× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রেলের ৮৪৮ কোটি টাকার প্রকল্প বেড়ে হলো ২৮৪০ কোটি

রাশেদুল হাসান

প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৩ ১১:০৪ এএম

আপডেট : ৩০ মে ২০২৩ ১৪:০৯ পিএম

টঙ্গী ও জয়দেবপুর সেকশনে ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প। ছবি : সংগৃহীত

টঙ্গী ও জয়দেবপুর সেকশনে ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প। ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ স্থাপনকারী ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ রেললাইন এবং টঙ্গী ও জয়দেবপুর সেকশনে ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ৮৪৮ কোটি টাকা থেকে ২ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ২০১২ সালের নভেম্বরে অনুমোদিত তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্প এখন বাস্তবায়ন হবে ১৫ বছরে। রেলপথ মন্ত্রণালয় এ সংশোধনী প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। সব কিছু ঠিক থাকলে এ প্রস্তাবনা অনুমোদন পেতে পারে আগামী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায়।

প্রস্তাবনায় প্রকল্প পরিচালক নাজনীন আক্তার কেয়া উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র পেতে তুরাগ নদের ওপরের রেলব্রিজের উচ্চতা ২ মিটার ও সমতলে ২০ মিটার বাড়াতে হয়েছে। ৪০ কেজির রেলের জায়গায় ৬০ কেজির রেল বসানো বাবদ খরচ বাড়াতে হচ্ছে। এ ছাড়া সিগন্যালিং কাজের প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে সর্বনিম্ন দরদাতার দর বেড়েছে। প্রসঙ্গত, রেল বলতে লাইনের প্রতিটি পাতকে বোঝায়।

নাজনীন আক্তার কেয়া আরও জানান, সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প ‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পে’র কাজ চলমান থাকায় ঢাকা বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত প্রকল্প সাইট রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হয়নি। জুন ২০২৪-এর মধ্যে রেলওয়ের সাইট হস্তান্তর হলে সিগন্যালিংসহ কাজ ডিসেম্বর ২০২৫-এ শেষ হবে। এরপর এক বছরের ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড ডিসেম্বর ২০২৬ নাগাদ সমাপ্ত হবে।

সূত্র জানায়, অপচয়ের পাশাপাশি মেয়াদ বাড়ায় প্রকল্প কর্মকর্তাদের বেতন ও সম্মানী, পরামর্শক ব্যয়, ভূমি অধিগ্রহণ, অফিস সরঞ্জামাদি ও ডলার বিনিময় হার সবই বেড়েছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ রেল প্রকল্পের ব্যয় ও সময় অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার মূল কারণ ভুল পরিকল্পনা ও অব্যবস্থাপনা। 

রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে দুই লাইনের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে দিনে মোট ১১২টি এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ৪৪টি ট্রেন চলাচল করছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অল্প। প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে, যাতে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ২৫০টি এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ৯০টি ট্রেন চলাচল করতে পারে। লাইনটি রিজিওনাল ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অংশ।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, প্রস্তাবটি অনুমোদনের সময় প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ১ জুলাই ২০১২ থেকে ৩০ জুলাই ২০১৫ সাল। আর বাজেট ছিল মোট ৮৪৮ কোটি টাকা, যা মেটানো হবে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ও এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ঋণে। এরপর প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত বাড়ানো হয়, আর ১৫৭ শতাংশ বাড়িয়ে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ১০৬ কোটি টাকা। এরপর ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে আরও দুবার সময় বাড়িয়ে এ বছরের জুনে শেষ করার কথা।

প্রকল্প কর্তৃপক্ষের দাবি, এখন প্রকল্পে অগ্রগতি প্রায় ৬৯ শতাংশ, কিন্তু কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত কোনো উন্নয়নকাজ হয়নি। শুধু টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর ১১ কিলোমিটার রেললাইনের উদ্বোধন করা হয়েছে। এটুকই সুবিধা যাত্রীরা পাচ্ছে।

ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে যাওয়া ট্রেনের যাত্রা সময় ২০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা হ্রাস করার লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় ১১৬ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার কথা।

প্রকল্প পরিচালক জানান, মূল প্রকল্প অনুমোদনের সময় রেললাইন, ব্রিজ সিগন্যালিং সুবিধাদির বিস্তারিত ডিজাইন প্রণয়ন করা হয়নি। বিস্তারিত ডিজাইন প্রণয়নের লক্ষ্যে পরামর্শক সেবার সংস্থান রেখে প্রকল্প আরম্ভের দুই বছর পর প্রথম সংশোধনী অনুমোদন করা হয়। এরপর প্রথম সংশোধিত প্রকল্পের আওতায় পরামর্শক নিয়োগ করে নকশা ও বিস্তারিত ক্রয়পদ্ধতি চূড়ান্ত করে দরপত্র আহ্বান করতে প্রায় পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হয়। পরামর্শক সিগন্যালিং কাজের জন্য ডিটেইল্ড ডিজাইনের জন্য ১২ জুন ২০২১ তারিখে পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হলে উদ্ধৃত সর্বনিম্ন দর ৬৪৯ কোটি ৫৪ কোটি টাকা, যা প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে ২৫১ কোটি টাকা বেশি। এছাড়া নির্মাণকাজের পরিমাণ বৃদ্ধির ব্যয় সমন্বয় করার জন্য ৫ শতাংশ ব্যয় রাখা হয়েছে। ফলে প্রথম সংশোধিত ডিপিপির তুলনায় সিগন্যালিং কাজের ব্যয় ১২৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

তিনি জানান, বিআইডব্লিউটিএর চাহিদানুসারে টঙ্গীর তুরাগ রেল সেতুর ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ন্যূনতম ২ মিটার বৃদ্ধি এবং ১টি স্প্যানের হরাইজন্টাল ক্লিয়ারেন্স ২০ মিটার থেকে বৃদ্ধি করে ৪০ মিটার করা হয়েছে। এছাড়া মূল প্রকল্প প্রস্তাবে ৪০ কেজির ‘এ’ রেল দিয়ে রেললাইন নির্মাণ করার কথা ছিল। এখন প্রকল্পের ১১৬ কিলোমিটার রেললাইনের ৬৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ লাইন ৬০ কেজি রেল দ্বারা নতুন করে নির্মাণ করা হবে, আর ৪০ কেজির রেলের বদলে ৬০ কেজি রেল দ্বারা বিদ্যমান ১০ দশমিক ১৩ কিমি রেলপথ পুনর্নির্মাণ করা হবে।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান জানান, রেলওয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতার অভাব, অব্যবস্থাপনা ও ভুল পরিকল্পনার কারণেই ব্যয় ও সময় বাড়ছে। একটি প্রকল্পের কাজ যখন বছরের পর বছর পিছিয়ে যায়, তখন ঠিকাদার ও পরামর্শদাতা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ ও দেশের মানুষ। যেখানে রেলওয়ের মাস্টারপ্ল্যানে বলা আছেÑ রেলের গতি বাড়ানোর জন্য লাইনে ৬০ কেজির রেল বসাতে হবে, সেখানে যদি ১০ কিলোমিটারে ৪০ কেজির রেল বসিয়ে আবার বদল করতে হয়, তবে তা অপচয়ের উদাহরণ।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা