নওগাঁয় র‍্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু তদন্তে কমিটি, কেউ দোষী হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা

নওগাঁয় র‍্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিন নামের এক নারী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্তে যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়, তবে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। 

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। 

র‌্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু ও র‌্যাব সদস্যদের কারও দায়িত্বে অবহেলা ছিল কি না, জানতে চাইলে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত যুগ্ম সচিব এনামুল হকের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে, ফেক আইডি ব্যবহার করে তার নামে চাকরি দেওয়া ও বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রতারণা করে আসছিল। তিনি ২০২২ সালের মার্চে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। সেখানে তিনি এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন।’ 

তিনি বলেন, ‘একজন নারী তার নামে ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে প্রতারণার অভিযোগে আদালতে মামলাও করেন। গত ১৯ ও ২০ মার্চ নিজ কার্যালয়ের সামনেই তার নাম ব্যবহার করে প্রতারক চক্র অর্থ প্রতারণা করে। এই খবর পেয়ে খোঁজ নেন যে প্রতারণায় আল আমিন নামে একজনের যোগসাজশ রয়েছে। এরপর তিনি খবর পান জেসমিন নামে এক নারীর নাম।’

র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনি অফিস যাওয়ার পথে র‌্যাবের টহল টিমকে অভিযোগ করেন। তার সামনেই অভিযুক্ত নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করি। জিজ্ঞাসাবাদকালে নারী সদস্যরা ছিলেন। সাক্ষী ছিলেন, অভিযোগকারী এনামুল হকও ছিলেন।’ 

সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদে আটক জেসমিন সব অভিযোগ স্বীকার করেন বলেও দাবি করেন র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ‘তার মোবাইলে চলমান অবস্থায় এনামুল হকের নামে খোলা ফেক ফেসবুক আইডি দেখা যায়। তার মোবাইলে সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের তথ্য পাই। যেখানে লাখ লাখ টাকা জমা রসিদের তথ্য পাওয়া যায়।’ 

পরে সাক্ষীদের সামনেই আটক জেসমিনকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আটক করা হয় বলে জানান খন্দকার মঈন। এরপর জব্দ আলামত নিয়ে একটি কম্পিউটারের দোকানে প্রিন্ট করা হয়। পরে সেখান থেকে থানায় মামলার উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে ওই নারী অসুস্থবোধ করেন। তখন র‌্যাব মামলার চেয়ে তাকে হাসপাতালে নেওয়াকেই অধিক গুরুত্ব দেয় বলে দাবি করেন খন্দকার মঈন। 

কমান্ডার মঈন বলেন, ‘র‌্যাব শুধু না, প্রত্যেকটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নারী ও শিশু অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সিরিয়াস। আমরা ওই নারীকে নওগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাই। তিনি গাড়ি থেকে নিজে নেমে হেঁটে হাসপাতালে ঢোকেন। তার আত্মীয়-স্বজন ও তার এসিল্যান্ডসহ ভূমি অফিসে তার সহকর্মীদের খবর দেওয়া হয়।’ 

সন্ধ্যার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্ট্রোক সন্দেহে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে সিটি স্ক্যানে স্ট্রোকের আলামত আসে। তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বলে জানান র‍্যাব কর্মকর্তা।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ওই নারীর কীভাবে মৃত্যু হয়েছে তা কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেছেন, ডেথ সার্টিফিকেটে তা উঠে এসেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করতে পারমিশন লাগে। ভুক্তভোগী যুগ্ম সচিব এনামুল হক অনুমতি সাপেক্ষে পরবর্তীতে থানায় বাদী হয়ে মামলা করেন।’ 

তিনি বলেন, ‘যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, জেসমিন নামে ওই নারী র‌্যাব হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এখানে র‌্যাব সদর দপ্তরের পক্ষ আমাদের ইনকোয়্যারি সেল রয়েছে। ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্তে দেখা হচ্ছে, কারও কোনো ধরনের অবহেলা, গাফিলতি বা যোগসাজশ কিংবা অনৈতিক কিছু ছিল কিনা। তদন্তে যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়, তাহলে অতীতের মতো চাকরিচ্যুতিসহ কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

কারও অবহেলা বা গাফিলতি র‌্যাব পেয়েছে কি না, জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, ‘এটা এখনি বলার মতো সময় আসেনি। মেডিকেল রিপোর্টে সব ক্লিয়ার। তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটি তদন্তে যদি কারও কোনো ধরনের গাফিলতি পায়, তাহলে অবশ্যই আমরা আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’