প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৩ ২১:৫৮ পিএম
আপডেট : ২৬ জুন ২০২৩ ২২:১৩ পিএম
ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল। সংগৃহীত ছবি
ভুল চিকিৎসায় তাহসিন হোসেইন নামের এক কিশোরের মৃত্যুর অভিযোগে ঢাকার ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) সাতজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।
সোমবার (২৬ জুন) ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে মামলাটি করেন তাহসিনের বাবা মনির হোসেন। পরে আদালত ধানমন্ডি থানার ওসিকে মামলাটি নিয়মিত হিসেবে গ্রহণের আদেশ দেন।
প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে মনির হোসেন নামের একজন মামলাটি করেন। পরে আদালত আমাদের অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণের আদেশ দেন।’
তিনি বলেন, ’মামলায় ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এমএ শামীম, হাসপাতালের সার্জন ডা. মো. সাইফুল্লাহ, সহকারী সার্জন ডা. মাকসুদ, ডা. সাব্বির আহমেদ, ডা. মোশাররফ, ডা. তাজরিন ভূঁইয়া ও হাসপাতালের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মো. শাহজাহানকে আসামি করা হয়েছে।’
মনির হোসেনের আইনজীবী তানভীর আহমেদ সজীব বলেন, ’বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক বেগম ফারাহ দিবা ছন্দা এটিকে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ হিসেবে নয়, বরং সরাসরি হত্যা মামলা হিসেবে নিতে ধানমন্ডি থানার ওসিকে আদেশ দিয়েছেন।’
মামলার আবেদনে বলা হয়, তাহসিন কিছু দিন ধরে অসুস্থবোধ করায় গত ২৭ মার্চ তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ডা. সাইফুল্লাহর কাছে দেখানো হয়। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। ওই চিকিৎসক বলেন, তার অবস্ট্রাকটিভ স্মল গাট বা নাড়ির প্যাঁচ রয়েছে। যার কারণে পেটে ব্যথা ও মল ত্যাগ করতে পারছে না। দ্রুত অস্ত্রোপচার না করলে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। পরে ২৮ মার্চ অস্ত্রোপচার করে মলদ্বারের অংশ অপসারণ করা হয়। এরপর তাহসিনের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এ অবস্থায় দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর এক মাস পার হলেও ছেলের অবস্থার উন্নতি হয়নি। পরে অবস্থা ক্রমেই খারাপ হতে থাকে এবং দীর্ঘ তিন মাস চিকিৎসা চলার পর ২৩ জুন ছেলের মৃত্যু হয়।
আবেদনে আরও বলা হয়, তিন মাসে তাহসিনকে ১৪৪ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। চিকিৎসা ব্যয় হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রায় ২৭ লাখ টাকা বিল করে। এর মধ্যে ১০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে হাসপাতাল থেকে সন্তানের লাশ নিয়ে দাফনের ব্যবস্থা করেন মনির হোসেন।
নিহত তাহসিন হোসেইনের মা স্কুলশিক্ষক তাজভীন ভূঁইয়া বলেন, ’তাহসিন হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। সে মেধাবী, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখত। ওরা আমার ছেলের স্বপ্ন শেষ করে দিল। এটি হত্যা। আমি এর বিচার চাই। ভিটেবাড়ি বিক্রি করে হাসপাতালে টাকা দিয়েছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা আমার ছেলের মরদেহ ধরিয়ে দিয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’
ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়ে ল্যাবএইড হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা চৌধুরী মেহের-এ-খোদা দীপ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ’এমন একটি মামলা হয়েছে। এটা আইনি ব্যাপার। আমাদের লিগ্যাল ডিপার্টমেন্ট দেখবে। এটা প্রশাসনের ব্যাপার, তারা তাদের মতো তদন্ত করবে। এ বিষয়ে আমি আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’