চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রতিবেদন
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:৩১ পিএম
নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সরকারের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে ট্যারিফ (বিদ্যুতের দাম) আদায় করছে। তারা অযৌক্তিক ট্যারিফের মাধ্যমে অনৈতিক ফায়দা লুটে এ সম্ভাবনাময় খাতটিও নষ্ট করছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর মহাখালীর নিজস্ব কার্যালয়ে ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অর্থায়ন অনুসরণ’ শীর্ষক দ্বি-বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় খাতটি নিয়ে এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যব্যস্থপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. জাকির হোসেন খান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার সাদমান সাকিব খলিলি ও কমিউনিকেশন কর্মকর্তা মাইশা চৌধুরী প্রমুখ।
তিনি বলেন, ‘নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের বেসরকারিখাতগুলো প্রতি কিলোওয়াটের দাম নিচ্ছে ১৩ সেন্ট। অথচ সরকারি প্রকল্পগুলো থেকে প্রতি কিলোওয়াটে ব্যয় হচ্ছে ১০ সেন্ট। অপরদিকে জয়েন ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠানগুলো নিচ্ছে ১২ সেন্ট।’
বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ব্যাপারে আশঙ্কা করে মো. জাকির হোসেন খান বলেন, রিনিউবল এনার্জি পলিসি প্লান (আরইপি-২০০৮) অনুযায়ী ২০২০ সালে বাংলাদেশ ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। সেখানে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এখনও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ পিছিয়ে আছে। আবার অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্লান (এমসিপিপি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ জ্বালানি এখাত থেকে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। অপরদিকে ইন্ট্রিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্লান (আইইপিএমপি-২০২৩) অনুযায়ী ২০৫০ সালে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ লক্ষামাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এসব পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় নেই। যে কাজে পরিকল্পনাগত সমন্বয় নেই সেটি কীভাবে অর্জিত হবে? একেকটি পরিকল্পনায় একেক ধরনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যা বেশি না হয়ে বরং কমেছে। নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার বৃদ্ধিতে বিভিন্ন দেশ এগিয়ে আসছে। এই বিনিয়োগের সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। সেজন্য সরকারকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১১তম বলে উল্লেখ করে মো. জাকির হোসেন খান বলেন, সৌর বিদ্যুতের উৎপাদনের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম অঞ্চল সবচেয়ে উপযোগী। সেখানে ৪৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ (২০২০.৩০ মেগাওয়াট) প্রকল্প অবস্থিত। রংপুর বিভাগে ১৮ শতাংশ প্রকল্প (৬১১.৩ মেগাওয়াট) ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১৩ শতাংশ প্রকল্প (৫৫১.৭ মেগাওয়াট) ধরা হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বেশি খাস জমি ও বেশি সৌর বিকিরণ এলাকা চট্টগ্রামে। দেশে সৌর বিদ্যুতের বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা আছে ৪৬১ মেগাওয়াট। আরও ৪ হাজার ১১৫ মেগাওয়াটের বিভিন্ন প্রকল্প বিকাশ পর্যায়ে আছে।
বিদ্যুতের ট্যারিফ নির্ধারণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে সৌর বিদ্যুতের ট্যারিফ এখনও অনেক বেশি। বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ও ট্যারিফের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে পাশ কাটিয়ে বিদ্যুৎক্রয় চুক্তি হচ্ছে। এসব অনিয়ম ও প্রতিবন্ধকতা পাশ কাটাতে হবে। নতুবা আগামীতে সৌর বিদ্যুতের যে লক্ষ্যমাত্রা তা পূরণ হবে না।
মো. জাকির হোসেন খান বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি করতে হলে বিদ্যুতের বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম কমাতে হবে। কেননা বিদ্যুতের দাম বেশি হলে সব পণ্য উৎপাদনেই দাম বাড়বে।
তিনি বলেন, আমরা অনেক কিছুই করি কিন্তু সময়মতো করি না। এ জন্য শুরু থেকেই যথাযথ উদ্যোগ নিয়ে এগোতে হবে। বিশেষ করে জলবায়ু দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের টেকসই অগ্রগতি নির্ভর করছে প্রকৃতিনির্ভর, সাশ্রয়ী এবং সার্বভৌম নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক অর্থনীতি গড়ার মাধ্যমে। কোনো অবস্থাতেই দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহল যেন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের এখতিয়ার খর্ব করে অযৌক্তি ট্যারিফের মাধ্যমে অনৈতিক ফায়দা লুটতে না পারে। এখাতের সম্ভাবনাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে না দেয় সেদিকে সচেতন থাকতে হবে।