প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ০১:০৩ এএম
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৫৬ এএম
সংগৃহীত ছবি
ঢাকা মহানগর পুলিশ আতশবাজি নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও ব্যাপক আতশবাজি ফুটিয়ে রাত ১২টা ১ মিনিটে থার্টিফার্স্ট উদ্যাপন করেছে নগরবাসী। ওড়ানো হয়েছে নিষিদ্ধ ফানুসও। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে পুলিশের সব নিষেধাজ্ঞা ভেস্তে গেছে। নগরজুড়ে ফোটানো হয়েছে অগণিত আতশবাজি।
তবে এ উৎসব পুরোটাই ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান করার অনুমতি ছিল না। তাই বাসার ছাদে থার্টিফার্স্ট নাইটের অনুষ্ঠান করে নগরবাসী। বিশেষ করে পুরান ঢাকা, গুলশান ও বনানীতে উন্মাদনা বেশি ছিল।
সরেজমিন ঘুরে রবিবার সন্ধ্যার পর থেকেই রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে টহল দিতে দেখা যায়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়াকড়ি। মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয় পুলিশ সদস্যরা। শুরু হয় ব্যাপক টহল ও তল্লাশি।
রাত ৯টার পরই রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোর দোকানপাট বন্ধ হতে শুরু করে। এ ছাড়া শহরের অভিজাত এলাকাগুলোয় প্রবেশাধিকার ছিল অনেকটাই সংরক্ষিত।
এর আগেই জানানো হয়েছিল, থার্টিফার্স্ট নাইটে উন্মুক্ত স্থানে কোনো পার্টি করা যাবে না। রবিবার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত সব বার বন্ধ থাকবে।
ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তার কারণে থার্টিফার্স্ট নাইটের কোনো অনুষ্ঠান উন্মুক্ত স্থানে করতে দেওয়া হয়নি। তবে বাসার ছাদসহ বিভিন্ন স্থানে নগরবাসী ইংরেজ নববর্ষের দিবসটিকে স্বাগত জানিয়েছে।
এর আগে ডিএমপি কুড়িল থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত ৩০০ ফিট এলাকায় মোটর রেসসহ সব ধরনের জমায়েত বন্ধ করে দেয়। এর মধ্যেও বিপুলসংখ্যক মানুষ ওইসব এলাকায় গিয়ে ইংরেজি নববর্ষের প্রথম প্রহর উদ্যাপন করে।
ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে রাত ১১টায় গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বরে নিরাপত্তা প্রস্তুতি দেখতে যান ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। এ সময় তিনি নিরাপত্তাব্যবস্থায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইট ঘিরে কোনো হুমকি নেই। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে নগরবাসীকে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আমরা সব দিকে খবর রাখছি। আমাদের গোয়েন্দা দলও ছদ্মবেশে কাজ করছে।
এদিকে দিবসটির নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ বিষয়ে রাজধানীর গুলশান-২ চত্বরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মহাপরিচালক এম. খুরশিদ হোসেন বলেন, জঙ্গি হামলা বা এ ধরনের হামলার বিষয়ে নেতিবাচক কোনো তথ্য র্যাবের কাছে নেই। তবে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাব প্রস্তুত রয়েছে। র্যাবের হেলিকপ্টার, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড টিম, ক্রাইম সিন ভ্যানসমূহ প্রস্তুত রাখা হয়েছে কৌশলগত স্থানে। যাতে যেকোনো সময় যেকোনো প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখা যায়। ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন কোনো কিছু করা যাবে না। রাজধানীর অভিজাত এলাকাসহ (গুলশান, বনানী বারিধারা, ধানমন্ডি) বিভিন্ন স্থানে কেউ মাতাল হয়ে উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত রয়েছে র্যাব।
র্যাব ডিজি বলেন, প্রতি বছর থার্টিফার্স্ট নাইটে ঢাকাসহ সারা দেশে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। ঠিক এ বছরও একইভাবে সারা দেশে নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি ব্যাটালিয়নে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। সারা দেশের তুলনায় ঢাকা শহরে আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছি, অভিজাত এলাকা এবং পাশেই ডিপ্লোম্যাটিক জোন। এসব স্থানের গুরুত্ব মাথায় রেখে বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে দায়িত্ব পালন করছি।’
এদিকে রবিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ডিএমপি কমিশনার থার্টিফার্স্ট নিয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার পরও যদি কেউ ফানুস ওড়ায়, আতশবাজি ফোটায় বা অস্ত্র দিয়ে গুলি ছোড়ে তাহলে নির্দেশনা অনুযায়ী অ্যাকশন নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। তাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা হবে।
ডিএমপির নিষেধাজ্ঞা ছিল উচ্চৈঃস্বরে হর্ন বা মাইক বাজিয়ে মানুষ বিরক্ত করা যাবে না। তবে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে খবর নিয়ে জানা গেছে, রাত ১২টার আগেই অনেকে মোটরসাইকেলে রেসিং করে। হর্ন বাজিয়ে আনন্দ উল্লাস করে। আলোকসজ্জায় সাজানো হয় রাজধানীর বিভিন্ন ভবন। সড়ক সাজানো হয় আলোকবাতিতে। সন্ধ্যা থেকে হাতিরঝিলে যানবাহন প্রবেশ নিষিদ্ধ করে ডিএমপি। তবু বিনোদনপ্রেমীরা ভিড় জমান হাতিরঝিলে। নিরাপত্তার কড়াকড়ির মাঝেও নতুন বছরকে বরণ করতে উৎসাহের অন্ত ছিল না ঢাকাবাসীর মধ্যে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, থার্টিফার্স্ট নাইট উদ্যাপন কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বহিরাগতদের প্রবেশে কড়াকড়ি করা হয়। যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ডিএমপি ও ঢাবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ নীলক্ষেত মোড়, শাহবাগ, দোয়েল চত্বর ও উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায় ব্যারিকেড দেওয়া হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। যাদের বিশ্ববিদ্যায়ের পরিচয়পত্র ছিল শুধু তাদেরই ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।