প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৩ ২০:১৯ পিএম
আপডেট : ২৯ মে ২০২৩ ২১:৫৮ পিএম
সিরডাপ মিলনায়তনে ‘মাধ্যমিক স্তরে পাঠ্যক্রমে দ্বন্দ্ব সংবেদনশীলতা ও মানবাধিকার শিক্ষা : সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনার হয়েছে। প্রবা ফটো
পাঠ্যবইয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী ও সংখ্যালঘুদের অবদানের তথ্য বিস্তারিত তুলে ধরা হয়নি। এ ছাড়া পৌরনীতিতে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে আলোচনা করা হলেও কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তা উন্নত হবে, সে বিষয়ে নজর দেওয়া হয়নি। ‘সংখ্যালঘুর অধিকার প্রতিষ্ঠা’ বিষয়ের আলোচনায় শুধুমাত্র পার্বত্য তিন জেলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
সোমবার (২৯ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘মাধ্যমিক স্তরে পাঠ্যক্রমে দ্বন্দ্ব সংবেদনশীলতা ও মানবাধিকার শিক্ষা : সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। নেট্জ পার্টনারশিপর ফর ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড জাস্টিস এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
৬ষ্ঠ থেকে ১০ শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি, পৌরনীতি (৯ম – ১০ম শ্রেণি) ও ধর্ম বই পর্যালোচনা করে গত বছরে এ গবেষণা করা হয়। পরে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। তাই এ দুই শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের তথ্য-উপাত্ত এখানে উপস্থাপন করা হয়নি।
গবেষণায় দেখা যায়, ইংরেজি পাঠ্যবইয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিদের উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে পুরুষ চরিত্র অগ্রাধিকার পেয়েছে। অন্যদিকে মা দিবসে মায়েদের ভূমিকাকে মাহমান্বিত করা হয়েছে। কিন্তু বাবা দিবসে সংসারে বাবার গুরুত্ব ও অবদান উল্লেখযোগ্য হিসেবে উপস্থাপন পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া একটি লাইন যেমন ‘ঐ অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষা- দীক্ষা এবং অন্যান্য সামাজিক, সাংষ্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উন্নয়নের মধ্য দিয়ে তারা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে যোগ্য মর্যাদা অর্জন করতে পারছে’ এ ধরনের উক্তি মানবিক মর্যাদার ধারণার সঙ্গে একেবারেই অসঙ্গতিপূর্ণ।
গবেষক সোহরাহ উদ্দিন বলেন, শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ সব বিষয়ে তাদের নিজেদের ধারণা ও জ্ঞান এতই সীমিত যে, তারা ‘নারীশিক্ষা, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে’ শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট ধারণা দিতে পারেন না। তাদের কাছে তেমন কোনো শিক্ষা উপকরণও পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, ৮ম -১০ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে কোনো একটি শ্রেণিতে বাংলাদেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা, মুক্তিযুদ্ধে নারী ও সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর আবদান বিস্তারিতভাবে সংযোজন করা প্রয়াজন। পাশাপাশি শিক্ষকদেরকেও মানবাধিকার ও দ্বন্দ্ব সংবেদনশীলতা বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা রাখেন কি-না তা চিহ্নিত করতে হবে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিক্ষাদানের মধ্য দিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কেউ নিগৃহীত হচ্ছে কিনা সেটি দেখা দরকার। অধিকার, মানবাধিকার বিষয়ে সবাইকে জানাতে হবে। শুধুমাত্র শিক্ষা উপকরণ নয়, শিক্ষা উপদানেও মানবাধিকারের বিষয়টি প্রতিফলিত হচ্ছে কিনা সেটি দেখতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সস্টিটিউটের প্রভাষক ড. শিল্পী রানী সাহা বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ে আমরা যে পদ্ধতি ও বিষয়ই যুক্ত করি না কেন, তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কীভাবে কথা বলছি, কতটা সম্মান করে কথা বলছি, কোন ভাষা প্রয়োগ করছি সেটি গুরুত্বপূর্ণ।’
জাতীয় শিক্ষাত্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক সন্তোষ কুমার ঢালী বলেন, এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী গবেষণা। প্রতিবেদনের সুপারিশমালা বিচার বিশ্লেষণ করে পাঠ্যপুস্তকের পরবর্তী সংস্করণে প্র্রয়োজনীয় পরিমার্জন ও সংশোধন করা হবে বলে তিনি জানান।
গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন গবেষক সোহরাহ উদ্দিন ও নেটজের প্রোগ্রাম ম্যানেজার আফসানা বিনতে আমিন।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এ এন রাশেদা, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও গণ সাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক তপন কুমার দাস। সেমিনার পরিচালনা করেন, নেটজ্ বাংলাদেশের পরিচালক শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।