বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:১৫ পিএম
ইউনেস্কোর স্বীকৃতির পাওয়ায় সংবর্ধনা পেল ১১১ রিকশাচিত্র শিল্পী। প্রবা ফটো
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো কর্তৃক অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় ঢাকা শহরের ‘রিকশা ও রিকশাচিত্র’ অন্তর্ভুক্তি ও স্বীকৃতি প্রদান করায় ১১১ জন রিকশাচিত্র শিল্পীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এক সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে রিকশা চিত্র শিল্পীদের সম্মানিত করা হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে শিল্পীদের হাতে সম্মানী, সনদপত্র ও চাদর পরিয়ে দেওয়া হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, বিশেষ অতিথি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ, আলোচক বাংলা একাডেমির ফোকলোর, জাদুঘর ও মহাফেজ খানার পরিচালক ড. আমিনুর রহমান সুলতান। বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা।
অনুষ্ঠানে সেলিনা হোসেন বলেন, ‘আমরা মনে করি এইভাবে সবাইকে সম্মানিত করার মাধ্যমে আমাদের সব শিল্পীদের কাজগুলোকে একটি বড় জায়গা অনুধাবন করা আগামী প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। শিল্পীদের অভিনন্দন জানাই যারা এ কাজগুলো করেছেন। কাজগুলো করার মাধ্যমে তারা আমাদের দিগন্তকে প্রসারিত করেছেন, আমাদের শিল্পের জয়গান গেয়েছেন এবং শিল্পবোধের চাতুর্যকে অনেকদূর নিয়ে গেছেন। আজকের এই অভিনন্দন জানানোর মধ্যদিয়ে তারা অনুপ্রাণিত হয়ে আরও ভালো কাজ করবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজেদেরও শিল্পীদের এই সূত্রকে ধারণ করতে হবে যেই সূত্রের ভেতর দিয়ে আমরা আমাদের চারপাশের সব শিল্প মানুষদের অনুপ্রাণিত করব। আমাদের সবকিছু এভাবেই এগিয়ে যাবে। এগিয়ে যাওয়ার ভেতর দিয়ে আমাদের যাবতীয় জীবনের সবটুকু নতুন করে দেখব। দেখার ভেতর দিয়ে নিজেদের আবিষ্কারকে নতুন চোখে দেখব।’
প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘আমাদের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পালকে আরও একটু নতুন পালক যুক্ত হয়েছে সেটি হলো ঢাকার রিকশা পেইন্টিং। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো বতসোয়ানায় এই রিকশা পেইন্টিংকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাউল গান, শীতল পাটি, মঙ্গল শোভাযাত্রা ও জামদানীর পর এটি আমাদের পঞ্চম স্বীকৃতি। এবার আমাদের যেই অর্জন সেটির জন্য প্রায় ৮ বছর ধরে কাজ চলছিল। মাঝখানে এটিকে তারা এটিকে ফিরিয়েই দিয়েছিল, পরবর্তীতে আমরা সেটিকে রিরাইট (পুনঃলিখন) করে জমা দিয়েছি। পরে এটির উপস্থাপনা এত ভালো হয়েছিল যে এটি একটি শ্রেষ্ঠ উপস্থাপনা হিসেবে তারা ধরেছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এর জন্য ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ও সংশ্লিষ্টরা এটির জন্য কৃতিত্বের দাবিদার, তাই তাদেরকে করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানাই। বাংলা একাডেমিকেও করতালি দিয়ে ধন্যবাদ জানাই যে তারা এটির পেছনে যথেষ্ট সময় দিয়েছে এবং কাজ করেছে। যেদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমি এই অর্জনের কথা জানানোর পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই রিকশা পেইন্টিংয়ের উপর আদ্যোপান্ত সব তিনি বলে গেলেন। এটি আমাকে আপ্লুত করেছে। শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বললেন যে করোনার সময় শিল্পী-সাহিত্যিকদের অনেক সাহায্য করলেও রিকশা পেইন্টিংয়ের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের তো খবর নাই! তিনি বললেন, তিনি ৭০ জনকে প্রণোদনা দিয়েছেন, এটি শুনে আমি লজ্জাই পেয়েছিলাম তার সামনে। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যারা রিকশা পেইন্টিংয়ের সাথে জড়িত তাদেরকে সংবর্ধনা দিতে হবে, তালিকাবদ্ধ করতে হবে, শিল্পীদের সাথে একীভূত করে নিবো আমরা কেননা তারাও একেকজন আর্টিস্ট।’
শিল্পীদের সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রিকশা পেইন্টিংকে বিশ্ব পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার অসাধ্যকে সাধন করেছেন শুধু আপনারাই। বিশ্বে মনে হয় আপনারাই প্রথম যারা এ নামের পেইন্ট করে বিশ্বের অপরিমেয় ঐতিহ্যের অংশ হয়েছেন। এটি আপনাদের পক্ষেই সম্ভব, বাংলার মানুষের পক্ষেই সম্ভব। যারা এটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ভবিষ্যতে আরো একটি বড় আয়োজনের মাধ্যমে যাতে আমরা আপনাদের সঙ্গে সম্মিলিত হতে পারি সে প্রত্যাশা রাখছি।’
গত ৬ ডিসেম্বর আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানার কাসানে শহরে ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ সংরক্ষণ বিষয়ক ২০০৩ কনভেনশনের চলমান আন্তঃরাষ্ট্রীয় পরিষদের সভায় ঢাকার রিকশা ও রিকশা পেইন্টিং জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।