× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেটে আগুন

ক্ষতিগ্রস্তদের এবারের ঈদ শুধুই বিষাদের

শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:৩২ পিএম

আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:৫৩ পিএম

প্রখর রোদের মধ্যে পোড়া বঙ্গবাজারের খোলা জায়গায় চৌকি বসিয়ে ব্যবসায়ীরা বসেছেন পণ্য নিয়ে।

প্রখর রোদের মধ্যে পোড়া বঙ্গবাজারের খোলা জায়গায় চৌকি বসিয়ে ব্যবসায়ীরা বসেছেন পণ্য নিয়ে।

দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। এবার ঈদের আগে রাজধানীর বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এসব আগুনে যেন দোকান নয়, পুড়ে গেছে ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন। ওদিকে নিউ সুপার মার্কেটের বাতাসে এখনও পোড়া গন্ধ। মার্কেটজুড়ে আগুনের দগদগে ক্ষত স্পষ্ট। তার মধ্যেই শেষ সম্বল আঁকড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। 

রাজধানীর বঙ্গবাজারের আগুনের ক্ষত না শুকাতেই আগুন লাগে নিউ মার্কেট এলাকার নিউ সুপার মার্কেটে। ঈদের আগে দোকান হারিয়ে চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন দুই মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। কারও মুখে হাসি নেই। বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা এখন খোলা আকাশের নিচে অস্থায়ী দোকান পেতে বসছেন। আর নিউ সুপার মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা চেষ্টা করছেন, শেষ সম্বলটুকু নিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর। 


নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড। ফাইল ফটো


বঙ্গবাজারের প্রধান সড়কের পাশেই ইমরান গার্মেন্টস। শিশুদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক পাইকারি বিক্রি করত প্রতিষ্ঠানটি। দোকানের ম্যানেজার পিন্টু বলেন, আমরা সবসময় পাইকারি বিক্রি করতাম। অন্যান্য ঈদে এদিনে কারও সঙ্গে কথা বলার ফুরসত থাকত না। এখন অলস সময় পার করছি। একসময় দোকানে কত সুন্দর ডেকোরেশন ছিল, এসি ছিল। এখন রোদে পুড়ছি। পাইকারি বিক্রেতা থেকে খুচরা বিক্রেতা হয়ে গেছি। আগে লাভ করেছি। আর এখন লস দিয়ে হলেও মালামাল বিক্রি করছি সংসার চালাতে। যা বিক্রি হচ্ছে তাতে টিকে থাকা মুশকিল। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের চিন্তা করি কখন। 

একই দোকানের বিক্রয়কর্মী রাজিব জানান, ১৬ বছর ধরে এখানে কাজ করছেন তিনি। প্রতি ঈদে পার্টি বোনাস পান ৩০ হাজার টাকা। এ ছাড়া মালিকের বোনাস ডাবল। অর্থাৎ কেউ যদি বেতন পায় ২০ হাজার টাকা, তার বোনাস হয় ৪০ হাজার টাকা। 

তিনি আফসোস করে বলেন, কিছুই কিনিনি। মালিকের কাছে ২ হাজার টাকা চেয়েছি। এখনও পাইনি। এবারের ঈদের মতো অসহায় কখনও লাগেনি। 

ইমরান গার্মেন্টসের ম্যানেজার ও স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের মালিকের ১০টি দোকান ছিল। গত বছর এই সময়ে দিনে বিক্রির পরিমাণ ছিল গড়ে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। আর এখন অস্থায়ী চৌকিতে এটি ১০ থেকে ১৫ হাজারে নেমেছে। 

বঙ্গবাজারের আদর্শ মার্কেটের ১ নম্বর গলির ৬২ নম্বর দোকান রাজীব গার্মেন্টসের মালিক নোমান শরীফ। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, পুঁজির অভাবে অনেক ব্যবসায়ী চৌকিতে দোকান বসাতে পারেননি। তাদের মধ্যে তিনিও একজন। সেদিনের আগুনে এক পিস আইটেমও বের করতে পারেননি তিনি। চোখের সামনেই সব পুড়ে অঙ্গার। বললেন, ঈদে সেমাই-চিনি কেনা তো দূরের কথা; ঘরে খাবার কেনার টাকা নেই। দুই বছরের একটা ছেলে আছে। তাকে এখনও একটা গেঞ্জি পর্যন্ত কিনে দিতে পারেননি। 

বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড। ফাইল ফটো


নোমান শরীফ বলেন, বিক্রয়কর্মীরা তো এক মাসের বেতন আর বোনাস হারিয়েছে। কিন্তু আমরা তো পথে নেমে গেছি। কী খাব? ঈদের পর কীভাবে চলব? ঈদের পর এসে দেখব, জায়গাটা সিটি করপোরেশন ব্যারিকেড দিয়ে রাখছে। ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তখন কই যাব? 

