কৃষি মার্কেটে আগুন
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:৫৭ এএম
আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৪৫ পিএম
ব্যবসায়ীদের দাবি, কৃষি মার্কেট ও নতুন কাঁচা বাজার মিলিয়ে সেখানে প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০টি দোকান ছিল। এর মধ্যে আগুনে পুড়ে গেছে অন্তত ৫০০টি। প্রবা ফটো
সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার মতো আগুনে পুড়েছে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট। গতকাল মধ্যরাতে লাগা আগুন ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিটের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে আজ সকাল প্রায় সাড়ে ৯টার দিকে। ব্যবসায়ীদের দাবি, কৃষি মার্কেট ও নতুন কাঁচা বাজার মিলিয়ে সেখানে প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০টি দোকান ছিল। এর মধ্যে আগুনে পুড়ে গেছে অন্তত ৫০০টি। এর মধ্যে ১৮টি জুয়েলারি দোকানও রয়েছে।
তবে পুড়ে যাওয়া দোকানের সঠিক সংখ্যা কত জানতে মার্কেটটির দোকান মালিক সমিতির কাউকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মার্কেটের হক বেকারিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। বাতাসে মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। মার্কেট বন্ধ থাকায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা প্রথমে এসে ভেতরে ঢুকতে পারেননি। এতে চারিদিকে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ার সময় পায়।
কৃষি মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী মাহবুব হাসান বলেন, প্রথমে হক বেকারিতে আগুন লাগে। সেই আগুন মুহূর্তে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তার ধারণা, মার্কেটের ৫০০ এর বেশি দোকান পুড়েছে। এর মধ্যে তার দোকানও রয়েছে। তার দোকানে লাখ পাঁচেক টাকার মালামাল ছিল।
আরেক ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম মনে করেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রথমে মার্কেটে ঢুকতে পারলে এতো দোকান পুড়ত না। কিন্তু মার্কেট বন্ধ থাকায় সেটা হয়নি। তিনি বলেন, ‘দোকান থেকে কিছুই বের করতে পারিনি। সবকিছু পুড়ে ছাই।’
ওয়াহিদ নামের আরেক কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, তিনি রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন। এসে দেখেন তখনও তার দোকানে আগুন লাগেনি। তবে একপর্যায়ে তার দোকানও পুড়ে যায়। তার দোকানটি মার্কেটের ভেতরের দিকে হওয়ায় তিনি যেতে পারেননি। তারও দাবি, দুই মার্কেটে ৫০০-এর বেশি দোকান পুড়ে গেছে।
মার্কেটে জাকির হোসেনের ছিল স্বর্ণের দোকান। তিনি বলেন, মার্কেটের মাঝে দোকান হওয়ায় তিনি ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। ফলে তার দোকান থেকে টাকা-পয়সা কিংবা স্বর্ণালংকার কিছুই বের করতে পারেননি।
স্বর্ণের দোকান পুড়েছে ১৮টি
কৃষি মার্কেটের নতুন কাঁচা বাজারের মার্কেটের সামনের ও ভেতরের নয়টি করে ১৮টি স্বর্ণের দোকান পুড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, আলিফ জুয়েলার্স, হেনা জুয়েলার্স, দুবাই জুয়েলার্স, সিঙ্গাপুর জুয়েলার্স, মুন জুয়েলার্স, রিয়াদ জুয়েলার্স ও মা জুয়েলার্স আগুনে পুড়ে গেছে।
দুবাই জুয়েলার্সের মালিক আমির হোসেন জানান, তার দুটি জুয়েলার্সের দোকান ছিল। ‘ভোর চারটায় খবর পেয়ে মার্কেটে আসি। তখনও আমার দোকানে আগুন লাগেনি। মার্কেট বন্ধ থাকায় মালামাল সব সরাতে পারিনি। সামান্য কিছু সরাতে পেরেছি।’
এই ব্যবসায়ী বলেন, মার্কেটে ১৮টি স্বর্ণের দোকান ছিল। সবগুলো পুড়ে গেছে।
সিঙ্গাপুর জুয়েলার্সের আবু কাওশার বলেন, তার দোকানে ২ কোটি টাকার কাছাকাছি মালামাল ছিল। কিছু বের করা গেছে। তবে বেশিরভাগই দোকানে ছিল। এখন দোকান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।
স্বর্ণের দোকান ছাড়াও মার্কেটটিতে কাপড়, প্লাস্টিকের মালামাল, ক্রোকারিজ ও ব্যাগের দোকান পুড়েছে।
এর আগে সকালে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা রাশিদ বিন খালেদ বলেন, রাত ৩টা ৫২ মিনিটে আগুন লাগার খবর পান তারা। খবর পেয়ে ১২টি ইউনিট আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ শুরু করে। আগুনের ভয়াবহতা বাড়তে থাকলে পরে আরও পাঁচটি ইউনিট যোগ দেয়।
১৭টি ইউনিটের সাড়ে ৫ ঘণ্টার চেষ্টায় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানান ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান সিকদার।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা দিতে সেনাবাহিনী ছাড়াও পুলিশ, বিজিবির সদস্যরা যোগ দেন।
অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা ছিল না মার্কেটে
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর প্রেস ব্রিফিং করেছে ফায়ার সার্ভিস। বাহিনীটি জানিয়েছে, মার্কেটের আগুনের সূত্রপাত একটি মুদি দোকান থেকে। আর ঝুঁকিপূর্ণ হলেও মার্কেটটিতে কোনো অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা ছিল না। আগুন নাশকতা নাকি বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে তাৎক্ষণিক আগুনে ক্ষয়ক্ষতি ও পুড়ে যাওয়া দোকানের সংখ্যা তারা জানায়নি। নিরূপণের পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।