× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কৃষি মার্কেটে আগুন

জলাশয় ধ্বংসের ভয়ংকর ফল

ফয়সাল খান ও সাজ্জাদুল ইসলাম

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:৪৭ পিএম

আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:৪৭ পিএম

মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে আগুন। ফাইল ফটো

মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে আগুন। ফাইল ফটো

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও রাজধানীর তাজমহল রোডের পাশে একটি বড় পুকুর দেখেছে স্থানীয় অধিবাসীরা। দেখেছে এর কাছেই মিনার মসজিদ এলাকায় শতবর্ষী একটি পুকুর, যেটি ভরাট করে গড়ে তোলা হয় পার্ক। ১৯৭৮ সালে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মালিকানায় মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট গড়ে ওঠে, যার আয়তন ছিল পাঁচ একর। মার্কেট গড়ে তোলার সময় তাজমহল রোডের বড় পুকুরটিও ভরাট করা হয়। ওই সময় মার্কেটের পশ্চিম দিকে ছিল নৌঘাট। কিন্তু দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে নদী ভরাট করে গড়ে ওঠে বসতবাড়ি। ফলে কৃষি মার্কেট হারায় নৌ-যোগাযোগের পথ। আর গত বুধবার দিবাগত গভীর রাতে এ বাজারে আগুন লাগলে পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় তা নেভাতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘণ্টা!

রাজধানীর যেকোনো অগ্নিকাণ্ড নেভাতে ও নিয়ন্ত্রণে আনতে আশপাশে পানি না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনা নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যদেরও এখন বেগ পেতে হচ্ছে। বঙ্গবাজারে আগুন লাগার পর তা নেভাতে হেলিকপ্টারে করে পানি নিয়ে আসতে হয়েছে। অথচ এই মার্কেটের পাশে উসমানী উদ্যানেই ছিল একটি বিরাট পুকুর। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তা শুকিয়ে ফেলা হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো এলাকায় জলাশয় থাকলে শুধু আগুন নেভানো নয়, জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজও সহজ হয়। জলাশয়ের অভাবে ভূমিকম্পের মতো বিপর্যয়ও আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগুন নেভানোর ক্ষেত্রে জলাশয়গুলো কতটা কার্যকর ছিল, সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডগুলো তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।

বড় অগ্নিকাণ্ড নেভাতে লাগছে গড়ে ৪.৬ ঘণ্টা

মোহাম্মদপুরের অগ্নিকাণ্ডের আগে রাজধানীতে গত ৪ বছরের ১০টি বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এগুলো নেভাতে গড়ে সময় লেগেছে ৪ দশমিক ৬ ঘণ্টা। এ সময় এসব স্থানে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সর্বোচ্চ ৪৮টি থেকে সর্বনিম্ন ৭টি ইউনিট কাজ করেছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ২১টি অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে ১৪টি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের সময় লেগেছে গড়ে প্রায় ১ ঘণ্টা। এসব স্থানে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের সর্বোচ্চ ১৬টি থেকে সর্বনিম্ন ২টি ইউনিট কাজ করেছে।

চলতি বছরের জুনে প্রকাশিত বিআইপির এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত ২৮ বছরে ঢাকা থেকে ৮৫ ভাগ জলাশয় হারিয়ে গেছে। একটি আদর্শ শহরের মানদণ্ডে অন্তত ১০ থেকে ১২ ভাগ জলাশয় প্রয়োজন। যেখানে ঢাকায় আছে মাত্র ২ দশমিক ৯১ ভাগ। গত বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে আগুন লাগে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। এ মার্কেটের আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিটের সঙ্গে যোগ দেয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর বিশেষ দল। আশপাশে জলাশয় না থাকায় পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায়নি। যে কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় লাগে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

এর আগে গত ৪ এপ্রিল সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর বঙ্গবাজারের আগুন ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে আগুন সম্পূর্ণরূপে নেভাতে সময় লাগে প্রায় ৭৫ ঘণ্টা। আগুনে ৩ হাজার ৮৪৫টি দোকান পুড়ে যায়। এতে ৩০৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশনের তদন্ত কমিটি। এতে ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট ছাড়াও সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা কাজ করেন।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত 

বিশেষজ্ঞদের দাবি, জলাশয় ধ্বংসের পরিণাম ভোগ শুরু হয়েছে। এখনই জলাশয় রক্ষা করা না গেলে ভবিষ্যতে আরও চরম মূল্য দিতে হবে। 

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আগুন নেভানোর জন্য পানি পাচ্ছি না, এটা বড় সমস্যা। জলাশয়গুলো ধ্বংসের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ যেকোনো দুর্যোগে জলাশয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভূমিকম্প-পরবর্তী সময়ে বিদ্যুৎ থাকে না। ফলে সংশ্লিষ্ট সংস্থা পানি সরবরাহ করতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতেও জলাশয়ের বিকল্প নেই। কিন্তু আমরা এই প্রাকৃতিক উৎস ধ্বংস করে ফেলছি।’ 

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পুকুর ভরাট করে মার্কেট বা আবাসিক ভবন তৈরি হচ্ছে। ২০১৮ সালের পরিসংখ্যানে ঢাকা শহরে পুকুর ছিল ১০০টি। বর্তমানে এ সংখ্যা নেমে এসেছে ২৯টিতে। পর্যাপ্ত জলাশয় না থাকায় আগুন নেভাতে বেশি সময় লাগছে। ক্ষয়ক্ষতিও বেশি হচ্ছে।’

আগুন নিয়ন্ত্রণে দেরি হওয়ার কারণ চিহ্নিত করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, পানির সংকট, উৎস্যুক জনতা ও বাতাসের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে তাদের বেগ পেতে হয়।

কয়েকটি সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ড 

গত ১৫ এপ্রিল রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ২৮টি ইউনিট সাড়ে ৩ ঘণ্টা চেষ্টার পর সকাল ৯টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সেখানে ২৪৩টি দোকান পুড়ে যায়।

গত ২৭ মার্চ মহাখালীর সাততলা বস্তিতে ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট আড়াই ঘণ্টা চেষ্টার পর সকাল ৮টা ১০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগে ২০২১ সালের ৭ জুন একই বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট ৩ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর গুলশান-২ এর ১০৪ নম্বর সড়কের ১২ তলা ভবনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট ৪ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত ১১টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ২ জনের মৃত্যু হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি বনানীর টিঅ্যান্ডটি কলোনির বস্তিতে রাত ৩টার দিকে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ২২টি ইউনিট ২ ঘণ্টা চেষ্টার পর ভোর ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। 

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ৩৭টি ইউনিট ১৪ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। একই বছর ৩০ মার্চ গুলশান-১ এর ডিএনসিসি মার্কেটে আগুন লাগে ভোর ৫টা ৪৮ মিনিটে আর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ২০টি ইউনিট আড়াই ঘণ্টা চেষ্টার পর সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আনে।

বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ দুপুর পৌনে ১২টায়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ২৫টি ইউনিট সাড়ে ৬ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে সন্ধ্যা ৭টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা