সৈয়দ ঋয়াদ
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:১৬ পিএম
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:৫০ পিএম
পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারে ছাতা মাথায় অস্থায়ী দোকান পেতে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। প্রবা ফটো
‘মার্কেট তো আগুনে পুড়ে সব শেষ হইয়া গেছে, এখন খোলা মাডে আমগো শইলডা (আমাদের শরীর) পুইড়া শেষ হইতাছে, নিচে বালুর গরম ওপরে রইদ (রোদ), তার মধ্যে নাই কোনো বেচাকেনা। বেশি কাস্টমারও আসে না। আল্লাহ জানে কপালে কী আছে!’ এভাবেই অসহায়ত্ব প্রকাশ করছিলেন বঙ্গবাজারে পুড়ে যাওয়া কাপড়ের দোকান ‘মায়ের দোয়া’ গার্মেন্টসের কর্মচারী মো. ইব্রাহিম।
ইব্রাহিম জানান, এখানে দোকানদারি করা মানে একপ্রকার হয়রানি। কোনো বেচাকেনা নেই। সকাল ৮টায় দোকান খুলেছেন অথচ বিকাল ৪টা পর্যন্ত মাত্র ৫০০ টাকা বিক্রি করেছেন। সেটাও বলতে গেলে কেনা দামে। যে জামা পাইকারিতে তারা ৫০০ টাকা করে কিনে আনেন সেই জামা খুচরা কাস্টমার ৩০০ টাকা বলে চলে যায়। মালিক কী নেবেন আর তাকে কী দেবেন বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
৪ এপ্রিলের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ পাইকারি ও খুচরা কাপড়ের মার্কেট বঙ্গবাজারের অন্তত ৫ হাজার দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পথে বসেছেন অনেক ব্যবসায়ী। চাকরি হারিয়েছেন দোকানগুলোর ২০ থেকে ২৫ হাজার কর্মচারী। এ অবস্থায় পুড়ে যাওয়া মার্কেটের খোলা মাঠেই ১২ এপ্রিল থেকে কাপড় নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ। তবে খালি মাঠে রোদের মধ্যে বড় ব্যবসায়ীদের অনেকেই বসেননি।
করোনার আগে বঙ্গবাজারে ‘বাবা মায়ের দোয়া’ নামে নতুন দোকান নিয়েছিলেন মোহসিন। করোনার ধাক্কায় একবার অর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন, সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই এবারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তাকে নিঃস্ব হতে হয়েছে। গত ১০-১২ বছরের জমানো টাকার সব শেষ হয়ে গেছে এই খুদে উদ্যোক্তার। তার পরও নতুন করে বেঁচে থাকার তাগিদে আবারও দোকান নিয়ে বসেছেন তিনি।
মোহসিন বলেন, ‘সবাই খালি আশ্বাস দেয়, নাম-পরিচয় লেইখ্যা নিয়া যায়, কেউ কিছু দেয় না। টিভিতে দেখি অমুক এটা পাইছে, তমুক ওটা পাইছে কিন্তু আমি এখন পর্যন্ত ১০ কেজি চালের একটি বস্তা ছাড়া কিছুই পাই নাই। শুনতেছি ফান্ডে কোটি কোটি টাকা জমা পড়ছে, আমরা এসব টাকা কি পাব? সব তো বড় মানুষের পেটে চলে যাবে।’
পুড়ে যাওয়া কাপড়ের দোকান ‘মা বাবার দোয়া’র দোকানি রাসেল জহির বলেন, ‘ভাই অনেক টাকার কাপড় ছিল, সব পুড়ে গেছে। কত টাকার কাপড় পুড়ছে সেইডা বলে লাভ নাই।’
তবে ব্যবসায়ীদের অনেকেরই অভিযোগ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র খোলা মাঠে তেরপল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। এ বিষয়ে জানতে দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের ব্যক্তিগত ফোনে বেশ কয়েকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস করা হলেও উত্তর আসেনি।