ঢাকার হাসপাতালে বিদেশি পাইলটের মৃত্যু
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:৪৮ পিএম
গালফ এয়ারের মৃত পাইলট মোহান্নাদ ইউসেফ হাসসান আল হিন্দির বোন তালা এলহেনডি জোসেফানো সংবাদ সম্মেলন করেন। প্রবা ফটো
রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মোহান্নাদ ইউসেফ হাসসান আল হিন্দি (বিদেশি নাগরিক) নামে গালফ এয়ারের এক পাইলটের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ইউসেফের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালটির বিরুদ্ধে তার বোন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক তালা এলহেনডি জোসেফানো গুলশান থানায় মামলা করতে যান। তবে থানায় মামলা না নিয়ে পুলিশ তাকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়। ওই রাতেই তিনি বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) জোসেফানোর আইনজীবী ব্যারিস্টার মহুয়া মোর্শেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউনাইটেড হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় গালফ এয়ারের পাইলট মোহান্নাদ ইউসেফের মৃত্যুর ঘটনায় গুলশান থানা মামলা নেয়নি। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরমান আলী ও গুলশান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার নিউটন দাস ঘটনা গুরুতর উল্লেখ করে আমাদের আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। আদালত থেকে থানায় এফআইআর করতে বললে তারা সহযোগীতার কথাও জানান।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে জোসেফানো বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। ওই ঘটনায় আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে। আমরা শিগগিরই আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গণমাধ্যমকে অবহিত করব।’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জোসেফানো তার আইনজীবীকে নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা করতে গুলশান থানায় যান্। থানায় আড়াই ঘণ্টা অবস্থান করে মামলা করতে না পেরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে থানা থেকে বেরিয়ে যান। এ সময় থানার ওসি আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন।
ওই রাতে জোসেফানো অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে রাজি ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তারা মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মামলা না নিতে পুলিশকে প্রভাবিত করেছে। পুলিশ এ হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে হাসপাতালকে সাহায্য করছে।’
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের ডিসি মো. আ. আহাদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘জোসেফানো তার ভাইয়ের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগে মামলা করতে থানায় এসেছিলেন। বিয়য়টি জটিল হওয়ায় আমরা তাকে আদালতে মামলা করতে পরামর্শ দিয়েছি।’
ঢাকা ছাড়ার আগে জোসেফানো বলেন, ‘করোনা মহামারির সময়ও রোগীদের সেবা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এ হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিলের দাবি উঠেছিল। এটি পরিষ্কার যে, তারা চিকিৎসাসেবার মতো মহান দায়িত্ব পালনের অযোগ্য। হাসপাতালটিতে আমার ভাইয়ের প্রাণহানির ঘটনাই শেষ নয়। চিকিৎসা অবহেলায় তাদের অতীত ইতিহাস আছে। কাজেই তাদের লাইসেন্স বাতিলসহ ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে প্রচলিত ফৌজদারি কার্যবিধি ও দণ্ডবিধি আইনে আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার চাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি গত ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশে এসে নিয়মিত ইউনাইটেড হাসপাতালে গিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে ঘটনার দিনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও চিকিৎসার যাবতীয় তথ্য চাই। কিন্তু তারা দিনের পর দিন কালক্ষেপণ করতে থাকে এবং পরে তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমি নিজে তদন্ত করে এ মামলার প্রাথমিক তথ্য উদঘাটন করি।’
এর আগে গত সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে জোসেফানো বলেন, ‘গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান আমার ভাই ইউসেফ হাসসান। এটা খুবই পরিষ্কার যে, প্রথম কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের (হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে) পর আমার ভাইকে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। দুপুর ১২টার দিকে তাকে পিসিআই কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। অর্থাৎ অযথাই সাড়ে ছয় ঘণ্টা সময় নিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ সময়ের মধ্যে সঠিক চিকিৎসা হলে আমার ভাইকে বাঁচানো যেত। কিন্তু চিকিৎসার ক্ষেত্রে তারা অবহেলা করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ সময় চিকিৎসাবিহীন থাকার কারণে বেশ কয়েকবার তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। একজন রোগীকে সাড়ে ছয় ঘণ্টা চিকিৎসাবিহীন রাখার পরেও একজন কার্ডিওলোজিস্টকে তারা (কর্তৃপক্ষ) সেখানে আনতে পারেননি। তারা মূলত আমার ভাইকে হত্যা করেছেন। ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে যথাযথ ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে আমি ন্যায়বিচার চাচ্ছি।’
এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে দৃষ্টান্তমূলক জরিমানা বা ক্ষতিপূরণ চান জোসেফানো। বলেন, ‘আমি চাই না অন্য কারও ভাই, বোন, বাবা, মা আমার ভাইয়ের যা হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে যাক। আমি চাই না, আমাদের আস্থা রাখা চিকিৎসকদের হাতে আরও কেউ ভুল চিকিৎসার শিকার হোক। আমি ইউনাইটেড হাসপাতালকে এ রকম ভয়াবহ চিকিৎসা অবহেলা থেকে বিরত রাখতে চাই। আর কেউ যেন চিকিৎসা নিতে গিয়ে এমন অবহেলার শিকার না হয়।’