সংঘাতের দামামায় বিশ্বশান্তি বিলুপ্ত, বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয় : ফওজিয়া মোসলেম

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেছেন, সারা বিশ্বজুড়ে চলমান যুদ্ধ ও সংঘাতের দামামায় বিশ্বশান্তি আজ বিলুপ্ত। বাংলাদেশের পরিস্থিতিও এর ব্যতিক্রম নয়। সংখ্যালঘু, আদিবাসী, দলিত নারীসহ সকল শ্রেণির মানুষ আজ সহিংসতার শিকার। উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়ন করলে হবে না।

সোমবার (১১ ডিসেম্বর) বিকালে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে মহিলা পরিষদ আয়োজিত মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি।

ফওজিয়া মোসলেম বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন না করে সাধারণ মানুষের কল্যাণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুশাসন নিশ্চিতে বিনিয়োগ করতে হবে। মানবাধিকার কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি বন্ধে সোচ্চার হতে হবে। ৭২ এর সংবিধানকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তুলতে হলে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে উন্নতিসহ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষে রাষ্ট্রকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম, আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন, শান্তি-প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ ও ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনুস।

মালেকা বানু বলেন, সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার আলোকে জন্মগত অধিকারসূত্রে সকল মানুষের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও বিশ্বজুড়ে বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি ভিন্ন। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আইন থাকলেও তা যে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে এমনটি বলা যাবে না। গাজার চলমান পরিস্থিতিতে আজ জাতিসংঘেরও উদ্বেগ রয়েছে। 

তিনি বলেন, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হলে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চলমান সকল ধরণের সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র ঘরে চলমান সহিংসতা প্রতিরোধ করে জনজীবনে নিরাপত্তা নিশ্চিতের উপর জোর দাবি জানাই।

বক্তারা বলেন, বিশ্বজুড়ে চলমান যুদ্ধ ও সংঘাতমূলক পরিস্থিতির কারণে মানবাধিকার লংঘনের ইতিহাস ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় নতুন ধরণের সহিংসতার বৃদ্ধি নারীসহ সকলের জীবনের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করছে। নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হলেও পারিবারিক ক্ষেত্রে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানসহ সকল পর্যায়ে নারীর প্রতি অধঃস্তন ও বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি পরিলক্ষিত হচ্ছে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কারণে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের মত পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে যুদ্ধ নয় শান্তি চাই নীতির আলোকে নারী-পুরুষের জন্য সমতাপূর্ণ, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষে রাজনৈতিক সহিংসতাসহ সকল প্রকার সহিংসতা বন্ধ, নারীর বুদ্ধিমত্তা ও তাদের দেশপ্রেমকে মূল্যায়ন করা, কালোটাকা ও  ক্ষমতার অপব্যবহার, মাদকের ব্যবহাররোধ এবং সকলের জন্য সমান আইন প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়নের ওপর রাষ্ট্রকে গুরুত্ব দিতে হবে। 

দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি সিরিষা বলেন, দলিত জনগোষ্ঠীর মানুষের জমির উপর কোনো অধিকার নেই। তারা মানুষ হিসেবে সকল ধরণের নাগরিক সুবিধা হতে বঞ্চিত। সকল ধরণের বৈষম্য দূর করে সমতাপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেন তিনি।