× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কৃষি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড

দুর্ঘটনা মানতে নারাজ ব্যবসায়ীরা

শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:৪২ এএম

কেউ খুঁজছে শেষ সম্বল কেউ পরিষ্কার করছে নতুন ভাবে শুরু করতে রয়েছে উৎসুকদের ভিড়। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চিত্র। ছবি : আরিফুল আমিন

কেউ খুঁজছে শেষ সম্বল কেউ পরিষ্কার করছে নতুন ভাবে শুরু করতে রয়েছে উৎসুকদের ভিড়। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চিত্র। ছবি : আরিফুল আমিন

রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের আগুনের ঘটনাকে দুর্ঘটনা মানতে নারাজ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, এটা পরিকল্পিত নাশকতা। তবে ফায়ার সার্ভিস বলছে, মশার কয়েল বা শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে। নাশকতার বিষয়টিও তারা খতিয়ে দেখছে। এদিকে গতকাল শুক্রবার দোকানিদের দেখা গেছে ছাই-ভস্মের মধ্যে পোড়া আধা পোড়া মালামাল খুঁজে ফিরতে। স্বর্ণের দোকানিরা বলছেন, তাদের দোকানে থাকা গয়না পোড়ার কথা নয়। সেগুলোর অনেকটাই লুট হয়ে গেছে। 

কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার ভোরে পূর্ব-দক্ষিণ কর্নারে কাঁচাবাজারের প্রবেশমুখে হক বেকারিতে প্রথম আগুন চোখে পড়ে। এর ঠিক এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যে পশ্চিম-উত্তর কোনায় আরেকটি দোকানে আগুন দেখা যায়। একই সময় দক্ষিণ-পশ্চিম পাশের আরেকটি দোকানেও তখন আগুন ধরে ওঠে। শর্টসার্কিট বা কয়েলের আগুন হলে একসঙ্গে মার্কেটের শেষ প্রান্তের তিন কোনার তিনটি দোকানে আগুন কীভাবে লাগল? কেউ আগুন না লাগালে, কীভাবে একসঙ্গে মার্কেটের শেষ প্রান্তের দোকানগুলোতে আগুন লাগবে।

কৃষি মার্কেটের ‘খ’ ব্লকের রেডিমেড কাপড়ের ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, ‘মার্কেটের পাশেই আমার বাসা। প্রথমে যখন আগুন লাগে, তখন মানুষের চিৎকার শুনে আমি দ্রুত দৌড়ে দোকানে আসি। এসে দেখি মার্কেটের পূর্ব পাশে হক বেকারিতে আগুন লেগেছে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই পশ্চিম পাশের উত্তর কোনায় আরেকটি দোকানে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। একই সঙ্গে পশ্চিম-দক্ষিণ কোনার শেষ প্রান্তে আরেকটি দোকানে আগুন জ্বলে ওঠে। মার্কেট বন্ধ থাকায় কেউ মার্কেটে এসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

একই ব্লকের আরেক কাপড় ব্যবসায়ী আজমল বলেন, ‘আমার দোকানে প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। বুধবার রাতে দোকান গুছিয়ে বাসায় যাই। বৃহস্পতিবার মার্কেট বন্ধ, তাই দোকান থেকে নগদ টাকা নিয়ে যাই। হঠাৎ করে রাত ৩টার দিকে দেখি মানুষের চিৎকার। মার্কেটের পাশে বাসা হওয়ায় দ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে মার্কেটে আসি। এসে আমিও তিন কোনায় তিনটি পৃথক দোকানে আগুন দেখতে পাই। এই আগুন পরিকল্পিত।’ 

প্রায় একই রকম অভিযোগ করে প্রত্যক্ষদর্শী আলম হেসেন বলেন, ‘আগুন যেখানে লেগেছে, সেই জায়গা থেকে পুরো মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নাই। বৃহস্পতিবার ছিল মার্কেট সাপ্তাহিক বন্ধ। যে কারণে পরিকল্পনা করে মার্কেটের শেষ প্রান্তের তিন পাশে আগুন লাগানো হয়েছে। এ জন্যই পুরো মার্কেটটি আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে।’ আরও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী একই কথা বলেন।

আগুনের উৎসের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা অনেকটা নিশ্চিত, মার্কেটের একটি বেকারি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। কীভাবে আগুন লেগেছে, সেটা তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শর্টসার্কিট বা মশার কয়েল থেকে আগুন লেগেছে।’

