প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৫০ পিএম
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৫৪ পিএম
ফাইল ছবি
রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশনের এলাকায় প্রবাহিত খালসংলগ্ন খাসজমি খালের সীমানায় যুক্ত করা হচ্ছে। পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় খালে মাছ চাষ বন্ধে শিগগির অভিযান চালানো হবে। দ্রুত এ উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) গুলশানে ডিএনসিসির সদর দপ্তরে নগর ভবনের কনফারেন্স রুমে ডিএনসিসির আওতাধীন খালগুলোর সীমানা নির্ধারণ, পরিবেশ উন্নয়ন এবং সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সভায় সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এসব তথ্য জানান।
মেয়র আতিকুল বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগে সুতিভোলা খাল পরিদর্শনে গিয়ে নৌকায় চড়ে কিছুটা দূরে যেতেই দেখি খালের ভেতর বাঁশ দিয়ে বেড়া তৈরি করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এটি অবৈধ কাজ। নৌকা নিয়ে আর বেশি দূর যেতে পারিনি। এভাবে খাল দখল করে যা খুশি তা করা যাবে না। এটি বন্ধ করতে শিগগির অভিযান চালানো হবে।
মেয়র বলেন, ‘ঢাকা শহরের খালের দখল ও দূষণ রোধ করতে সব অংশীজনকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আমরা চাই কমিউনিটিকে যুক্ত করতে। খালের পার্শ্ববর্তী অনেক জলাশয় আছে, যেখানে খাসজমি রয়েছে। এই খাসজমি খালের সীমানায় অন্তর্ভুক্ত করে পাড় বাঁধাই করা হবে। খালের পাড়ে ওয়াকওয়ে থাকবে, সাইকেল লেন থাকবে এবং গাছ লাগানো হবে।’
এ সময় ডিএনসিসি মেয়র অতিকুল খালের সীমানা নির্ধারণ ও এর পরিবেশ রক্ষায় করণীয় ঠিক করতে সব সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।
সভায় জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান কামরুন নাহার আহমেদ বলেন, ‘ঢাকার প্রকৃত খাল উদ্ধার করতে হলে সিএস দাগ অনুযায়ী করতে হবে। নদী ও খালের সাথে সম্পৃক্ত যেকোনো প্রকল্প নেওয়ার আগে অবশ্যই জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন থেকে অনাপত্তিপত্র নিতে হবে। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। খাল ও নদীদূষণ রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।’
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা শহরের জন্য ন্যাচার বেজড সলিউশন খুবই দরকার। খালের প্রশস্ততা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে বর্ষায় পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। বর্ষার পানির প্রবাহ কতটুকু পর্যন্ত হয়, সেটি বিবেচনায় নিয়েই খালের সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। শহরের যানজট নিরসনে খালগুলোকে উন্নয়ন করে নৌপথ চালু করা প্রয়োজন। আরেকটি বিষয় অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবেÑ খালের মধ্যে যেন কোনো সুয়ারেজ সংযোগ না থাকে।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানিসম্পদ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক আতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা খাল যতই প্রশস্ত করি না কেন, যদি সলিড ওয়েস্ট খালে ফেলা বন্ধ না হয়; তাহলে সুফল পাওয়া যাবে না। তাই আইন প্রয়োগ করে এটি বন্ধ করতে হবে। আর অবশ্যই খালের পাড় দিয়ে ওয়াকওয়ে থাকতে হবে। ওয়াকওয়ে থাকলে খালে ময়লা ফেলার প্রবণতা অনেক কমে যাবে।’
ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঢাকা ওয়াসা থেকে একটি প্রকল্পের আওতায় কার্যক্রম করছি। মাদানি অ্যাভিনিউ এলাকার সূতিভোলা খালে নৌপথ চালুর যে পরিকল্পনা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নিয়েছে, সেটির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে ঢাকা ওয়াসা।’
ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজার সঞ্চালনায় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ আমিরুল ইসলাম, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ড. মাহে আলম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের (বিআইপি) সভাপতি ফজলে রেজা সুমন, বেলার প্রকল্প ব্যবস্থাপক মুজাফফর ফয়সাল, নোঙ্গরের সভাপতি সুমন শামস প্রমুখ।