× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সাবেক অধ্যক্ষের যোগসাজশে ৫ বছর ধরে প্রশ্নফাঁস

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২২ ১৫:৫৬ পিএম

আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২২ ১৬:৩০ পিএম

বিএসসি ইন নার্সিং পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে আটক ছয়জন। ছবি : প্রবা

বিএসসি ইন নার্সিং পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে আটক ছয়জন। ছবি : প্রবা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত নার্সিং কলেজগুলোর বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনায় একটি নার্সিং কলেজের সাবেক অধ্যক্ষসহ চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

র‍্যাব জানায়, এ চক্রের সদস্যরা গত পাঁচ বছর ধরে নার্সিংসহ একাধিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন। কোহিনুর বেগম ২০০৮ সাল থেকে ঢাকার একটি সরকারি নার্সিং কলেজে নার্সিং প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে অবসরে যাওয়ার পর একটি বেসরকারি নার্সিং কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। গ্রেপ্তাররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত নার্সিং কলেজগুলোর বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটি, মডারেটর ও ডিন থেকে নির্বাচিত প্রশ্নপত্র প্রিন্টিং ও প্যাকিংয়ে নিযুক্ত গোপন টিমের সদস্য ছিলেন। প্রশ্নফাঁস করে এ চক্রের সদস্যরা মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

সোমবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গত ২০ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য অধিভুক্ত নার্সিং কলেজের প্রথম বর্ষ ফাইনাল বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই আদান প্রদান করার প্রমাণ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দল ২০ আগস্ট পরীক্ষা শুরুর আগে একটি নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের মোবাইলে প্রশ্নপত্রের ছবি ও সাদা কাগজে হাতে লেখা প্রশ্নপত্রের ছবি উদ্ধার করে। পরে র‌্যাব প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। 

এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০ এর অভিযানে রাজধানীর মহাখালী, ধানমন্ডি ও আজিমপুর এলাকা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূল অভিযুক্তসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মূল অভিযুক্ত ফরিদা খাতুন, মনোয়ারা খাতুন, নার্গিস পারভীন, কোহিনুর বেগম, ইসমাইল হোসেন ও আরিফুল ইসলাম। উদ্ধার করা হয় ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্রের কপি ও ৯টি মোবাইল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য দিয়েছেন। 

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সর্বমোট ৯৮টি নার্সিং কলেজের মধ্যে বর্তমানে ৩৮টি কলেজে পরীক্ষা চলছে। প্রশ্নপত্রের গোপনীয়তা বজায় রাখতে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন প্রশ্ন প্রণয়নকারী নিয়োগ দেওয়া হয়। যারা দুই সেট আলাদা প্রশ্নপত্র সরবরাহ করেন। পরবর্তীতে এই প্রশ্নপত্রগুলোকে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি মডারেটর টিম নিয়োগ করা হয়। যাদের কাজ হচ্ছে প্রশ্নপত্রগুলো থেকে পরীক্ষার জন্য এক সেট পরিপূর্ণ প্রশ্নপত্র তৈরি করে সেগুলো সিলগালার মাধ্যমে চিকিৎসা অনুষদের ডিনের কাছে জমা দেওয়া।

চিকিৎসা অনুষদের ডিন বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রশ্নপত্র সরবরাহের জন্য ৪ সদস্যদের একটি গোপনীয় টিম নিয়োগ করেন। যারা নির্বাচিত প্রশ্নপত্রটি প্রিন্টিং ও প্যাকিংয়ে নিযুক্ত থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রের চাহিদা অনুযায়ী প্রশ্নপত্রগুলো প্রিন্ট করে আলাদা আলাদা প্যাকিং করে তার উপরে কেন্দ্রের নাম লিখে সিলগালা করে দেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই প্রশ্নপত্রগুলো বিভিন্ন কেন্দ্রে বিতরণ করে।

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার ফরিদা খাতুন মহাখালীর একটি নার্সিং কলেজের Comprehensive Nursing and Pathphysiology বিষয়ের প্রশিক্ষক। প্রায় ১০ বছর তিনি ধরে এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রিন্টিং ও প্যাকিংয়ের দায়িত্বে থাকেন।  চক্রের অপর সদস্য গ্রেপ্তার নার্গিস ও মনোয়ারা বেগম তার অন্যতম সহযোগী। তারা পরস্পর যোগসাজসে বেশ কিছুদিন ধরে শিক্ষকতার আড়ালে ওই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছেন। গ্রেপ্তার ফরিদা খাতুন গত ২০ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় চিকিৎসা অনুষদের ডিন থেকে নির্বাচিত ৪ সদস্যদের গোপনীয় টিমের একজন সদস্য ছিলেন।

গত ১৩ আগস্ট গ্রেপ্তার নার্গিস ও মনোয়ারা বেগম ফরিদা খাতুনের কাছে Comprehensive Nursing and Pathphysiology পরীক্ষার প্রশ্নপত্র চাইলে ফরিদা খাতুন প্রিন্টিং ও প্যাকিংয়ের সময় সংগ্রহ করে রাখা প্রশ্নপত্র গ্রেপ্তারকৃত নার্গিস ও গ্রেপ্তার মনোয়ারা বেগমকে দেন। 

পরে এই চক্রের আরেক সদস্য প্রশ্নপত্রটি গ্রেপ্তার ইসমাইলের মাধ্যমে কোহিনূর বেগমের কাছে পৌঁছে দেন। এ সময় ইসমাঈল কিছু কপি নিজের কাছে রেখে দিয়ে অর্থের বিনিময়ে তার ঘনিষ্ঠজনদের কাছে সরবরাহ করে। পরবর্তীতে কোহিনূর বেগম ও আরিফ প্রশ্নপত্রটি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছে অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র পৌঁছে দেন।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার ফরিদা, মনোয়ারা, নার্গিস প্রায় ১০ বছর ধরে একটি নার্সিং কলেজের প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত। তারা বিভিন্ন সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত নার্সিং কলেজসমূহের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটি, মডারেটর ও ডিন  থেকে নির্বাচিত প্রশ্নপত্র প্রিন্টিং ও প্যাকিংয়ে নিযুক্ত গোপন টিমের সদস্য ছিলেন।

ইসমাঈল হোসেন রাজধানীর একটি নার্সিং কলেজের সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত ও আরিফ ঢাকার একটি নার্সিং কলেজের বিএসসি ইন নার্সিংয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের অন্যতম সদস্য কোহিনূর বেগমের কাছ থেকে সংগ্রহ করে বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের কাছে অর্থের বিনিময়ে সরবরাহ করেন।

গ্রেপ্তার আরিফ ২০১৭ সালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অপরাধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন। 

ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, আমরা ফাঁস করা প্রশ্নে ১০ থেকে ১২ জন পরীক্ষার্থীর নাম পেয়েছি। তাদের মধ্যে ৩ থেকে ৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান চলছে।  

প্রবা/ইউরি/
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা