× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মিরপুরে শাহাদাত-ইব্রাহিম আতঙ্ক

শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:০৫ পিএম

মিরপুরে শাহাদাত-ইব্রাহিম আতঙ্ক

গত ১ জানুয়ারি রাত ৭টা ৫০ মিনিট। বাড়ি ও ফ্ল্যাট মালিকদের সংগঠন ওয়েলফেয়ার সোসাইটির অফিসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন ঠিকাদার হোসেন আলী। তার সঙ্গে ২০-২৫ জন লোক। হঠাৎ কাপড়ে মুখ ঢাকা অন্তত ১৫ জন যুবক ফাঁকা গুলি করতে করতে অফিসে ঢোকে। আতঙ্কে যে যার মতো নিরাপদ স্থানে চলে যান। যুবকরা চেয়ারে বসে থাকা হোসেন আলীকে টেনে মেজেতে ফেলে রামদা দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে রক্তাক্ত অবস্থায় রেখে দিব্যি হেঁটে চলে যায়।

মিরপুর ভাসানটেকের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে সংঘটিত ওই ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার ইব্রাহিমের শ্যালক সাহেদকে প্রধান করে আরও ৬ জনের নামে মামলা করে ভুক্তভোগীর পরিবার। এ ঘটনায় রায়হান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। জানা গেছে, রায়হান শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার ইব্রাহিমের লোক। 

পল্লবীর ব্যবসায়ী মুসার ((ছদ্মনাম) কাছে গত বছরের ১০ অক্টোবর বিদেশি একটি নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোন ধরতেই অপর প্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে শাহাদাত বলে পরিচয় দিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন ব্যবসায়ী। এর চার দিন পর ১৪ অক্টোবর ওই ব্যবসায়ীর দোকানের সামনে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় সন্ত্রাসীরা।

এ ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই শাহাদাতের ফোন- ‘এটা সামান্য নমুনা। চাঁদা না দিলে স্ত্রী-সন্তানের মুখ দেখা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।’ পরে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী প্রাণের ভয়ে চাঁদা দিয়ে দেন শাহাদাতের বাহিনীর কাছে।

এভাবে বৃহত্তর মিরপুর এলাকার প্রতিটি সেক্টর থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাত ও কিলার ইব্রাহিমের নামে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের চাঁদা ওঠে। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এ দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী বিদেশে পলাতক থাকলেও দেশে থাকা তাদের এজেন্টদের দিয়ে এসব অপকর্ম করায়। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, ভাসানটেকে যত অপকর্ম হয়, সবই করে কিলার ইব্রাহিমের লোকে। একটি শিশু জন্মগ্রহণ করলেও ইব্রাহিমের কাছে খবর চলে যায়। প্রতিটি সেক্টর থেকে চাঁদা তোলা হয় তার নামে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বৃহত্তর মিরপুর এলাকার স্থাপনা নির্মাণ, ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ী, জমি ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পোশাক কারখানা, বাড়ির মালিক, উচ্চপদস্থ চাকরিজীবী, চিকিৎসক, ছোট-বড় ব্যবসায়ী, বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতাল, বস্তি, স্থায়ী-অস্থায়ী বাজার, ফুটপাথ থেকে চাঁদাবাজির ভাগ, ঠিকাদার এমনকি মাদক ব্যবসা থেকেও চাঁদা নেয় শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। মিরপুর এলাকায় শাহাদাত ও ইব্রাহিমের আলাদা অন্তত ২০টি গ্রুপ আছে। প্রতিগ্রুপেই ১০ থেকে ১২ জন করে সদস্য আছে। তারা প্রত্যেকেই আগ্নেয়াস্ত্র বহন করে। হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ খুলে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখে।

গ্রুপের মাধ্যমেই বিদেশ থেকে আসে নির্দেশনা। গ্রুপের সদস্যরা প্রথমে টার্গেট করা ব্যক্তির নাম, ঠিকানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অর্থ-সম্পদের খোঁজখবর নেয়। পরে ওই ব্যক্তির মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে। নম্বর পাঠানো হয় বিদেশে। সেখান থেকে ফোন দেয় শাহাদাত ও ইব্রাহিম। শুধু তাই নয়, সরকারদলীয় সেখানকার শীর্ষ পর্যায়ের নেতা, কাউন্সিলরও প্রাণের ভয়ে প্রতিমাসে এ দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে চাঁদার টাকা পরিশোধ করছেন বলে জানা গেছে। দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী ও এদের সন্ত্রাসী গ্রুপের জন্য প্রতিমাসে চাঁদার টাকা আলাদা করে রাখেন টার্গেট ব্যক্তিরা। বেশ কয়েকজন নেতা ও কাউন্সিলর এমন আশঙ্কার কথা প্রকাশ করলেও তারাও প্রতিকারের ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। কেন নিচ্ছেন না এমন প্রশ্নে তারা বলেন, পরের দিন তাহলে লাশ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাবে না।

এ দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর চাঁদা চাওয়ার কয়েকটি অডিও কল রেকর্ড রয়েছে এ প্রতিবেদকের কাছে। শাহাদাতের চাঁদা চাওয়ার একটি রেকর্ডিংয়ে শোনা যায়, কল করেই সে এক ব্যবসায়ীকে বলছেÑ ‘হ্যালো, ভাইজান আসসালামু আলাইকুম। আমি শাহাদাত বলছি। ব্যবসা-বাণিজ্য তো ভালোই করছেন। আমাদেরও তো পোলাপান আছে। তাদেরকে চালাতে হয়, খরচপাতি লাগে। আপনি ৫ কোটি টাকা দিয়েন। ছোট ভাই মোক্তার যোগাযোগ করবে। টাকাটা তাকে দিয়ে দিয়েন।’ এর কিছুক্ষণ পর মোক্তার ওই নম্বরে কল দিয়ে ব্যবসায়ীকে চাঁদা দিতে বলে। 

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, মিরপুর এলাকায় দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামে চাঁদাবাজির অনেক ঘটনাই ঘটছে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা থানায় মামলা-জিডি করেন না। যেসব মোবাইল নম্বর থেকে ফোন দিয়ে চাঁদা চাওয়া হয়, সেগুলো দেশের বাইরের। যাদের কাছে চাঁদা চাওয়া হয় তারা যদি সহযোগিতা না করেন, তাহলে এসব চাঁদাবাজকে ধরা কঠিন হবে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা