প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:৩২ এএম
আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:১৪ পিএম
ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিটের সাড়ে ৫ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রবা ফটো
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের আগুনের সূত্রপাত একটি মুদি দোকান থেকে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তারা আরও জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ হলেও মার্কেটটিতে কোনো অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা ছিল না।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে প্রেস ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিস এ তথ্য জানায়।
ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিস জানায়, মার্কেটে লাগা আগুন নাশকতা নাকি বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
‘বহুবার নোটিস দেওয়া হয়েছে’
ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস এন্ড মেইনটেনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, কৃষি মার্কেটে কোনো ফায়ার সেফটি ছিল না। প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিংয়ের কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। এখানে পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও ছিল না। ঘটনাস্থলে উৎসুক মানুষের ভিড়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়েছে।
এই মার্কেটের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা নিয়ে আগে থেকেই আলোচনা ছিল। বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলো নিয়ে কথা উঠে। সেসব মার্কেটে বিভিন্ন সময় অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা করতে বলা হয়। তবে তা আমলে নেননি ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে এই কৃষি মার্কেটও একটি।
ফায়ার কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই কৃষি মার্কেটে কোনো সেফটি প্ল্যান ছিল না। তাদের বার বার নোটিস দেওয়া হয়েছে। বিভিন্নভাবে গণসংযোগ করা হয়েছে। সচেতনতার প্রোগ্রাম যেভাবে আমরা করেছি সেভাবে তারা সাড়া দেন নাই। এই মার্কেটটা কিছুটা বঙ্গবাজার টাইপের। এর ভিতরে এবং বাইরে ছোট ছোট যতোগুলো রাস্তা ছিল- পুরোটাই বিভিন্ন মালামালে দিয়ে গাদাগাদি করে বন্ধ করা ছিল। পুরো মার্কেট টাইট ফ্লবসিবল গেট দিয়ে আটকানো ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগুনের খবর পেয়ে ৯ মিনিটের মাথায় আমরা চলে আসি। রাত ৩টা ৫২ থেকে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করি। সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ১৭টি ইউনিটে ১৫০ জন ফায়ার ফাইটার কাজ করেছে। আমাদের সঙ্গে বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, সেনা ও নৌবাহিনী সহযোগিতা করেছে।’
ঘটনাস্থলে আসার পর ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এখানকার নাইট গার্ডরা বাহিরে ছিলেন। প্রথমে তাদেরকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। ফলে ফায়ার ফাইটারদের ভিতরে প্রবেশ করতে বেগ পেতে হয়েছে। তালা ও গেট ভেঙে আমাদেরকে ভেতরে ঢুকতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মার্কেটের বাইরেও রাস্তাগুলো বিভিন্নভাবে দখল করা ছিল। দোকানের সামনে ছোটখাটো দোকান আমাদের একটা কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলোর জন্য আমাদেরকে বেগ পোহাতে হয়। আমরা আশার পর আগুনের মাত্রা অনেক বেশি দেখেছি। একটা পর্যায়ে মার্কেটের প্রায় চার ভাগের তিনভাগ সম্পূর্ণ আগুন ধরে যায়। আমরা চেষ্টা করেছি আগুনটা যেন না ছড়ায়।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রতি সপ্তাহে গণসংযোগ করি। এছাড়াও বিভিন্ন সময় মার্কেটের প্রতিনিধিদেরকে ডেকে আমরা অনেকবার আলোচনা করেছি, ওয়ার্কশপ করেছি। মার্কেটের যারা মালিকপক্ষ তাদেরকে ডেকে আমরা বুঝিয়েছি।’
পানির সংকট
আগুন নেভাতে গিয়ে পানির সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মার্কেটে প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিংয়ের কোনো ইকুইপমেন্টই ছিল না। আমাদের সবথেকে বেশি বেগ পোহাতে হয়েছে পানির সংকট নিয়ে। ঘটনাস্থলে পানির সোর্স তেমন ছিল না। এখানে বিভিন্ন ভবনে পানির সোর্স রয়েছে কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। খুব দ্রুত আমাদের পানি শেষ হয়ে যায়। অন্যান্য বাহিনীর সহায়তায় আমরা কার্যক্রম চালাই।’
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগা নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আগুন নেভানোর আরেকটি বড় বাধা ছিল মানুষের ভিড়। মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের পুলিশ, বিজিবি হিমশিম খেয়েছে। এই ভিড়ের কারণে আমাদের এত সময় লেগেছে। যদিও মানুষ চেষ্টা করতে চায় আমাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য কিন্তু আদৌ এটা আমাদের অনেক সময় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।’
অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, ‘আগুনের সূত্রপাত তদন্ত করব। তবে যতটুকু বুঝেছি মার্কেটে মুদির দোকানের যেই অংশটি ছিল ওই অংশ থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে যারা ছিল তাদের দুই একজন কিছুটা আহত হয়েছেন। এর বাইরে কোন বড় ধরনের হতাহতের তথ্য নেই।’
সকালে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা রাশিদ বিন খালেদ বলেন, রাত ৩টা ৫২ মিনিটে আগুন লাগার খবর পান তারা। খবর পেয়ে ১২টি ইউনিট আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ শুরু করে। আগুনের ভয়াবহতা বাড়তে থাকলে পরে আরও পাঁচটি ইউনিট যোগ দেয়।
১৭টি ইউনিটের সাড়ে ৫ ঘণ্টার চেষ্টায় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানান ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান সিকদার।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা দিতে সেনাবাহিনী ছাড়াও পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা যোগ দেয়। আগুনে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।