× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রাজধানীর সড়কে নৈরাজ্য

যন্ত্র তাদের গলার মালা

রাশেদুল হাসান ও মো. শাহজাহান

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:৪০ পিএম

আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:৪১ পিএম

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

রাজধানীর পাবলিক বাসে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হয় পজ মেশিন ব্যবহার করে। তবে মালিকদের সঙ্গে চালক-হেলপারদের লেনদেন হয় চুক্তিতে। পজ মেশিন ব্যবহার করে টিকিট বিক্রির সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এতে করে বিভিন্ন বাসের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়ে। সড়কে দেখা যায় নৈরাজ্যের চিত্র।

চালক-হেলপাররা বলছেন, শুধু যাত্রীদের দেখানোর জন্য এই মেশিন তাদের গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছেন বাসমালিকরা। আর সব সময় যে এটি ব্যবহার করেই ভাড়া আদায় করা হয়, এমন নয়। বিশেষ করে কোনো যাত্রী ভাড়া নিয়ে তর্ক করলে তাকে এই মেশিন থেকে টিকিট দেওয়া হয়। 

প্রতিদিনের বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্প্রতি এ নিয়ে অন্তত ৩০টি বাসের চালক ও হেলপারের সঙ্গে কথা হয়। আলাপকালে চুক্তির নিয়ম সম্পর্কে জানান সেফটি-৩৬ এন্টারপ্রাইজ, বিহঙ্গ, শিকড়, বসুমতি ও নুরে মক্কাসহ বিভিন্ন বাসের চালকরা।

মিরপুর-১২-আজিমপুর রুটে চলে সেফটি-৩৬ এন্টারপ্রাইজ। এই প্রতিষ্ঠানের বাসে দুই যুগ ধরে চালক হিসেবে কাজ করছেন এমদাদুল হক (৫৭)। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘মহাজনরা বলেন, যাত্রীদের টিকিট দিয়ে ভাড়া নিতে। আর আমাদের গাড়ি দেন চুক্তিতে। টার্গেটে চলতে হয় আমাদের। এসব টিকিট শুধু শো। কোনো কাজের না।’

চুক্তি অনুযায়ী কী শর্তে মহাজনদের কাছ থেকে গাড়ি নেন? এমন প্রশ্নে এমদাদুল হক বলেন, ‘যাওয়া-আসা নিয়ে একটি ট্রিপ বলি আমরা। প্রতিদিন তিন থেকে চারটি ট্রিপ চালাই। চার ট্রিপে রাত ১২-১টা বেজে যায়। প্রতি ট্রিপে আমাদের খরচ হয় মোট ১৯৫০ টাকা। এর মধ্যে ডিজেলে যায় ১১শ টাকা। মহাজনকে দিতে হয় ৫৫০ টাকা। রাস্তায় কয়েক জায়গায় চাঁদা, সিটি করপোরেশন, চেকার আর আমাদের নাশতাসহ খরচ হয় ৩০০ টাকা।’

এক ট্রিপে ভাড়া কত উঠে? এমন প্রশ্নে এমদাদুল বলেন, এটা যাত্রী ও রাস্তার ওপর নির্ভর করে। ছুটির দিন অনেক মন্দা যায়। অন্য সময় গড়ে ২২শ থেকে আড়াই হাজার। কখনও ভাগ্য ভালো থাকলে তিন হাজারও পাওয়া যায়। এক ট্রিপ খারাপ হলে পরেরটায় সেটি পুষিয়ে নিতে হয়। নাহলে নিজের পকেট থেকে মহাজনকে দিতে হয়। 

চালক ও হেলপাররা প্রতিদিন কত পান? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সব দিয়ে যা থাকে তার তিন ভাগ পান চালক। বাকিটা পান হেলপার। চালকরা গড়ে এক হাজার অথবা ১২শ করে পান। আবার অনেক সময় ৭০০ বা ৮০০ টাকাও পান। হেলপারদের ভাগে পড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।

গাবতলী-গাজীপুর চৌরাস্তা রুটে চলাচল করে বসুমতি বাস। এ পরিবহন একটি গাড়ির হেলপার জানান, রোজায় খুব মন্দা গেছে তাদের। এমনও দিন গেছে যে, মালিককে নিজের পকেট থেকে টাকা দিতে হয়েছে তাদের।

পজ মেশিন বা ই-টিকিটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা দিয়ে আমাদের কোনো কাজ নেই। আমরা চলি চুক্তিতে। মালিক আমাদের সাড়ে তিন হাজার টাকার চুক্তিতে বাস দেন। তেল খরচ আমাদের। দুই ট্রিপে সাড়ে চার হাজার টাকার তেল লাগে। দিনে দুই বা আড়াই ট্রিপ হয়। অনেক সময় তিন ট্রিপও চালানো যায়। তখন মালিককে আরও বাড়িয়ে দিতে হয়। আবার দৈনিক লাইনম্যান, চাঁদা ও আমাদের খরচ বাবদ লাগে দেড় হাজার টাকা। সব দিয়ে যা থাকে তিন ভাগ ড্রাইভার আর এক ভাগ পায় হেলপার।’

শিকড় পরিবহনের একজন চালক বলেন, চুক্তিতে গাড়ি নিলে আমাদের ওপর অনেক চাপ থাকে। হুড়োহুড়ি বেড়ে যায়। সবাই আগে যেতে চায়, যেন যাত্রী বেশি পাওয়া যায়। এই প্রতিযোগিতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।

এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পজ মেশিন ব্যবস্থার সুফল পেতে হলে দিন চুক্তিতে বাস ভাড়া দেওয়ার পদ্ধতি বন্ধ করা দরকার। দিন চুক্তির বদলে টিকিট বিক্রির লাভের ভিত্তিতে একটি সমন্বিত ব্যবস্থা দাঁড় করানো না গেলে এ পদ্ধতি কার্যকর হবে না। আর দিন চুক্তি বাতিল করলে পজ মেশিনে ভাড়া আদায় পদ্ধতি কার্যকর হবে। পরিবহন শ্রমিকরাও জবাবদিহির আওতায় আসবে।

চুক্তিতে বাস দেওয়ার বিষয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহর। তিনি বলেন, ‘এই সংস্কৃতিটা আমরা ভাঙতে চাচ্ছি। আমরা ই-টিকিট চালুর ব্যবস্থা করছি। এটা রাতারাতি করা সম্ভব না। পাঁচ হাজার গাড়ি নিয়ন্ত্রণে আনা কষ্টকর।’

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক সামদানী খন্দকার বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য পজ মেশিন ব্যবহার চালু করা। তবে পরবর্তী ধাপে এটিও (দিন চুক্তিতে বাস ভাড়া দেওয়া) বন্ধ করার চেষ্টা করব।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা