্রোরেলের তার ও লাইনে পড়ে থাকা ৩৮টি ফানুস অপসারণ করা হয়েছে।
ধানমন্ডিতে আগুন
থার্টি ফার্স্ট নাইটের রাত ২টায় রাজধানীর ধানমন্ডির ১৫ নম্বর সড়কের ১৩ নম্বর বাড়ির সীমানাপ্রাচীরের ওপরে ঢেকে দেওয়া প্লাস্টিক শিটে একটি জ্বলন্ত ফানুস এসে পড়ে। আগুনের তাপে প্লাস্টিকের শিট গলে সেখানে আগুন ধরে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, রাজধানীতে ফানুস ওড়ানো খুবই বিপজ্জনক। জ্বলন্ত ফানুস বাড়ির ছাদে বা বিদ্যুতের তারে পড়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য আগে থেকেই নগরবাসীকে ফানুস না ওড়ানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। এ ব্যাপারে যেকোনো সময় ফানুস ওড়ানোর নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে।