বিষক্রিয়ায় ২ ভাইয়ের মৃত্যু
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৩ ১৬:০৯ পিএম
আপডেট : ০৮ জুন ২০২৩ ১৬:৩১ পিএম
পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। প্রবা ফটো
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় প্রয়োগ করা যে ওষুধের বিষক্রিয়ায় স্কুলপড়ুয়া দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে, সে ওষুধ বাসাবাড়িতে ব্যবহারের জন্য নয় বলে জানিয়েছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। এ ছাড়া বসুন্ধরার ওই বাসায় ব্যবহৃত তেলাপোকানাশক রাসায়নিক আইটেম সঠিক অনুপাতে ছিল না বলেই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
পোকামাকড় মারতে বসুন্ধরার ওই বাসায় যে কোম্পানির মাধ্যমে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছিল, সেই পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) সকালে টাঙ্গাইল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
তাদের গ্রেপ্তারের পর দুপুরে রাজধানীর ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘সেই বাসায় যে স্প্রে ব্যবহার করা হয়, সেটা বাসাবাড়িতে ব্যবহারযোগ্য নয়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফেটসমৃদ্ধ এ পেস্টিসাইড বড় গার্মেন্টস, বীজ গুদাম বা অনাবাসিক জায়গাতে ব্যবহার করা হয়। ঘরবাড়িতে এগুলো ব্যবহার করলেও আবাসস্থল ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টা সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হয়।’
ডিবিপ্রধান বলেন, ‘তীব্র দাবদাহে এমনিতেই জনজীবন অতিষ্ঠ। শ্বাসকষ্টসহ নানা রকমের শারীরিক সমস্যাতে কাহিল শিশু ও বৃদ্ধরা। তেলাপোকাসহ অন্যান্য কীটনাশক মানবজীবনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, বিশেষত তীব্র দাবদাহের এ সময়ে বিষয়টি উপলব্ধি করা দরকার ছিল পেস্টিসাইড কোম্পানির কর্মকর্তাদের। কিন্তু অর্থের লোভে কোম্পানির মালিক কর্মচারীরা স্বাস্থ্যঝুঁকির এ বিষয়কে উপলব্ধি না করে এবং পরিবারের সদস্যদের যথাযথ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উপদেশ না দিয়েই আনাড়ি কর্মচারীদের দিয়ে এই কীটনাশক স্প্রে করেছে। যার ফলে দুটি শিশুর জীবন ঝরে যায় অকালে। অসুস্থ হয়ে পড়ে পরিবারের অন্য সদস্যরাও।’
দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গত ২ জুন রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তেলাপোকা মারার স্প্রের বিষক্রিয়ায় এক কিশোর এবং তার ছোট ভাইয়ের অকাল মৃত্যু ঘটে। এ বিষয়ে রাজধানীর ভাটারা থানায় ৫ জুন একটি নিয়মিত মামলা হয়। ঘটনার পর থেকেই মূল আসামি ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিমিটেড কোম্পানির চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান এবং কোম্পানিটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফরহাদুল আমিন গা ঢাকা দেন। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা টের পেয়ে আসামিরা তাদের নিজস্ব গাড়িতে টাঙ্গাইল, নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে থাকেন। সে কারণে তাদের ধরা সম্ভব হচ্ছিল না।’
ডিবিপ্রধান আরও বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য মাঠে নামে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ। ভাটারা থানা পুলিশের সহযোগিতায় আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করে অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সীমান্ত এলাকা থেকে গাড়িসহ তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এই গাড়িতে করেই আসামিরা ক্রমাগত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে বেড়িয়ে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিচ্ছিল।’