গতকাল সরেজিমনে দেখা গেছে, ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া মার্কেটজুড়ে শুধুই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের হাহাকার। চারদিকে এখনও পোড়া গন্ধ। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া দোকানের মালামাল সরাতে এবং সেগুলো থেকে বেঁচে যাওয়া পণ্যগুলো কুড়িয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন অনেকে। কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন সেই চিন্তা সবার চোখমুখে। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগুনে তাদের দোকানই নয়, পুড়েছে একেকটি পরিবারের স্বপ্ন। আচমকা বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে কী করবেন কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না তারা। তবে তারা আবার ঘুরে দাঁড়াতে চান, সহায়তা চেয়েছেন কর্তৃপক্ষের কাছে। যত দ্রুত সম্ভব পুনর্বাসন এবং মার্কেটের সামনে সড়কের পাশে অস্থায়ী দোকান বসানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, অনেকেই সহযোগিতার নামে লুট করেছেন। আবার অনেকে দোকান থেকে বের করে রাখা মাল নিয়ে গেছেন। আলী স্টোরের মালিক আবু তাহের বলেন, ‘আগুন নেভার পরে দেখি দোকানের বেশিরভাগ মালামাল আগুন ও পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে যেসব মালামাল পেয়েছি সেগুলো গুছিয়ে রেখে গেছি। শুক্রবার সকালে এসে দেখি অধিকাংশই চুরি হয়ে গেছে। কে, কীভাবে নিয়ে গেছে বলতে পারছি না। এগুলো যেন এখন লুটের মাল। কাল দিন থাকতে যা পেরেছি করেছি, অন্ধকারে তো দোকানে ঢোকা যায় না। কিন্তু সকালে আসার আগেই সব নিয়ে গেছে। এমনকি পুড়ে যাওয়া তার, লোহার অ্যাঙ্গেলসহ সব নিয়ে গেছে।’ চাঁদপুর স্টোরের মালিক শারমিন আক্তার বলেন, ‘তিন বোন মিলে দোকান চালাতাম। আগুনে সব পুড়ে গেছে। এরপর ছাইয়ের নিচে যা পেয়েছি সেগুলো গুছিয়ে এক পাশে রেখেছি। শাটার লাগানো ছিল। কিন্তু সকালে এসে দেখি কিছুই নেই। শাটার খুলে সব নিয়ে গেছে। সাবানের গুঁড়া, চিনির বস্তাসহ বিভিন্ন মালামাল রাখা ছিল।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতে অনেকেই এসেছেন। তারাও ভালো ভালো মালামাল বের করে নিয়ে গেছেন। উদ্ধার করার নামে নিয়ে গেছেন। আবার বের করে দোকানের বাইরে রাখা মালামালও নিয়ে গেছেন।’

মালামাল লুটের বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আজিজুল হক বলেন, ‘আমরা মার্কেটের নিরাপত্তায় কাজ করছি। সব গেটে পুলিশ সদস্যরা আছেন। কেউ কোনো অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

এদিকে গতকাল আগুনের হাত থেকে বেঁচে পাওয়া চাল, ডাল, আলু, লবণ, আটা, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের। কথা বলে জানা গেছে, আগুনের কারণে ধোঁয়ার গন্ধ ও ভেজা এসব পণ্য নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করছেন তারা। সাধারণ সময়ের ৮০ টাকার চাল এখন ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি বিক্রি করছেন। আবার কেউ কেউ বস্তা বিক্রি করছেন মাত্র ৭০০ থেকে হাজার টাকায়। আর এসব পণ্য কম দামে কেনার আশায় অনেককেই ভিড় করতে দেখা গেছে।

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি ব্যবসায়ীদের দাবি প্রসঙ্গে বলেন, ‘কৃষি মার্কেটের বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি এ বিষয়ে অবগত আছেন। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব, ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য।’ কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এ মার্কেটের অধিকাংশ ব্যবসায়ীই মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত। আমাদের চোখের সামনেই এই বাজার গড়ে উঠছে। এত বড় একটা ক্ষতি, প্রায় পাঁচ-ছয়শ পরিবার একদম সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে। তারা যাতে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে, আমরা সেই সহযোগিতা করব।’ 

এদিন মার্কেটের সামনে জেলা প্রশাসনের পক্ষে একটি বুথ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরাও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্তি করছেন। ঢাকার জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমরা অতি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকা করব। তারপর আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের মানবিক সহায়তা করার চেষ্টা করব।’

বৃস্পতিবার ভোরে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা