প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ২২:২৬ পিএম
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৩ ১১:৩১ এএম
শিল্পীরা বিভিন্ন স্লোগানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দিতে উদার আহ্বান জানান। প্রবা ফটো
কালো কাপড়ে চোখ-মুখ বাঁধা, আবার কারও মুখে তালা ঝোলানো; ক্ষুধার্ত অনাহারে ভুগছে, ডিজিটাল সিকিউরিটির মামলার ভয়ে কেউ পালিয়ে যাচ্ছেনÑ এভাবেই নিপীড়িত মানুষের অসহায় দিনযাপনের গল্প তুলে ধরেছেন নাট্যকর্মীরা। কবিরা তাদের সরফ ভাষায় বলেছেন সমাজের অসঙ্গতির কথা। গায়ক তার গানে তুলে ধরেছেন নৃগোষ্ঠী জনজাতির কথা। কার্টুনিস্ট তার গদ্য কার্টুনে এঁকেছেন সামাজিক ও রাজনৈতিক অসঙ্গতি৷ এভাবে সবাইকে অন্যায়ের প্রতিবাদে মুখ খোলার আহ্বান জানিয়েছেন গায়ক, লেখক, নাট্যকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, সমালোচনা করলেই মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) বিকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দাবিতে সাংস্কৃতিক সমাবেশে’ গানে, আবৃত্তিতে, নাটকে এসব কথা তুলে ধরেন শিল্পীরা। এ সময় সাংস্কৃতিক সমাবেশে ‘ভোটাধিকার, আমার মতপ্রকাশেরই অধিকার’, ‘কোনো অজুহাতেই আমার কলম আমার কণ্ঠকে স্তব্ধ করা যাবে না’ লেখা বিভিন্ন স্লোগানে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রারম্ভিক বক্তব্য দেন কবি সাখাওয়াত টিপু। তিনি অভিযোগ করেন, ‘বিনা ভোটে নির্বাচিত সরকারের আচরণ নানাভাবে প্রতিফলিত হয়েছে৷ ভোটের বাক্স ভর্তি করে ফেলে তারা মানুষের অধিকার ভূলুণ্ঠিত করছে নানা কায়দায়। এখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নাই৷ কোনো কথা বললে সরকার টুঁটি চেপে ধরে, জেলে পুরে দেয়৷ লেখক, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জনগণের মৌলিক অধিকারের বিষয়গুলো রক্ষা করতে গেলে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আদায় করতে গেলে সর্বোচ্চ সৃজনশীল উপায় বের করতে হবে। তবে দেশে অগণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখলে দেশকে ইরাক ও লিবিয়ার মতো পরিস্থিতি ভোগ করতে হবে।’
প্রতিবাদী সমাবেশে গান গেয়েছেন ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান৷ এ সময় তার গানে মেতে উঠে তরুণরাও। অ্যাকুইস্টিক গিটারে স্ট্রিংয়ে সায়ান ‘রাণী মা’ শিরোনামের গানটির সুর তোলেন। আরও গেয়েছেন জয় বাংলা, ভয় বাংলা গান।
তিনি বলেন, এটা তো আমার দেশ। আমার কী ভয় পাওয়া ঠিক। একজন সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে এখানে উপস্থিত হওয়া এ জন্য নয় যে, গান বাজনা করে মজা করব। একটা স্বাধীন দেশে ভয় পাওয়ার কথা নয়। যে পক্ষেরই পাল্লা ভারী, থাকুক প্রতিবাদ করতে হবে। যা কিছু অন্যায় মনে হয়, তা তুলে ধরতে হবে।
এক দল কার্টুনিস্টের ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনী হয়। ভোটাধিকার ও মানবাধিকার পরিস্থিতির হালহকিকত নিজেদের আঁকা কার্টুনে ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী মাহতাব রশীদ, মেহেদী হক, মোর্শেদ মিশু, নিয়াজ চৌধুরী তুলি, বিপ্লব চক্রবর্তী, রাজীব কান্তি ধর, আরাফাত করিম, রাকিব হাসান অপু। মঞ্চে নিজেদের লেখা প্রতিবাদী কবিতা পাঠ করেন ফেরদৌস আরা রুমি, কায়েস মাহমুদ, হাসান জামিল, সৈকত আমিনসহ কয়েকজন।
পথনাটক ‘একটি দুঃসাহসী ফুল দেখা যায়’ পরিবেশন করে থিয়েটার ৫২, তীরন্দাজ পরিবেশন করে পথনাটক ‘ডেভেলপমেন্ট টিভি’ এবং এই বাংলায় দলটি পরিবেশন করে পথনাটক ‘একটি ঘোড়ার ডিম ও তাদের স্বদেশ ভাবনা’। নারায়ণগঞ্জের শিশুদের সংগঠন শ্রুতির শিশুশিল্পীরা মুকাভিনয়ে ফুটিয়ে তোলে এক ক্ষুধার্ত মানুষের নাগরিক অধিকারের গল্প।
প্রতিবাদী এ আয়োজনে লেখক, শিল্পী, সাংবাদিকদের ব্যানারে আয়োজিত হলেও জোনায়েদ সাকি নেতৃত্বাধীন গণসংহতি আন্দোলনের সদস্যদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে৷ আয়োজনের শুরুতে দলটির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনিরুজ্জামান পাপ্পুর নেতৃত্বে গণসংহতি আন্দোলনের নেতাকর্মীরা মিছিল সহযোগে অনুষ্ঠানে যোগ দেন৷
প্রতিবাদী সমাবেশের উদ্যোক্তা এহসান মাহমুদ বলেন, মানুষের মতপ্রকাশের অধিকার কেড়ে নিয়ে প্রকারান্তরে সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। মৌলিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ন হতে থাকলে বাংলাদেশকে ইরাক ও সিরিয়ার মতো পরিণতি ভোগ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সাকি ভাই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন না৷ সচেতন নাগরিক হিসেবে তিনি সংহতি জানাতে এসেছেন।