প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ মে ২০২৩ ২২:০৯ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছে সাইবার অপরাধ। বুলিং কমলেও সাইবার অপরাধের বেশি শিকার হচ্ছে নারী ও শিশুরা। বেড়েছে আর্থিক প্রতারণা। ২০২৩ সালের জরিপে ভুক্তভোগীদের ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশের বয়সই ১৮ বছরের নিচে, যা ২০১৮ সালের জরিপের তুলনায় ১৪০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি অপপ্রচারের শিকার হয় শিশুরা। বয়সভিত্তিক অপরাধের ধরনে ভুক্তভোগীদের মধ্যে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা এ ধরনের অপরাধের শিকার সবচেয়ে বেশি, যা প্রায় ১২ শতাংশের ওপর। ২০১৮ সালে পাঁচটি জরিপে সাইবার অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ জানানোর প্রবণতা কমেছে। ২০১৮ সালে ছিল ৬১ শতাংশ, যা নেমে হয়েছে ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। শনিবার (২০ মে) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ সাইবার অপরাধপ্রবণতা-২০২৩’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিক্যাফ) এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালে ভুক্তভোগীদের ১৪ দশমিক ৬৪ শতাংশই অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আইডি হ্যাকড হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২৫ দশমিক ১৮ শতাংশই নারী।
অনুষ্ঠানে শুরুতেই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিক্যাফের গবেষণা সহকারী স্বর্ণা সাহা। প্রতিবেদন উঠে এসেছে লিঙ্গভিত্তিক তুলনামূলক পরিসংখ্যানে নারীরাই সাইবার অপরাধের শিকার সবচেয়ে বেশি (৫৯ দশমিক ৭৩) হচ্ছেন। ভুক্তভোগীদের ৫৫ শতাংশই বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক আইন সম্পর্কে জানেন না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেছেন, তার ফলাফল উদ্বেগজনক। জরিপে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী অভিযোগকারীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ার অন্যতম কারণ- ভুক্তভোগীদের সিংহভাগই জানে না কীভাবে আইনি ব্যবস্থা নিতে হয়। অনেকে হয়রানির ভয়ে থাকে।
আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরও সন্তুষ্ট নন ৮০ শতাংশ ভুক্তভোগী। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী যেসব ভুক্তভোগী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেছেন, তাদের ৮০ শতাংশই অভিযোগের পর আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় অসন্তুষ্ট। তবে ২০২২ সালের জরিপে আগের বছরের তুলনায় বেশ উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। অবশ্য সেই বছরের জরিপে ৩৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ ভুক্তভোগীই এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি। বিপরীতে এবারের জরিপে সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির বিষয়ে মন্তব্য না করার হার ছিল ৪ দশমিক ৪৫।
প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষণা কর্মকর্তা নাহিয়ান রেজা সাবরিয়েত বলেন, সাইবার নিরাপত্তা বাড়াতে সবাই মিলে কাজ করতে হবে। নতুন নতুন মাধ্যম ব্যবহার করে সাইবার জগতে অপরাধ বাড়ছে। গবেষণার মাধ্যমেই সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা-বিষয়ক জাতীয় কমিটির সদস্য মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘নিজেদের নয়, আমরা অজানা জায়গা থেকে আসা প্রযুক্তি ব্যবহার করি। এ ছাড়া সাইবার জগৎ পুরোটাই ধোঁয়াশায় পূর্ণ। নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের সলিউশনগুলো নিজেদেরই তৈরি করতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাশেদা রওনক খান বলেন, ভুক্তভোগীদের মধ্যে পুলিশের সহায়তা না নেওয়ার হার বিপজ্জনক। এর পেছনে রয়েছে ভুক্তভোগীদের প্রমাণ হাজিরের প্রক্রিয়াগত জটিলতা। এ জটিলতা দূর করতে না পারলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
সম্মেলনে বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।