× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সায়েন্স ল্যাবে বিস্ফোরণ : খোঁজ মেলেনি ভবন মালিকের

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৩ ০৮:৪৭ এএম

সায়েন্স ল্যাবে ভবনে বিস্ফোরণের পর সেখানে কাজ করছে সেনাবাহিনীর বোম্ব ডিসপোসাল টিম। প্রবা ফটো

সায়েন্স ল্যাবে ভবনে বিস্ফোরণের পর সেখানে কাজ করছে সেনাবাহিনীর বোম্ব ডিসপোসাল টিম। প্রবা ফটো

প্রতিদিনের মতো দুই বছরের ছোট্ট ছেলে রাহাতকে আদর দিয়ে অটোরিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন সোহেল রানা। একমাত্র ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে সোহেলের সংসার রামপুরা মহানগর প্রজেক্ট এলাকায়। রবিবার সকালে সায়েন্স ল্যাবের শিরিন ম্যানশনের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বাধে বিপত্তি। হঠাৎ বিস্ফোরণে আঘাত পাওয়ায় আশঙ্কাজনক অবস্থা তার। চিকিৎসক জানিয়েছেন আইসিইউ সাপোর্ট দরকার তার। কিন্তু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খালি নেই আইসিইউ বেড।

সোহেলের বড় ভাই কাওসার মিয়া প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ওষুধে এ পর্যন্ত তাদের প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। আমরা দিন আনি দিন খাই মানুষ। কী করব বুঝতেছি না।’

রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় মিরপুর রোডের এই বিস্ফোরণে নিহত হন তিনজন; আহত হন অর্ধশতাধিক। ৯ জন এখনও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে সোহেলসহ পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তাদের চিকিৎসার জন্য বোর্ড গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ঘটনার দুই দিনেও খোঁজ মেলেনি মালিকপক্ষের। পুলিশ চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। ঘটনার পর পুলিশ একটি সাধারণ ডায়েরি করলেও সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ মামলা করেনি। মালিকপক্ষের খোঁজ নিতে গেলে নিউ মার্কেট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল জানান, ‘ভবনটির মালিক শিরিন পল্টনে থাকেন। আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তবে কাউকে পাইনি। তারাও কেউ থানায় এমনকি ঘটনাস্থলে আসেনি।’

মামলা না হওয়া প্রসঙ্গে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. শহিদুল্লাহ জানান, কী কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে তা তদন্তে বের হয়ে এলে সেই অনুযায়ী মামলার ধারা হবে। তার আগে ‘ধারা’ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে নিহতের পরিবার মামলা করলে সেটা নিয়ে পুলিশ তদন্ত করবে বলে তিনি জানান।

শিরিন ম্যানশনের ম্যানেজার আবুল কালাম বলেন, তিনি ৪০ বছর ধরে এই ভবনে চাকরি করছেন। চার দিন আগে থেকে অসুস্থতার কারণে ছুটিতে আছেন বলে জানান। এখান থেকে মাসে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ভাড়া আসে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ভাড়া তুলে জাকিয়া ম্যামকে দিই। তিনি সেই টাকা বিদেশে শিরিন ম্যামের কাছে পাঠিয়ে দেন বলে শুনেছি।’

জাকিয়া ও শিরিন দুই বোন বলে জানান ম্যানেজার আবুল কালাম।

ভবনটির বর্তমান অবস্থা

তিন তলা ভবনটির ওপরের তলা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হলেও প্রথম ও দ্বিতীয় তলাও ব্যবহারযোগ্য নেই। ঘটনার দিনই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সোমবার জনসাধারণের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ করে ঝুঁকিপূর্ণ লেখা সাইনবোর্ড লাগিয়েছে তারা। ফলে ভবনটির দোকান খোলেনি।

ভবনটির সামনে সোমবার বিকেলেও দেখা গেছে, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে ইট, কাচ, আসবাবপত্র। সেই সঙ্গে হতাহতদের রক্তের ছোপ ছোপ দাগও রয়েছে। পুলিশ ভবনটি ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। ১৪-১৫ জন পুলিশ সদস্য সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা যা বলছেন

ভবনটির নিচ তলায় তাসা নামে একটি পাঞ্জাবির দোকান রয়েছে মোহাম্মদ তাজের। বিস্ফোরণের পর থেকে বন্ধ। সোমবার সকালে দোকান খুলতে পারেননি। তাই সেখানে দাঁড়িয়ে দোকানের দিকে তাকিয়ে ছিলেন।

