× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কৃষি মার্কেটে আগুন

সব হারিয়ে ব্যবসায়ীদের আহাজারি

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:২৭ পিএম

আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:২২ পিএম

আগুনে দোকান পুড়ে যাওয়া এক ব্যবসায়ী কান্না করছেন। ছবি : আরিফুল আমিন

আগুনে দোকান পুড়ে যাওয়া এক ব্যবসায়ী কান্না করছেন। ছবি : আরিফুল আমিন

আগুনে পুড়ে যাওয়া রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের ধ্বংসস্তূপের সামনে বসে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন ব্যবসায়ী বাচ্চু মিয়া। তার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দিচ্ছিলেন বাবা আবুল কালাম সরকার। বিলাপ করতে করতে বাচ্চু মিয়া বলছিলেন, ‘২০০৩ সাল থেকে এই মার্কেটে আমার মুড়ির ব্যবসা। মার্কেটে আরও তিনটি গুদাম ছিল আমার। মোহাম্মদপুর, রায়ের বাজার, আদাবর, হাজারীবাগ, আগারগাঁওসহ আশপাশের এলাকায় আমার দোকান থেকে মুড়ি পাইকারি বিক্রি হতো। গতকাল রাতেই তিন লাখ টাকার মুড়ি গুদামে ঢুকিয়েছিলাম। শেষ হতে না হতেই মার্কেটে আগুন লাগল। দাড়ি-মোছ (গোঁফ) গজানোর আগে শুরু করা ব্যবসা আমার চোখের সামনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার আর কিছু রইল না। সাত লাখ টাকার মালামালসহ দোকানের ক্যাশের দেড় লাখ টাকা ছাই হয়ে গেল। আড়ৎদার আমার কাছে প্রায় ২০ লাখ টাকা পাবে। আর আমি বিভিন্ন দোকানির কাছে পাব প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। কার কাছে কত টাকা পাব সেই টালি খাতাটাও পুড়ে গেছে। এখন কীভাবে হিসেব বের করব আর টাকা উদ্ধার করব? আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম।’

বাচ্চু মিয়াকে শান্তনা দিতে সকালেই মাদারীপুর থেকে এসেছেন বাবা আবুল কালাম সরদার। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে অনেক পরিশ্রম করে দোকানটি এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছিল। এখন সব হারিয়ে সে নিঃস্ব। তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই আমার।’

গতকাল মধ্যরাতে কৃষি মার্কেটে আগুন লাগে। ব্যবসায়ীদের দাবি, আগুনে তাদের অন্তত ৫০০ দোকান পুড়েছে। ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে মার্কেট এলাকা।

দোকানের সামনে সাদা পাঞ্জাবি পরে দাঁড়িয়ে ছিলেন মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী ফজলুল হক। একটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পুড়ে যাওয়া কাপড় দেখাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, ‘গতকালই চার লাখ টাকার মালপত্র উঠিয়েছিলাম। কাপড় আনি বিক্রি হলে টাকা শোধ করি। সেই টাকা কীভাবে দিব? দুই টাকাও বিক্রি করতে পারলাম না।’

তিনি আরও বলেন, ‘খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৩টায় এখানে আসি। সামনের দিকের চারটা দোকান পুড়ে গেছে। তখনও এই দোকান অক্ষত। ধোঁয়ায় কিছু দেখা যাচ্ছে না। আমরা চার/পাঁচজন মিলে মূল গেট ভেঙে ফেলি। পেট কেটে গেছে, পাঞ্জাবি ছিঁড়ে গেছে। তারপর দেখি আমার দোকানের চাবিটাই বাসায় ফেলে আসছি। ফায়ার সার্ভিসের কাছে অনুরোধ করি এই দোকানটা বাচান, আমার কথা কেউ শুনে নাই। এই মার্কেটের মতো, সুন্দর মার্কেট আর ছিল বলে আমার মনে হয় না। প্রায় দেড় কোটি আমার ইনভেস্ট ছিল। আগুন লাগানোর মতো শত্রুতাও ছিল না কারো সঙ্গে। আমরাতো স্বর্বশান্ত হয়ে গেলাম।’

কথার মাঝেই পাশে শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা কামাল হোসেনকে জড়িয়ে ধরে দুজনেই কেঁদে উঠেন। কামাল হোসেনের দোকান পাশেই। তিনি বলেন, ‘কি বলব আর আমার কপাল পুড়েছে। দোকানে ২০ লাখ মাল আছিল। রাতে চোখের সামনে দোকান পুড়ে ছাই হতে দেখেছি।’

ব্যবসায়ীরা পাঁচশতাধিক দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দাবি করলেও এদিকে ডিএনসিসি জানিয়েছে আগুনে পুড়ে মার্কেটের ২১৭টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রাজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘অবৈধ দোকানগুলো ফুটপাতে ছিল। আমাদের বরাদ্দ দেওয়া দোকান ছিল ৩১৭টি। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত আমরা যে তথ্য পেয়েছি- ২১৭টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মার্কেটের হক বেকারিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। বাতাসে মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। মার্কেট বন্ধ থাকায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা প্রথমে এসে ভেতরে ঢুকতে পারেননি। এতে চারিদিকে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ার সময় পায়।

কৃষি মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী রাকিবুল ইসলাম বলেন, হক বেকারিতে প্রথমেই আগুন লাগে। সেই আগুন মুহূর্তে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। 

দুবাই জুয়েলার্সের মালিক আমির হোসেন বলেন, ‘আমার দুটি জুয়েলার্সের দোকান ছিল। ভোর চারটায় খবর পেয়ে মার্কেটে আসি। তখনও আমার দোকানে আগুন লাগেনি। মার্কেট বন্ধ থাকায় মালামাল সব সরাতে পারিনি। সামান্য কিছু সরাতে পেরেছি।’

বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার পর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট কাজ করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর বিশেষ দল। পরে আজ সকাল সাড়ে ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা