× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

৪২ হাজার কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করছেন না ভূমিখেকো শাহ আলম

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৩৫ এএম

আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:১২ পিএম

 আহমেদ আকবর সোবহান ও সায়েম সোবহান আনভীর। সংগৃহীত ছবি

আহমেদ আকবর সোবহান ও সায়েম সোবহান আনভীর। সংগৃহীত ছবি

ভূমিদস্যু বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ওরফে শাহ আলমের বিরুদ্ধে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি আত্মসাতের পৃথক দুটি অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে দুদক রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ঢাকা জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠিয়ে শাহ আলমের অপকর্মের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে। একই সঙ্গে তার দুর্নীতি ও অপকর্মের সহযোগী স্ত্রী আফরোজা বেগম ওরফে চাতকি বেগম, ছেলে বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান করছে দুদক। 

ভূমিদানব শাহ আলমের ভয়ানক দুর্নীতি, সরকারি খাসজমি ও ভাওয়াল এস্টেটের জমি দখলসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিস্তর তথ্য পেয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এসব তথ্য যাচাইবাছাই চলছে। যাচাইবাছাই শেষ হলে মামলার সুপারিশসহ কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। 

দুদকসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এই ভূমিদানব দেশের বিভিন্ন তফশিলি ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত জামানত না রেখে বিঘাপ্রতি ২০-২৫ লাখ টাকায় কেনা জমি; কাঠাপ্রতি ৩ কোটি টাকা দাম দেখিয়ে ৪২ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ নিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব ঋণের বেশিরভাগ অর্থ পাচার করা হয়েছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, সাইপ্রাস, লন্ডন, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে। বসুন্ধরা গ্রুপের সিঙ্গাপুর অফিস দেখাশোনা করছেন শাহ আলমের বড় ছেলে সাদাত সোবহান তানভীর। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে একের পর এক প্রকল্প দেখিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিলেও সেসব ঋণ পরিশোধ করা হচ্ছে না। শাহ আলমের ভয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারাও বসুন্ধরার ঋণ জালিয়াতি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। অধিকাংশ ব্যাংকেরই শাখা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ভেতরে হওয়ায় শাহ আলম তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে দমিয়ে রাখছেন। 

বসুন্ধরা গ্রুপের পুরোনো কর্মীরা জানান, শাহ আলম একসময় ঢাকার ইসলামপুরে ভাতের হোটেল চালাতেন। বিভিন্ন দোকানে ফেরি করে কাপড় সরবরাহ করতেন। ওই সময় তার সঙ্গে পরিচয় হয় সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার আবু সুফিয়ানের সঙ্গে। কোনো ধরনের জামানত না রেখেই সুফিয়ান ’৮৮-’৮৯ সালের দিকে শাহ আলমকে ১০ লাখ টাকা ঋণ দেন। ওই ঘটনায় ব্যাংক থেকে সুফিয়ানের চাকরি চলে যায়। পরে শাহ আলম, সুফিয়ান, খাজা দুলাল ও শামসু মিলে জমি বেচাকেনার ব্যবসা শুরু করেন। প্রতিষ্ঠানের নাম দেন বসুন্ধরা হাউজিং। খুব অল্প সময়ের মধ্যে মানুষের জায়গাজমি দখল করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান শাহ আলম। ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন ভূমিদস্যু। একসময় কৌশলে সব পার্টনারের সম্পদ আত্মসাৎ করে তাদের বিতাড়িত করেন বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে। এভাবে শুধু পার্টনার নয়, হাজার হাজার মানুষের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন শাহ আলম। 

১৯৮৮-৮৯ সালের দিকে শাহ আলম জোয়ার সাহারা মৌজায় প্লট আকারে জমি বেচাকেনা শুরু করেন। ১৯৯৬-৯৭ সালের দিকে এই ভূমিখেকোর নজর পড়ে নাসির উদ্দিন নাসুর বসুমতি হাউজিংয়ের ওপর। নাসুর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দিয়ে তাকে নাস্তানাবুদ করেন। একপর্যায়ে প্রাণ বাঁচাতে নাসু বসুমতি হাউজিং ছেড়ে দেন। নাসুর বিরুদ্ধে এখনও বেশ কিছু মামলা উচ্চ আদালতে চলমান রয়েছে। 

