ঘরে বড় বোনের গলাকাটা লাশ
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ২১:২৪ পিএম
প্রতীকী ছবি।
রাজধানীর হাজারীবাগের কালুনগর এলাকার একটি ফ্ল্যাটে দুই বোনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের দাবি, বড় বোনকে গলা কেটে হত্যা করে ছোট বোন আত্মহত্যা করেছেন। দুই বোন মানসিক রোগী ছিলেন। বড় বোনের নাম জেসমিন আক্তার। ছোট বোনের নাম নাসরিন আক্তার।
গত রবিবার রাত ১১ টার দিকে বাড়ির তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটের কক্ষে বড় বোনের গলাকাটা লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। ওই সময় হাত-পায়ের রগকাটা অবস্থায় ছটফট করছিলেন ছোট বোন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
একই রাতে রাজধানীর দক্ষিণখানে আদম আলী মার্কেটের এক মাংসের দোকানের কর্মচারী খায়রুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সকালে বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। কে বা কারা কী কারণে খায়রুলকে হত্যা করেছে তা নিশ্চিত নয় নিহতের পরিবার ও পুলিশ। তবে হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত বলে মনে করছে পুলিশ।
হাজারীবাগ থানার ওসি আহাদ আলী বলেন, দুই বোন হত্যার বিষয়টি রহস্যজনক। পরিবার পুলিশের কাছে দাবি করেছে যে তারা মানসিক রোগী। তাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন আমাদের কাছে দিয়েছে। সেগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পর বলা যাবে যে এটা হত্যা নাকি মানসিক রোগ সংক্রান্ত আত্মহত্যা। কালুনগর এলাকার একটি বাসার তৃতীয় তলায় ভাড়া বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তারা।
নিহত দুই বোনের ভাই নাজির হোসেন জানান, ‘ওই বাসায় আমার বৃদ্ধা মা, তিনি ও তার দুই বোন থাকতেন। তাদের বাবা মৃত জামাল হক। বড় বোন জেসমিন ৮ বছর ও ছোট বোন নাসরিন ৩ বছর ধরে মানসিক রোগে ভুগছিলেন। তারা দুজনেই অবিবাহিত ছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, রাত ১১ টার দিকে আমরা রুমে দেখতে পাই বড় বোন গলা কাটা অবস্থায় পড়ে ছিলেন। আর ছোট বোন হাত-পায়ের রগকাটা অবস্থায় ছটফট করছিলেন। তখন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে আসলে চিকিৎসক পরিক্ষা নিরিক্ষার পর রাত সাড়ে ১২ টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরও জানান, তার দুই বোন দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চিকিৎসকের প্রেসক্রিশন অনুযায়ি ওষুধ সেবন করছিলেন। কিন্তু ভাল হচ্ছিলেন না।
হাজারীবাগ থানার এসআই শাওন কুমার বলেন, আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে রক্তাক্ত অবস্থায় জেসমিন আক্তার ও নাসরিন আক্তারকে পড়ে থাকতে দেখি। নাসরিন আক্তার তখনো জীবিত ছিলেন মনে হওয়ায় স্বজনদের সহযোগিতায় ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
দক্ষিণখানে নিহত খায়রুল ইসলামের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিহত খায়রুলের বাড়ি বাড্ডার বেরাইদ এলাকায়। তার বাবার নাম আলতাফ হোসেন। স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে বেরাইদ এলাকায় থাকতেন খায়রুল। তিনি যে দোকানে চাকরি করতেন, সেটি তার মামার দোকান।
খাইরুলের মামা সাজ্জাদ জানান, খায়রুল তার আপন ভাগিনা। বেশ কয়েক বছর ধরে তার দোকানে চাকরি করে আসছিলেন তিনি। ব্যবসায়ীক কারণে প্রায় রাতে খায়রুলকে দোকানে থাকতে হতো। রবিবার রাতেও খায়রুলকে দোকানে রেখে তিনি বাসায় চলে যান। ভোরের দিকে খায়রুল খুন হওয়ার সংবাদ পান। এ সময় দোকানে এসে দেখেন, খায়রুলের চোখ এবং নাক বরাবর একটি কোপের চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়া তার পিঠে কোপের আঘাত রয়েছে। দোকানে টাকা-পয়সা, গরু থাকলেও কোনো কিছু খোয়া যায়নি।
দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সালাউদ্দিন জানান, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারণ কসাইয়ের দোকানের গরু, টাকা-পয়সা থাকলেও কোনো কিছু নেওয়া হয়নি। খায়রুলের সঙ্গে কারো পূর্ব শত্রুতা থাকতে পারে। ওই এলাকার আশপাশে অনেক সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।