জিজ্ঞেস করতেই তাজ বললেন, ‘দুই দিন ধরে দোকান বন্ধ। বেচাকেনা নেই। জানি না এভাবে আর কত দিন বন্ধ রাখতে হবে। এমনিতেই লসে আছি।’ করোনার ধকল এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি বলে তিনি জানান।

শিরিন ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে সেস্ট টেইলার্স। এর মালিক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘২০১৫ সাল থেকে এখানে ব্যবসা করছি। এখানে আমার কাপড়ের গোডাউন ছিল। কয়েক দিন আগে ৫০ লাখ টাকার কাপড় তুলেছি, ঈদ উপলক্ষে। এ ছাড়া অন্য পাশে প্রায় ২৭ লাখ টাকার কাপড়চোপড় ছিল। সব নষ্ট হয়ে গেছে। দোকানের ফলস সিলিংসহ সব ভেঙেচুরে গেছে।’

আশপাশের ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত

বন্ধ রয়েছে শিরিন ম্যানশনের দক্ষিণ পাশের কাদের আর্কেড নামের ভবনটিও। এর নিচ তলায় অনেকগুলো দোকান রয়েছে। ওপরের তলাগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং সেন্টারসহ বিভিন্ন ধরনের অফিস। বিস্ফোরণে এই ভবনটিরও উত্তর অংশের দেয়াল ভেতর দিয়ে ভেঙে গেছে। তা ছাড়া কাদের আর্কেডের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আর প্রশাসনের পক্ষ থেকেও দোকান খুলতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই সকালে এসেও দোকান খুলতে পারেননি এখানকার ব্যবসায়ীরা।

এসএম ফরিদ তাদেরই একজন। ফরিদ সকাল থেকে নিচ তলায় চেয়ার পেতে অপেক্ষা করছেন, যদি বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়, যদি দোকান খোলার অনুমতি মেলে। কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও দোকান খোলার অনুমতি মেলেনি। 

ব্যারিকেড দেওয়া অংশে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একটি এটিএম বুথ পড়েছে। তাও বন্ধ রয়েছে। দারোয়ান আব্দুল হাকিম দরজা খুলে বুথের ভেতরে বসে আছেন। উঁকি দিতেই বলে উঠলেন, ‘ভাই, বুথ বন্ধ।’ সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর হাকিম বলেন, ‘রবিবার থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ। এসিও বন্ধ রয়েছে। ভেতরে গরমে টেকা যায় না। তাই দরজা খুলে বসে আছি।’

শিরিন ম্যানশনের পূর্ব পাশের আবাসিক ভবন সুরাইয়া’স ড্রিম ভবনটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনটির অনেকগুলো জানালার কাচ ভেঙে গেছে। শিরিন ম্যানশনের তৃতীয় তলা বরাবর সুরাইয়া’স ড্রিমের তৃতীয় তলার দেয়াল ভেঙে গেছে। এতে সুরাইয়া’স ড্রিমের দুজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬০ বছর বয়সী মাহবুবুল নবী গুরুতর আহত হয়ে পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

মাহবুবুল নবীর ছেলে শাহরিয়ার জানান, তারা সুরাইয়া’স ড্রিমের তৃতীয় তলায় থাকেন। তার বাবা চেয়ারে বসে ছিলেন। বিকট শব্দে শিরিন ভবন বিস্ফোরণে তাদের দেয়াল ভেঙে তার বাবার গায়ের ওপর পড়ে। এতে তার ডান হাতের চামড়া ছিলে গেছে। পা ভেঙে গেছে। শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে গেছে। 

ময়নাতদন্তের পর লাশ হস্তান্তর

বিস্ফোরণে নিহত তিনজনের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ফাহমিদা নার্গিস মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন।

বিস্ফোরণের কারণ

ঘটনার পর থেকেই ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে দাবি করছে। সোমবার ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেছেন, এখন পর্যন্ত নাশকতার আলামত মেলেনি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, সম্ভবত দীর্ঘদিন জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে এই দুর্ঘটনা।’

দুর্ঘটনা নাকি অন্য কারণে বিস্ফোরণ তা জানতে তিনি সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছিলেন জানিয়ে বলেন, সেনাবাহিনী একটি টিম পাঠিয়েছিল। সেই টিম কাজ করেছে; নাশকতা বা বিস্ফোরকজাতীয় কোনো আলামত পায়নি। 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটও গ্যাসকেই দায়ী করছে। সিটিটিসির বোম ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান এডিসি রহমত উল্লাহ চৌধুরী বলছেন, ‘গ্যাস জমে থাকার কারণে সেখানে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের টিম সেখানে গিয়ে গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েছে। অন্য কোনো ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্যের আলামত পাওয়া যায়নি।’


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা