জাস্টিস ফর মুনিয়া
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:১৬ এএম
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:৩৪ পিএম
ছবিটি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের ‘জাস্টিস ফর মুনিয়া’র পেজ থেকে নেওয়া। এই ঝটিকা প্রতিবাদটি ঢাকাতেই হয়েছে। অ্যাক্টিভিস্টদের পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজুসের মন-মননকে শৈল্পিকভাবে তুলে ধরেছেন আন্দোলনকারীরা। ছবি : সংগৃহীত
শত ভরি স্বর্ণালংকারে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীরকে মোড়ালেও তার কলঙ্ক মুছে যাবে না বলে দাবি করেছেন ‘জাস্টিস ফর মুনিয়া’ নামে আন্দোলনরতরা। তারা বলছেন, দেশ ও বাজুসের মুখ উজ্জ্বল করতে হলে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়া ধর্ষণ ও হত্যার মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি।
গতকাল রবিবার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীর একটি সড়কে ঝটিকা প্রতিবাদ কর্মসূচিতে তারা এ কথা বলেন। এ সময় তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কলামিস্ট, লেখক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ। কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী অন্যরা তাদের নাম-পরিচয় গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে চান না। কর্মসূচি পালনের ছবি প্রকাশ হয়েছে ‘জাস্টিস ফর মুনিয়া’ ফেসবুক পেজে।
সেখানে বলা হয়েছে- ‘বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি-বাজুসের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা মনে করেন জুয়েলারি পণ্য রপ্তানি হলে বিদেশে দেশের মুখ উজ্জ্বল হবে। কিন্তু বর্তমানের ডিজিটাল জগতে সবাই সব খবর রাখে। তারা জানে যে বাজুসের দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর তার প্রেমিকা কলেজশিক্ষার্থী মোসারাত জাহান মুনিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি। তারা জানে যে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার জোরে পুলিশ ও পিবিআই স্ব স্ব তদন্ত প্রতিবেদনে গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই আনভীরকে অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি প্রদান করে। শত ভরি স্বর্ণালংকারে আনভীরকে মোড়ালেও তার কলঙ্ক মুছে যাবে না। দেশ আর বাজুসের মুখ উজ্জ্বল করতে হলে সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার জরুরি।’
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এবং বিশিষ্ট আলোকচিত্রী ড. শহীদুল আলম খবরটি গতকাল নিজেদের ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, নৈতিক অবস্থান থেকে তারা মুনিয়া হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
মুনিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবিতে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর বসুন্ধরা শপিং মলের সিঁড়িতে জাস্টিস ফর মুনিয়ার প্রথম ঝটিকা প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, জাতীয় সংসদের বাইরে, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, বায়তুল মোকাররম মসজিদের বাইরেসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
২০২১ সালের ২৬ এপ্রিল রাতে গুলশান ২ নম্বরের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর প্লটের বি/৩ ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই রাতেই বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনভীরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন ওই তরুণীর বোন নুসরাত জাহান তানিয়া। এজাহারে বলা হয়, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সায়েম সোবহান আনভীর দীর্ঘদিন শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন মুনিয়ার সঙ্গে। ওই বাসায় তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। বিয়ে না করে তিনি উল্টো মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন মুনিয়াকে। নুসরাত দাবি করেন, তার বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন আনভীর।
মুনিয়া ঢাকার মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মো. সফিকুর রহমান। তাদের বাড়ি কুমিল্লার উজির দীঘিরপাড়। মৃত্যুর মাস দুয়েক আগে গত ১ মার্চ থেকে ১ লাখ টাকায় ভাড়া নেওয়া গুলশানের ওই ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন মুনিয়া। ওই বাসাভাড়ার টাকাও আনভীর দিতেন। গুলশানের বাসা থেকে মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধারের পর সেখান থেকে তার মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন ধরনের আলামত উদ্ধার করে পুলিশ, যার মধ্যে ৬টি ডায়েরিও ছিল। সিসিটিভির ভিডিও পরীক্ষা করে মুনিয়ার ফ্ল্যাটে আনভীরের যাতায়াতের প্রমাণ পাওয়ার কথা সে সময় পুলিশ জানিয়েছিল।
ওই বছরের ১৯ জুলাই সেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার তৎকালীন ওসি আবুল হাসান ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন, তাতে তিনি আনভীরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন। এরপর ওই বছরের ১৮ আগস্ট ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী থানা-পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে আনভীরকে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন। মুনিয়ার বোন নুসরাত একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮-এ মুনিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ এনে আরেকটি মামলা করেন। এই মামলায় আনভীরের সঙ্গে তার বাবা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, আনভীরের মা আফরোজা সোবহান, স্ত্রী সাবরিনা সায়েম, মডেল সাইফা রহমান মিম, ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও ইব্রাহিম আহমেদ রিপনকে আসামি করা হয়। এই মামলার তদন্ত করে গত বছরের ১৮ অক্টোবর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক গোলাম মুক্তার আশরাফ উদ্দিন। তাতে বলা হয়, আনভীরসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তদন্ত কর্মকর্তা আনভীরসহ অন্যদের মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেন আদালতের কাছে। পরবর্তীকালে অব্যাহতির সুপারিশের বিরুদ্ধে বাদী নারাজি আবেদন করেন।