নোমান শরীফের মতো অবস্থা এখানকার আরও অনেক ব্যবসায়ীর। পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব তারা। এত বছর যারা পোশাক বিক্রি করে ঈদে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতেন, এবার নিজের পরিবারের সদস্যদের ছোট্ট আবদারটুকুও রাখতে পারছেন না তাদের অনেকে। 

গতকাল সরেজমিন বঙ্গবাজারে দেখা যায়, ক্রেতাসমাগম খুবই কম। কেউ কেউ দুই-একজন ক্রেতাকে চৌকিতে ডেকে নিয়ে মালামাল বিক্রির চেষ্টা করছেন। কেউ বসে অতীত স্মৃতি রোমন্থন করছেন। অনেক চৌকি খালি পড়ে আছে। 

বঙ্গবাজারের ২১৯০ নম্বর দোকান জহির গার্মেন্টসের মালিক জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগে এই সময়ে দিনে দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকার মালামাল বিক্রি হতো। এখন সেটি পাঁচ থেকে ছয় হাজারে ঠেকেছে। আগুনের খবর শুনে এসে দোকান থেকে কিছু বের করতে পারিনি। শূন্যহাতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। কোনো সহায়তা পাইনি। 

সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলোর কর্মচারীদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে অনেক কর্মচারীর অভিযোগ, এমন কোনো অর্থ তারা পাননি। ইমরান গার্মেন্টসের স্টাফ রাজীব জানান, তার মালিকের ১০ দোকানে ২৬ জন কর্মচারী। তাদের কেউ এই অর্থ পায়নি। 

পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারে ছাতা মাথায় অস্থায়ী দোকান পেতে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। ফাইল ফটো

জান্নাত অ্যান্ড জিম ফ্যাশনের কর্মচারী জুবায়ের বলেন, রোদের কারণে দোকানে বসতে কষ্ট হয়। দুই দিন ধরে একটু বাতাস থাকায় কিছুটা স্বস্তি মিলছে। অগ্নিকাণ্ডের আগে প্রতিদিন গড়ে দেড়-দুই লাখ টাকার বিক্রি হতো। এখন ২০ হাজার বিক্রি করতে কষ্ট হয়ে যায়। চক্ষুলজ্জায় মালিকের কাছে টাকা চাই না। মনে করছিলাম, সরকারের তরফ থেকে দেওয়া ২৫ হাজার টাকা পাব। কিন্তু নাম দেওয়ার পরও টাকা পাইনি। 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, যাদের নাম দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে ১৫ ভাগ মানুষ সহায়তা পেয়েছে। বাকিরা পায়নি। সরকারের দেওয়া ২৫ হাজার টাকার সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন বিসমিল্লাহ গার্মেন্টসের আল আমিন, লামিয়া গ্যালারীর শেখ ফরিদসহ অনেকে। আল আমিন বলেন, এনেক্স টাওয়ারের নিচের কর্মচারীরা এই তহবিল পেয়েছে। কিন্তু তাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। অথচ যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা টাকা পায়নি। 

রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও প্রতিবছর ঈদের মৌসুমে ব্যস্ত সময় পার করতেন। ক্রেতাদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হতো তাদের। আগুনে পুড়ে যাওয়ায় এবার সেখানেও দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। গত বুধবার থেকে মার্কেটের নিচ ও দ্বিতীয় তলা খুলে দেওয়া হয়। গতকাল মার্কেটের তৃতীয় তলাও খুলে দেওয়া হয়েছে। এদিন আগের দুই দিনের তুলনায় ক্রেতাদের কিছুটা ভিড় দেখা গেছে। তবে তৃতীয় তলায় এখনও অনেক দোকান খোলা হয়নি। 

মার্কেটে ঢুকতেই পোড়া গন্ধ পাওয়া যায়। তার মধ্যেই আবারও নতুন দিনের স্বপ্ন বুনছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। সুরমা গার্মেন্টসের মালিকের ভাই আনোয়ার হোসেন বলেন, তার দোকানে আগুনে বেশি না পুড়লেও মালামাল ভিজে গেছে। কিছু চুরি হয়ে গেছে। বিক্রি তেমন হচ্ছে না; যা হচ্ছে তা দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। 

নিউ সুপার মার্কেটে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত এক ব্যবসায়ীর আহাজারি। ফাইল ফটো

তৃতীয় তলায় ক্রেজি এইড নামের একটি দোকানের স্টাফ জসিম বলেন, ‘অন্যবার এ সময় কথা বলার সুযোগ পেতাম না। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চার-পাঁচ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হতো। সেখানে আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে মাত্র ২০ হাজার টাকার। আমাদের প্রায় ২৫ লাখ টাকার মালামাল পুড়েছে। মালিকের মুখের দিকে তাকানো যায় না। এই অবস্থায় বেতন-বোনাস চাই কীভাবে?’ 

লিংকিং পার্ক নামের একটি দোকানের মালিক জানান, তার দোকানের মালপত্র সব পুড়ে গেছে। নগদ টাকা, মালামাল কিছুই নেই। এমন পরিস্থিতিতে অনুদান ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। 

ফেসবুক নামে একটি দোকানের বিক্রয়কর্মী রবিন জানান, গোডাউনে কিছু মালামাল ছিল। বুধবার রাতে সেগুলো ডিসপ্লে করেছি। বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যুৎ দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বিক্রি নেই। ঈদে কোনো কেনাকাটা করিনি। গ্রামেও যাওয়া হবে না। এই পরিস্থিতিতে মালিককেও টাকার জন্য চাপ দেওয়া যায় না।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা