সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:৩৪ পিএম
আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:৫৫ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
পারুল আক্তার। বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতি। সম্পর্ক করেছিলেন নিজ এলাকার মো. নাছির উদ্দীন বাবুর সঙ্গে। ২০১২ সালে পরিবারের অমতে তারা বিয়ে করে সংসার পেতেছিলেন ঢাকার আশুলিয়ায়। দুজনই কাজ করতেন পোশাক কারখানায়। বিষয়টি মেনে নিতে পারছিলেন না মেয়ের বাবা কুদ্দুছ খাঁ। ক্ষোভ মেটাতে ও জামাতাকে ফাঁসাতে মেয়েকে জয়পুরহাটে খুন করেন তিনি।
২০১৫ সালের লোমহর্ষক এ ঘটনা থানা-পুলিশ, ডিবি, সিআইডি, পিবিআই (টাঙ্গাইল) তদন্ত করে কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। নিখোঁজ মেয়ের সন্ধানে বাবার করা সাধারণ ডায়েরির মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে সাত বছর পর এ খুনের রহস্য উন্মোচন করে ঢাকা জেলা পিবিআই।
রবিবার (২২ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হেডকোয়ার্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে মামলার বিস্তারিত তুলে ধরেন সংস্থাটির প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।
তিনি বলেন, মেয়ে ভালোবেসে ঢাকায় পালিয়ে এসে বিয়ে করার ঘটনায় বাবা কুদ্দুছ খাঁ ২০১২ সালে কালিহাতি থানায় জিডি করেছিলেন। পরে ২০১৫ সালে পারুল তার বাবাকে ফোন করে সংসারের অশান্তির কথা জানায়। মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে উন্নত জীবনযাপনের লোভ দেখান বাবা। ১৮ জুলাই ২০১৫ সালে নাছির তার নানিকে দেখতে যায়। সেই সুযোগে বাবার দেওয়া আশ্বাসে পারুল পরদিন তার বাবাকে ফোন করে টাঙ্গাইলে যায়।
একই দিন পারুল আক্তারের স্বামী মো. নাছির উদ্দিন কুদ্দুছ খাঁর বিরুদ্ধে মেয়েকে বাবার বাড়ি পালিয়ে যেতে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে আশুলিয়া থানায় জিডি করেন। এই নিখোঁজ জিডির সূত্র ধরে ঘটনা আড়াল হতে থাকে। মামলার রহস্য উদঘাটনে কাজ করেন একাধিক তথ্য কর্মকর্তা।
বনজ কুমার মজুমদার হত্যার ঘটনা সম্পর্কে বলেন, ২০১৫ সালের ১৯ জুলাই বাবা তার মেয়েকে নিজ বাড়িতে না নিয়ে পাশের এলাকা ভুঞাপুরে বন্ধু মোকাদ্দেছ ওরফে মোকা মণ্ডলের বাড়ি নিয়ে যান। সেখান থেকে মোকা মণ্ডল ভবিষ্যতে পারুলকে প্রতিষ্ঠিত করবে এবং কিছুদিন স্বামী থেকে লুকিয়ে থাকতে হবে বলে জয়পুরহাটে নিয়ে যান। সেখানে পাঁচবিবি এলাকায় নির্জন জায়গায় রাতের আঁধারে মোকা মণ্ডলের সহযোগিতায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মেয়েকে হত্যা করেন কুদ্দুছ।
ঘটনার তদন্তের বিষয়ে পিবিআই প্রধান বলেন, ২০১৫ সালের ৪ আগস্ট নাছির উদ্দিনের পরিবারের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইলের আদালতে পেনাল কোডে মামলা করেন পারুলের বাবা। কালিহাতি থানা-পুলিশ তদন্ত করে প্রেম করে বিয়ে করার সংশ্লিষ্টতা পায়। কিন্তু অভিযুক্তকে না পাওয়ায় ঘটনাস্থল তাদের এখতিয়ার-বহির্ভূত এলাকা (ঢাকায়) মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করে।
ডিবি পুলিশ, পিবিআই (টাঙ্গাইল), সিআইডি (টাঙ্গাইল) তদন্ত করে একই প্রতিবেদন দাখিল করে। পরে আদালত জুডিসিয়াল তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়।
এতে বলা হয়, বাদী ঢাকার আদালতে মামলা করলে প্রতিকার পেতে পারে। ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর কুদ্দুছ খাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন আদালতে তদন্ত প্রতিবেদনসহ নারী নির্যাতন দমন আইন-২০০০-এ যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে হত্যা মামলার আবেদন করেন।
পরে গত ৩০ নভেম্বর আদালত আশুলিয়া থানাকে মামলা করতে এবং পিবিআই ঢাকা জেলাকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। আশুলিয়া থানায় ১১ ডিসেম্বর মামলা করা হলে পিবিআই ঢাকা জেলা তদন্ত শুরু করে। পিবিআই মো. নাছির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। বাদী আ. কুদ্দুছ খাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে অসামঞ্জস্য তথ্য দেন।
পরে কুদ্দুছের মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরেই একপর্যায়ে রহস্য উদঘাটন হয়। বাবা নিজেই তার মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
তার দেওয়া তথ্য যাচাই করার জন্য পিবিআই ঢাকা জেলা জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানা থেকে ২০১৫ সালের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। পাঁচবিবি থানায় করা মামলার আলামত, সুরতহালের বর্ণনা এবং ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে কুদ্দুস খাঁর বর্ণনার মিল পাওয়া যায়। এই ঘটনায় আসামি মোকাদ্দেছ ওরফে মোকা মণ্ডলকেও গ্রেপ্তার করা হয়।