প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:২১ পিএম
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:০১ পিএম
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। ফাইল ছবি
ভরাডুবি নিশ্চিত জেনে বিএনপি নির্বাচন প্রতিহত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, বিএনপি যেভাবে নিষিদ্ধ সংগঠনের মতো গুপ্তস্থান থেকে অনলাইনে গাড়ি-ঘোড়া পোড়ানোর নির্দেশ দিচ্ছে, মানুষের ওপর হামলা পরিচালনা করছে, এরপর তো মানুষের কাছে যাওয়ার কোনো সুযোগ তাদের নাই।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক আয়োজন ‘রূপসী বাংলা’ আলোকচিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন শেষে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইন্দ্রজিৎ কুমার ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক কাজী বোরহান উদ্দিন প্রমুখ।
মন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালেও নির্বাচন প্রতিহত করার অনেক চেষ্টা হয়েছিল। নির্বাচন প্রতিহত করে বিএনপি গণতন্ত্রের যাত্রাকে প্রতিহত করতে চেয়েছিল, তারা পারেনি। ২০১৮ সালেও সেই অপচেষ্টা ছিল, সেটিও পারেনি। এখন বিএনপির শক্তি, সামর্থ্য, ক্ষমতা ২০১৪ এবং ২০১৮ তুলনায় অনেক কম। মাঝেমধ্যে চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে যেভাবে বাস, গাড়ি পোড়াচ্ছে এবং মানুষের ওপর হামলা চালাচ্ছে, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারছে-এগুলো কোনো রাজনৈতিক দলের কাজ নয়। এগুলো জঘন্য সন্ত্রাসীদের কাজ। বিএনপি এখন রাজনৈতিক দলের চরিত্র হারিয়ে ফেলেছে, সন্ত্রাসী সংগঠনে রূপান্তরিত হয়েছে।’
অপরাধ করতে থাকায় বিএনপি নেতাদের প্রকাশ্যে আর মুখ দেখানোর সাহস নেই বলে মন্ত্রী করে হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতাদের সবার বিরুদ্ধে তো মামলা নাই, সবার বিরুদ্ধে তো ওয়ারেন্ট নাই, কিন্তু কাউকে দেখা যাচ্ছে না। কারণ তারা ২৮ অক্টোবর যে অপরাধ করেছে এবং এর পরবর্তী প্রতিটি দিন যে অপরাধ সংঘঠিত করে যাচ্ছে এ জন্য জনগণের কাছে চেহারা দেখানোর সাহসটা তাদের নাই, প্রকাশ্যে আসার সেই সাহসটা নাই।’
বিএনপির জনপ্রিয়তা তলানিতে উল্লেখ করে এর পেছনে দুটি কারণ দেখেন আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা। তিনি বলেন, ‘কারণ দুটির একটি হচ্ছে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী যেভাবে মানুষকে হত্যা করেছে, সেটির প্রতিবাদ সারা পৃথিবী জুড়ে হয়েছে, এমন কি অনেক ইহুদিও সেটির প্রতিবাদ করেছে, শুধু বিএনপি এবং জামায়াত সেটির প্রতিবাদ করেনি। এ দেশের সমস্ত মুসলমানকে তারা আহত করেছে, সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরায়েলের দোসরে পরিণত হয়েছে। আর অপরটি হলো, ইসরায়েলি বাহিনীর অনুকরণে তারা নিরীহ মানুষ, সাংবাদিক, পুলিশ, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, গাড়ির ওপর হামলা পরিচালনা করছে, অগ্নিসন্ত্রাস করছে।’
বিএনপি দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ না নিলেও তাদের অনেক নেতা অংশ নেবেন জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির দুই নেতা ঘোষণা দিয়েছেন যে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন, তাদের সঙ্গে আরও শতাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। সুতরাং এগুলো করে বিএনপির কোনো লাভ হবে না।’
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে। নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং জনগণের রায় নিয়ে নতুন সরকার গঠিত হবে। জনগণ ব্যাপকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। একটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও বহু দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, বিএনপির নেতারাও অংশগ্রহণ করবে।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর চিঠি প্রসঙ্গেও কথা বলেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র। তাদের সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে। আমরা বৈশ্বিক অঙ্গনেও সন্ত্রাস দমনের পক্ষে একযোগে কাজ করছি। তাদের পরামর্শকে আমরা অবশ্যই মূল্য দেই। আমাদের কাছে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর পরামর্শের অবশ্যই মূল্য আছে। পাশাপাশি দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য, দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত আমাদেরই নিতে হয়, আমরা নেই।’
সংলাপ প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি তো সংলাপ নাকচ করে দিয়েছে। বিএনপি বলেছে এখন সংলাপের কোনো পরিবেশ নাই। আমরা অবশ্য সংলাপের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু কোনো সন্ত্রাসীর সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাপিটল হিলে হামলা হওয়ার পর সেই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন বা সরকার আলোচনায় বসেছে? তাদেরকে বরং গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বিচার হচ্ছে। আমাদের দেশেও যারা গাড়ি পোড়াচ্ছে তাদের সঙ্গে কি আলোচনা হতে পারে, আলোচনা হতে পারে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে, সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে নয়।’
আলোকচিত্র প্রদর্শনী আয়োজনের জন্য মন্ত্রী ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং শিল্পকলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, একটা সংবাদ যখন কোনো পত্রিকায় ছাপা হয়, এর সঙ্গে যখন ছবি যায় মানুষ সেটা অনেক বেশি পড়ে এবং ছবিই কথা বলে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ছবিগুলো যদি না থাকত, আমরা মুক্তিযুদ্ধকে আজকে যেভাবে জানতে পারছি, নতুন প্রজন্ম যেভাবে জানতে পারছে সেটি কি পারতো!
ফটোজার্নালিস্টরা অনেক সময় সমাজের অনুন্মোচিত বিষয়গুলো সামনে আনে এ জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান মন্ত্রী।