বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:১৯ পিএম
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:২২ পিএম
শতবর্ষী বনসাই। প্রবা ফটো
জীবন্ত শিল্পকর্মের আরেক নাম বনসাই। ছোট্ট মাটির পাত্রে পূর্ণ গাছের আদলে বট, ফাইকাস, জেড, চাইনিজ এলম, পডোকার্পাস, জেলকোভার মতো গাছগুলোকে ছোট আকারে সুন্দর করে বাঁচিয়ে রেখে এই নান্দনিক সৌন্দর্যের শিল্প গড়ে উঠে। দ্রুত নগরায়ণের এই সময়ে গাছের সৌন্দর্য আর অক্সিজেনের ঘাটতি মেটাতে বহু প্রাচীন এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে বাড়িতে বাড়িতে বনসাইয়ের চর্চা করা জরুরি বলে মনে করেন বনসাই বোদ্ধারা। তারা বলেন, বনসাই প্রকৃতির অংশ দিয়ে তৈরি অপরূপ সৌন্দর্য হতে পারে শৌখিন শোপিস।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ধানমণ্ডির ডাব্লিউভিএ মিলনায়তনে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটি আয়োজিত ২৩তম বার্ষিক বনসাই প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনী চলবে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য প্রদর্শনী খোলা থাকবে।
এবারের প্রদর্শনীর মূল লক্ষ্য সজীব-সতেজ বনসাই শহরের মানুষের কাছে তুলে ধরা। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক লেখক মোকারম হোসেন। এতে সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন শিক্ষাবিদ ও কার্টুনিস্ট শিশির ভট্টাচার্য। সভাপতিত্ব করেন সোসাইটির সভাপতি নাজমা শফিক। অনুষ্ঠানে বনসাই শিল্পকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখার জন্য এমি ইসলাম সম্মাননা দেওয়া হয় মো. সালাহউদ্দিনকে।
আয়োজকরা জানান, প্রদর্শনীতে দেশীয় বৈচিঁ, ঘূর্ণি, তমাল, শ্যাওড়া, তুঁত, নিশিন্দা গাছের পাশাপাশি অতিপরিচিত তেঁতুল, বট, পাকুর, হিজল, কামিনীসহ প্রায় ক্রমান্বয়ে ৭০০ বনসাই স্থান পাবে। কম বয়সী থেকে শুরু করে শতবর্ষী বনসাইও স্থান পেয়েছে এতে। দর্শনার্থীরা চাইলে বনসাই কিনতেও পারবেন। প্রদর্শনীতে একেকটি বনসাইয়ের দাম দুই হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা। প্রদর্শিত ও বিক্রি হচ্ছে ফুকেন, রাইটিয়া, ফাইকাস, ব্লু বেল, ফাইকাস রিটুসা,প্রেমনা, ঝুমুর, চায়না বটসহ অনেক প্রজাতির বনসাই। তবে এদের মধ্যে প্রেমনা এবং চায়না বটের সংখ্যা ছিল তুলনামূলক বেশি।
বনসাইপ্রেমীরা তাদের প্রিয় গাছগুলো নিয়ে এসেছেন এই প্রদর্শনীতে। এ ছাড়া এই প্রদর্শনীতে সার এবং বনসাই পরিচর্যার নানা সরঞ্জাম পাওয়া যাচ্ছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মোকারম হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশে শিল্পকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। বনসাই শিল্পীরা নিজেদের ভালোবাসা থেকে সময়, পরিশ্রম আর নিষ্ঠা দিয়ে বনসাই করে চলেছেন। প্রাচীন এই শিল্পকে ধরে রেখেছেন। শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সহযোগিতা করতে হবে। নগরের ২০ শতাংশ গাছকে বনসাই করা নেতিবাচক কিছু না। কারণ বনসাইও সবুজ এবং প্রকৃতির জন্য উপকারী।’
শিশির ভট্টাচার্য বলেন, ‘মানুষ মূলত যখন গ্রাম থেকে শহরে বসবাস করতে শুরু করে; তখন ধীরে ধীরে প্রকৃতির টান সবচেয়ে বেশি অনুভব করে! আর এই টান থেকেই মানুষ ইট-পাথরের চৌহদ্দীর মধ্যেও ফ্ল্যাট বাড়ির সীমিত পরিসরে গড়ে তুলছে বনসাই সংস্কৃতি। শৌখিন, নান্দনিক, সৌন্দর্যপ্রিয় ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ বাসাবাড়িতে নিয়ে এসেছে বট-হিজলের মতো সুবিশাল ছায়া প্রদানকারী এই শিল্প। কিছু মানুষ এটিকে খারাপ বলতে চান। তবে এর ভালো দিকটাও তো তাদের চিন্তা করা উচিৎ।’
বনসাই সোসাইটির সভাপতি নাজমা শফিক বলেন, বনসাই একটি চলমান শিল্প। ঢাকা শহরের পাশাপাশি রাজশাহী, খুলনায়ও এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। কিশোরদের মোবাইল-ল্যাপটপে না মজে থেকে বনসাই করার পরামর্শ দেন তিনি।