প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৩ ১৮:৪৬ পিএম
আপডেট : ১২ জুন ২০২৩ ১৯:৩৪ পিএম
দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান। ছবি : সংগৃহীত
মানহানিকর সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক মোহাম্মদ মোস্তফাকে উকিল নোটিস পাঠানো হয়েছে। নোটিস পাওয়ার দুই দিনের মধ্যে প্রথম আলোর অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সংবাদটি অপসারণ এবং এক সপ্তাহের মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের ঘটনায় শর্তহীনভাবে লিখিত ক্ষমা চাইতেও বলা হয়েছে নোটিসে। অন্যথায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
শনিবার (১০ জুন) পত্রিকাটিকে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোরাক রিয়াল এস্টেট লিমিটেড ও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহা. নূর আলীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আবু তালেব।
‘সরকারি জমিতে পাঁচ তারকা হোটেল’ শিরোনামে ১ জুন প্রথম আলো ওই সংবাদ প্রকাশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার উকিল নোটিস পাঠানো হয়।
নোটিসে বলা হয়, ’সরকারি জমিতে পাঁচ তারকা হোটেল’ শিরোনামে প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদটি সম্পূর্ণ ভুল ও মিথ্যা তথ্যে লেখা। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দেশে-বিদেশে মোহা. নূর আলী ও তার প্রতিষ্ঠানের সুখ্যাতি বিনষ্ট করার অসৎ উদ্দেশ্যে প্রথম আলো সংবাদটি প্রকাশ করেছে।
২০০৬ সালের ৭ মে রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের ৪৪ নম্বর প্লটে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের চুক্তি হয় ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) ও বোরাক রিয়াল এস্টেট লিমিটেডের মধ্যে। চুক্তি অনুযায়ী সরকারি নিয়ম ও বিধি মেনে সেখানে হোটেল শেরাটন ভবন নির্মাণ করে বোরাক রিয়াল এস্টেট লিমিটেড। প্রকল্পটি বোরাক রিয়েল এস্টেট ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের যৌথ মালিকানাধীন প্রকল্প বলে বলা হয়।
শেরাটন হোটেল নির্মাণে ২০০৭ সালের ২৫ জুন ঢাকা সিটি করপোরেশনের তৎকালীন অথরাইজড অফিসার কর্তৃক (প্রধান প্রকৌশলী) ৩০ তলা ভবনের নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২০০৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বুয়েট কর্তৃক ৩০ তলা ভবনের স্ট্রাকচারাল নকশা ভেটিংসাপেক্ষে ভবনটি নির্মিত হয়েছে।
এরপর ২০০৭ সালে সিটি করপোরেশন কর্তৃক বিভিন্ন সংস্থা থেকে ৩০ তলার ছাড়পত্র গ্রহণ করা হয় (সিটি করপোরেশন, ডিএমপি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, তিতাস, পরিবেশ অধিদপ্তর, ডেসকো, ঢাকা ওয়াসা ইত্যাদি)। সিটি করপোরেশনের আরএফপি অনুসারে ৬০ কাঠা জমির ওপরই ভবন নির্মাণের জন্য ২০০৪ সালের ১০ এপ্রিল দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল।
এরপর ২০১১ সালের ২৭ নভেম্বর ডিএনসিসির তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ১৫ থেকে ৩০ তলা ভবন নির্মাণের বিষয়টি মেয়র কর্তৃক অনুমোদন হয়েছে মর্মে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার সচিবকে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করে। সে সময় মেয়র প্রয়াত আনিসুল হক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং বোরাক রিয়েল এস্টেটকে ২০১৫ সালের ৩১ মে লিখিতভাবে অবহিত করেন বলে উল্লেখ করা হয়।
বোরাক রিয়েল এস্টেট দাবি করেছে, তারা তাদের প্রাপ্য শেয়ারের নিজ জায়গায় হোটেলটি স্থাপন করেছে, যা ১২-২৮ তলা পর্যন্ত অবিস্থত। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অংশ সংরক্ষিত রয়েছে, যা ৪-১১ তলা পর্যন্ত অবস্থিত। ডিএনসিসি এই সংরক্ষিত প্রাপ্য অংশ যেকোনো সময় বুঝে নিতে পারে।
এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রকল্পটির ১৫ থেকে ২৮ তলার শেয়ার বণ্টন প্রক্রিয়াটি দুই পক্ষের মধ্যে ইতোমধ্যে মেয়রের সভাপতিত্বে ডিএনসিসির বোর্ডসভায় তাদের অনুকূলে ৩০ শতাংশের পরিবর্তে ৪০ শতাংশ শেয়ার অনুমোদিত হয়েছে।
১৪ তলা পর্যন্ত শেয়ার বণ্টন নিয়ে কোনো দিনই কোনো প্রশ্ন ছিল না। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উক্ত সিদ্ধান্ত চিঠির মাধ্যমে ২০২৩ সালের ২ মার্চ স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে জানিয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন তাদের প্রাপ্য ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ৪ থেকে ১১ তলা পর্যন্ত তাদের প্রাপ্য অংশ যেকোনো সময় বুঝে নিতে পারে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ইউনিক গ্রুপ।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আবু তালেবের পাঠানো উকিল নোটিসে বলা হয়, বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেড দেশের স্বনামধন্য একটি নির্মাণপ্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় এটি অগ্রপথিক। রাজধানীতে প্রতিষ্ঠানটি প্রচুরসংখ্যক আইকনিক ভবন নির্মাণ করে চলেছে। সবার কাছে এক নামেই এটি পরিচিত।
এ ছাড়া উল্লেখ করা হয়, অন্যদিকে বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহা. নূর আলী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পর্যটন, সিরামিক শিল্প, বিদ্যুৎকেন্দ্র, জনশক্তি রপ্তানি, ব্যাংকিং সেবা, গৃহনির্মাণ খাতে অর্থায়ন ও বিনিয়োগ, ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টসহ আরও নানাবিধ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত আছেন। নূর আলী দেশের স্বনামধন্য ইউনিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যান। তিনি একমাত্র বাংলাদেশি উদ্যোক্তা যিনি বেসরকারি খাতে পাঁচ তারকা হোটেল (দ্যা ওয়েস্টিন ঢাকা) প্রতিষ্ঠায় অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছেন। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে।