নায়ক হতে চাওয়া রেজওয়ান এখন গ্রিলকাটা চোর

আমার স্বপ্ন ছিল অভিনেতা হব। নায়ক হব। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে একটি নাট্য কর্মশালায় প্রশিক্ষণ নিয়েছি। একটি শর্টফিল্মে অভিনয়ও করেছি। সেই অভিনয়ের সূত্রে কয়েকজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। সেই বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ফেনসিডিলের নেশায় আসক্ত হই। পরে নেশার টাকা জোগাড় করতে ফরহাদ নামের এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে গুলশান-বনানী এলাকায় চুরি শুরু করি। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন চুরির অভিযোগে ধরা পড়া এক পেশাদার চোর। তার নাম রেজওয়ান আহমেদ। নায়ক হওয়ার স্বপ্নবাজ সেই যুবক এখন পেশাদার গ্রিলকাটা চোর। 

পুলিশ জানায়, গত ঈদুল আজহার দুই দিন আগে ৬ জুন ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি ছয় তলা বাসার দ্বিতীয় তলা থেকে ৬ ভরি সোনা, দুই লাখ টাকাসহ বিভিন্ন দামি জিনিস চুরি হয়। লোকজন ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যাওয়ায় বাসাটি ‘টার্গেট’ করেছিল সংঘবদ্ধ চোরের দল। ওই চুরির ঘটনায় করা মামলার তদন্তে নেমে সম্প্রতি মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে রেজওয়ান আহমেদকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। 

সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, গত ১৫ বছরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পাঁচ শতাধিক বাসায় গ্রিল কেটে চুরি করেছেন রেজওয়ান। তার বিরুদ্ধে ঢাকার বিভিন্ন থানায় অন্তত পাঁচটি মামলা রয়েছে। আগেও একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, কলাবাগান, নিউমার্কেট, গুলশান ও বনানী এলাকায় বাসাবাড়িতে চুরি করেন রেজওয়ান। নেশার টাকা জোগাতে প্রতি মাসে চার থেকে পাঁচটি বাসায় চুরি করেন তিনি।

রেজওয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিবি জানায়, সন্ধ্যার দিকে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ‘টার্গেট’ ঠিক করেন রেজওয়ান। যে বাসায় আলো জ্বলছে না বা বারান্দায় কাপড়-চোপড় ঝুলছে না, তিনি ধরে নেন, ওই বাসায় কেউ নেই। পরে গভীর রাতে বা ভোরে বাসার পেছনের দিক দিয়ে ওই বাসায় ওঠেন। তার সঙ্গে থাকে গ্রিল কাটার যন্ত্র। ‘স্পাইডারম্যানের’ মতো দেয়াল বেয়ে ওপরে উঠে প্রথমে বারান্দা ও জানালার গ্রিল কাটেন। পরে ভেতরে ঢুকে সোনা, টাকা-পয়সাসহ দামি জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যান।

ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, হাজারীবাগ এলাকার একটি বস্তিতে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন রেজওয়ান। সেখানে একটি চামড়ার কারখানায় কাজ করতেন তার বাবা। স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর কিছু দিন বড় ভাইয়ের ব্যবসায় সহযোগিতা করেন। এইচএসসি পাস করার পর বন্ধুদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আড্ডা দেওয়া শুরু করেন।

রেজওয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিবি জানায়, শুরুতে তিনি একটি ভ্যান নিয়ে ফরহাদের সঙ্গে থাকতেন। ফরহাদ বিভিন্ন বাসাবাড়িতে চুরি করতেন। সেখান থেকে ভাগ পেতেন রেজওয়ান। পরে ফরহাদের কাছ থেকে চুরির কৌশল শিখে নিজেই চুরি শুরু করেন। 

ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ‘নেশায় পড়ে অনেক সৃজনশীল ব্যক্তিও নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। চুরি-ছিনতাই করে নেশার টাকা জোগাড় করেন। এটা খুবই দুঃখজনক। রেজওয়ানও তাদের একজন।’