প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৩ ২১:৪৯ পিএম
আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৩ ২১:৫৫ পিএম
নিহত আবদুল্লাহ আল সোহান। ছবি : সংগৃহীত
স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বাড়িওয়ালা ও স্থানীয়দের মারধরে মৃত্যু হয়েছে আবদুল্লাহ আল সোহান নামের এক ব্যক্তির। মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) রাতে যাত্রাবাড়ীর মানিকনগর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহত সোহান পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার চন্দনপাড়া গ্রামের ইউনুস মিয়ার ছেলে। আর কয়েকদিন পরেই পিএইচডির জন্য কানাডা যাওয়ার কথা ছিল তার। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের বাবা।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সোহানকে মারধরের কথা স্বীকার করেছে বলেও জানায় পুলিশ।
নিহত সোহানের চাচাতো ভাই সাগর মিয়া জানান, মঙ্গলবার রাতে সোহান তার স্ত্রী দোলার বাসায় যান। তখন দোলাদের বাসায় তাদের পরিবারের কেউ ছিলেন না। দোলার বাসার বাড়িওয়ালা ও স্থানীয়রা বিয়ের বিষয়ে জানতেন না। কারণ দুই বছর আগে আদালতের মাধ্যমে দোলাকে বিয়ে করেছিলেন সোহান। এ সময় বাড়িওয়ালা জামাল তাদেরকে জেরা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে দোলা তাদের বিয়ের কাগজপত্র বাড়িওয়ালাকে দেখান। কিন্তু তারপরেও বাড়িওয়ালা দোলার কাছ থেকে সোহানকে ছিনিয়ে নিয়ে পাশের বাসার নিচে নিয়ে যায়। এরপর তাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে সোহান অচেতন হয়ে পড়লে প্রথমে মনোয়ারা হাসপাতাল ও পরে মুগদা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বাবা ইউনুস খান বলেন, ‘সম্প্রতি আমি জানতে পারি আমার ছেলে দোলা নামে একটি মেয়েকে বিয়ে করেছে। কিন্তু বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। মঙ্গলবার রাতে আমার ছেলে ওই মেয়ের বাসায় যায়। পরে সন্দেহ করে আমার ছেলেকে মারধরে করে বাড়িওয়ালা জামালসহ কয়েকজন হত্যা করে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলে যদি বিয়ে না করে ওই বাসায় যায়, তাহলে পুলিশকে খবর দিতে পারত। অথবা তাদের উদ্দেশ্য যদি খারাপ থাকে কিছু টাকা পয়সা নিয়ে আমার ছেলেকে ছেড়ে দিতে পারত। কিন্তু তারা তা না করে আমার একমাত্র ছেলেকে মেরে ফেলল। যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আর আমার ছেলেকে ওই মেয়ের সামনে এভাবে নির্যাতন করে মেরে ফেলল, তার কি কোনো ভূমিকা ছিল না?’
সোহানের বাবা বলেন, ‘আমার ছেলে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স শেষ করেছে। আগামী এপ্রিলের ২২ তারিখে পিএইচডি করার জন্য কানাডা যাওয়ার কথা ছিল। সে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করত। দেশের বাইরে চলে যাবে সেজন্য কয়েকদিন আগে সে চাকরিটা ছেড়ে দেয়। কিন্তু তার কানাডা যাওয়া হলো না। এই দুষ্কৃতিকারীরা আমার একমাত্র ছেলেকে হত্যা করেছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মফিজুল আলম বলেন, ‘যাত্রাবাড়ীর মানিকনগরে মনোয়ারা হাসপাতালের পেছনে ওই যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতের বাবা বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনায় অভিযুক্ত বাড়িওয়ালা জামালসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, সোহান ও মাসুমা সিদ্দিকা দোলা স্বামী-স্ত্রী এবিষয়টি তারা জানতেন না। ওই যুবককে মারধর করে হত্যা করা তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। ভয় দেখাতে চেয়েছিলেন তারা।’