প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:১৮ পিএম
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘স্বাধীনতা–সচেতন নাগরিক সমাজ’- এর ব্যানারে মানববন্ধন। প্রবা ফটো
মহান স্বাধীনতা দিবসে দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্মকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও কটাক্ষ করা হয়েছে’ অভিযোগ এনে পত্রিকাটির নিবন্ধন (সার্কুলেশন) বাতিলের দাবি তুলেছে শিক্ষক-শিল্পী ও অভিনেতাদের একাংশ। পাশাপাশি কেউ দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারে লিপ্ত হলে তার সর্বোচ্চ শাস্তি বিধানের জন্য আইন প্রণয়ণের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘স্বাধীনতা –সচেতন নাগরিক সমাজ’- এর ব্যানারে আওয়ামীপন্থি শিক্ষক-শিল্পী ও অভিনেতারা মানববন্ধন করেন। এতে মুক্তিযোদ্ধা ঐক্যমঞ্চ, বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংঘ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, গৌরব-৭১, সম্প্রীতি বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বিচ্ছু বাহিনী, স্লোগান-৭১, জাতীয় ওলামা সমাজের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সংগঠন অংশ নেয়। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে এই মানববন্ধন কর্মসূচির উদ্বোধন হয়।
পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যখন অভাবনীয় উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে তখন নানা ধরনের অপপ্রচার শুরু হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক সরকারের মেয়াদ শেষে আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন যখন আসন্ন, তখন সেই নির্বাচনকে ব্যর্থ করতে নানা ধরনের অপপ্রয়াস ও অপকৌশল চলছে।’
ওই প্রতিবেদনটি ‘বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেও মন্তব্য করেন ঢাবি উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে উসকানি দিতে তারা এই অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। তাই আমরা মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শনে উজ্জ্বীবিত হয়ে শিল্প-সংস্কৃতির মানুষদের নিয়ে সোচ্চার হয়েছি, যা আমাদের মৌলিক দায়িত্ব। আমরা দাবি জানাই, যারা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘ওই প্রতিবেদনকে শুধু অপসাংবাদিকতা বলবো না, একইসঙ্গে এই প্রতিবেদনটি আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপরও আঘাত। সুপরিকল্পিত ওই প্রতিবেদনে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে কটাক্ষ করা হয়েছে, উপহাস করা হয়েছে। একে কী স্বাধীনতা বলে? এ ধরনের স্বাধীনতা দেশের কোনো নাগরিকের থাকা উচিত নয়।’
যারা মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্বীকৃত ইতিহাসকে অস্বীকার বা অবমূল্যায়ন করবে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের জন্য নতুন একটি আইন প্রণয়ণের দাবি জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও দলটির সংস্কৃতি বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতার শত্রুরা বুদবুদের মতো বারবার জেগে উঠে। ২-৩টি পত্রিকা তাদের সঙ্গে এদেশের কিছু বিদগ্ধজন দেশের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করে, গোপনে ক্ষতি করে। তারা কাঁধে পাকিস্তানিদের ভূত নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শেখ হাসিনার সরকার গণতান্ত্রিক ও সহনশীল। অন্যান্য দেশে স্বাধীনতাকে খর্ব করে এমন কিছু করলে পত্রিকা বন্ধ হয়ে যেত।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভুঁইয়া বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধীদের সক্রিয় মুখপাত্র হলো প্রথম আলো। তারা উন্নয়নের বিরুদ্ধে অপতৎপরতা চালিয়ে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চায়।’
এই সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, ‘আজকে স্বাধীনতাকে বিকৃত করে, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সেই পুরনো শকুনের মতো স্বাধীনতার লাল-সবুজ পতাকাকে তারা খামচে ধরতে চায়।’
সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক অভিনেতা পীযূষ বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘নির্বাচন যখন ঘনিয়ে আসে, তখন শেখ হাসিনার সরকারকে কলুষিত করতে, দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ও নির্বাচনকে কলঙ্কিত করতে একটি গোষ্ঠী সুপরিকল্পিতভাবে এসব শুরু করে। আমাদের সবার সম্মিলিত প্রয়াসে এসব রুখে দাঁড়াতে হবে।’
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম অহিদুজ্জামান বলেন, ‘২৬ মার্চের প্রথম আলোর ওই মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদনটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে চক্রান্তের অংশ।’
‘স্বাধীনতা –সচেতন নাগরিক সমাজ’- এর ব্যানারে প্রথম আলোর নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে শরিক হন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোরঞ্জন ঘোষাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল ওরফে বিচ্ছু জালাল, চিত্রশিল্পী মনিরুজ্জামান, চিত্রনায়ক রিয়াজ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অভিনেত্রী তারিন জাহান, তানভীন সুইটি, শামীমা তুষ্টি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মহিলা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য অভিনেত্রী উর্মিলা শ্রাবন্তী করসহ আরও অনেকে।