আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৩ ২২:৩৫ পিএম
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৩ ২৩:১৭ পিএম
আশুলিয়ার শ্রীপুর দক্ষিণপাড়া এলাকার পিচঢালা সড়কে চলছে নৌকা। প্রবা ফটো
ঢাকার আশুলিয়ার শ্রীপুর দক্ষিণপাড়ায় কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে খালে পরিণত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ওই এলাকার প্রায় দুই হাজার বাসিন্দা। পিচ ঢালাই সড়কের ওপরে এখন ছোট নৌকাই যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে বেশিরভাগ মানুষ ময়লা পানি মাড়িয়ে ছুটছে গন্তব্যে।
বন্ধ রয়েছে দোকানপাট। অনেকে ঈদের ছুটি শেষে গ্রাম থেকে ফিরে পড়েছেন চরম বিপাকে। লড়াই করছেন পানির সঙ্গে। ঘরে-বাইরে হাঁটুপানি। ময়লা পানিতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। গত এক সপ্তাহ ধরে এমন দুর্ভোগ বলে জানান স্থানীয়রা।
সরেজমিনে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের ঢাকামুখী আশুলিয়ার শ্রীপুর দক্ষিণপাড়া এলাকায় ঢুকতেই দেখা যায়, শাখা সড়কটি পানিতে ডুবে আছে। এর পেছনে পুরো এলাকায় হাঁটুপানি। কোথাও কোমর পানি। বাড়িঘরে ঢুকে পড়েছে পানি। দোকানপাট বন্ধ। পানিতে মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে।
চলাচলে দুয়েকটি ছোট নৌকা দেখা গেলেও অনেকে ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছে। কেউ ঘর থেকে আসবাব বের করছে। কেউ শিশুকে কোলে নিয়ে বের হয়ে আসছে। কর্মজীবী মানুষ ভেজা কাপড়েই ছুটছেন কাজে। ঈদের ছুটি শেষে গ্রাম থেকে ফিরে ব্যাগ নিয়ে অনেকে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সড়কের সামনে। জনবহুল এলাকাটি যেন স্থবির হয়ে আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাটি সড়ক ও জনপথের মূল ড্রেনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তবে ময়লা-আবর্জনা জমে ড্রেন লাইনটি প্রায় বন্ধ। ফলে টানা বৃষ্টিতে ঈদের পরদিন থেকে শুরু হতে থাকে জলাবদ্ধতা। স্থানীয়ভাবে ড্রেনটি পরিষ্কার করে নিষ্কাশনের চেষ্টা করলেও তেমন সমাধান মিলছে না। তা ছাড়া যে ড্রেনটি করা হয়েছে, তা পানি নিষ্কাশনের জন্য অপ্রতুল। আবার প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ভবন।
পোশাক শ্রমিক আমেনা বেগম বলেন, ‘আমাদের খুব কষ্ট। বাসার মোটর নষ্ট হয়ে গেছে। ভেজা কাপড়ে কারখানায় যাই। কী করমু। ঘরে খাওয়ার পানি নাই। টয়লেটেও পানি নাই।’ বৃদ্ধা জামেলা খাতুন বলেন, ‘পোলাপান পানিতে পড়ে যায়। আমরা আর পারছি না। আমাদের কী করা যায় একটু দেখেন।’
স্থানীয় ওষুধ দোকানি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘গ্রামের বাড়ি থেকে এসে দেখি দোকানের ওষুধ পানিতে ভাসছে। ড্রেন লাইন ছোট, তাই পানি নিষ্কাশন হয় না। প্রতিবছর দুয়েকবার এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’
কাশেম মিয়া নামে স্থানীয় একজন বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ব্যক্তিগতভাবেও ড্রেনের কাজ করেছেন। কিন্তু সেটা দিয়ে কাভার হচ্ছে না। আশপাশের অফিসের পানি ও ভাদাইল এলাকার পানি এদিক দিয়ে নামে। ফলে ওভার হয়ে আমাদের এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, যাতে প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে দেয়।’
আব্দুর রশিদ নামে আরেক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এখানে অধিকাংশ পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বসবাস। জলাবদ্ধতায় মশার উপদ্রব ও ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ বাড়ছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে ভোগান্তি থেকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
স্থানীয় ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যক্তিগত ও স্থানীয় উদ্যোগে ড্রেন নির্মাণ করলেও পরিষ্কারের বিষয়টিতে নজর নেই স্থানীয়দের। যদি নজর দিত তাহলে এমন দুর্ভোগ সৃষ্টি হতো না। জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত কাজ করা হবে।’