এ ছাড়াও শাহ আলম ভয়ভীতি দেখিয়ে নামমাত্র মূল্য দিয়ে পিংক সিটি আবাসন প্রকল্প, ভাইয়া গ্রুপের হাউজিং প্রকল্প, মোহাম্মদীয়া হাউজিং, রিলায়েন্স হাউজিং, পারটেক্স হাউজিংসহ ১৫-২০টি হাউজিং কোম্পানির জায়গা দখল করে নিয়েছেন। বহু মানুষের টাকা মেরে দিয়ে তাদের পথে বসিয়েছেন। এই ভূমিদস্যু মুচি, রিকশাচালক থেকে শুরু করে রড-সিমেন্ট বিক্রেতা, বালু ব্যবসায়ী, জমির মালিক, জমির দালালসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বহু মানুষের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অনেকে টাকার জন্য ঘুরে ঘুরে শেষ পর্যন্ত আর্থিক কষ্টে ভুগে মারাও গেছেন। 

ভূমিদস্যু শাহ আলমের পরিবারের ঘনিষ্ঠরা জানান, ‘শাহ আলম হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হলেও তার পরিবারে শান্তির লেশমাত্র নেই। তার স্ত্রী আফরোজা বেগম ওরফে চাতকি বেগম বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় লেডি গুন্ডা হিসেবে পরিচিত। এমন কোনো অপকর্ম নেই, যার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। ছেলেরা পরনারীতে আসক্ত। এমনকি পুত্রবধূদের বিরুদ্ধেও পরকীয়ার অভিযোগ রয়েছে। সুঠামদেহের অধিকারী মোস্তাফিজুর রহমান ছিলেন এমডি হাউজের বাবুর্চি। ২০২০ সালের ২৮ জুন এমডি হাউজ থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই সময় মোস্তাফিজের স্বজনরা অভিযোগ করেছিলেন শাহ আলমের এক ছেলের স্ত্রীর সঙ্গে মোস্তাফিজের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। ওই ঘটনা ধামাচাপা দিতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয় তার লাশ। গরিব কর্মচারী মোস্তাফিজের পরিবারকে ভয়ভীতি দেখান আফরোজা বেগম। ফলে মোস্তাফিজের পরিবার আইনি ব্যবস্থা নিতে সাহস পায়নি। 

শাহ আলমের ছেলে সায়েম সোবহান আনভীরের সঙ্গে কলেজছাত্রী মোশারাত জাহান মুনিয়ার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। গুলশানে তাকে অভিজাত ফ্ল্যাট ভাড়া করে দেন আনভীর। ছেলের প্রেমিকা মুনিয়ার বিষয়টি একসময় জেনে যান আফরোজা বেগম। মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া অভিযোগ করেছেন, আফরোজা বেগমের নির্দেশে তার বোন মুনিয়াকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে প্রচারণা চালানো হয়। মুনিয়া যখন মারা যান তখন তিনি ছিলেন গর্ভবতী। 

মুনিয়া হত্যার ঘটনায় গুলশান থানায় দায়ের করা মামলায় তদন্ত শেষে ফাইনাল রিপোর্ট দেয় পুলিশ। পরে তানিয়া আদালতে আরও একটি মামলা করেন মুনিয়াকে হত্যার অভিযোগ এনে। ওই মামলায় ভূমিদস্যু শাহ আলম, তার স্ত্রী আফরোজা বেগম ওরফে চাতকি বেগম, আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা সোবহান, আনভীরের বান্ধবী ও হুইপপুত্র শারুনের স্ত্রী সাইফা রহমান মিম, আনভীরের আরেক বান্ধবী মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা এবং বসুন্ধরা গ্রুপের বিশ্বস্ত ক্যাডার ইব্রাহিম আহমেদ রিপনকে আসামি করা হয়। মামলাটি তদন্তের জন্য আদালত পিবিআইকে নির্দেশ দেন। পিবিআই তদন্ত শেষে ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দিয়েছেন বাদী তানিয়া। আগামী ৪ জানুয়ারি নারাজি আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত। 

ভূমিদস্যু শাহ আলমের ভয়ে এত দিন কেউ তার ও তার পরিবারের সদস্যদের অপকর্ম নিয়ে মুখ খোলার সাহস পায়নি। প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকায় ভূমিদস্যু ও প্রতারক শাহ আলমের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক তথ্যবহুল প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় এখন মুখ খুলতে শুরু করেছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা। ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে কুখ্যাত ভূমিদস্যু ও মাফিয়া সম্রাটের ধামাচাপা দেওয়া নানা অপরাধের অজানা কাহিনী। 

এখন পর্যন্ত ভূমিদস্যু শাহ আলমের কুকীর্তির ৩টি কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও ১৮টি কাহিনী সিরিজ আকারে তুলে ধরা হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা