জবি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:৪৬ পিএম
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ ০০:৪৭ এএম
পুরান ঢাকার সাকরাইন উৎসবে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে বাহারি রঙ্গের ঘুড়ি ও নাটাই। প্রবা ফটো
প্রায় চারশ’ বছর থেকে ঢাকার বিভিন্ন উৎসবকে অন্য এক উন্মাদনায় নিয়ে আসছে পুরান ঢাকা। পুরান ঢাকা যেন এক উৎসবের নগরী। সেই উৎসবের নগরীতে এখন বইছে সাকরাইনের হাওয়া। বাহারি কংক্রিটের অলিগলিতে চলছে সাকরাইন উৎসবের প্রস্তুতি। অনেকের কাছে সাকরাইন ঘুড়ি উড়ানোর উৎসব নামেও পরিচিত।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) পালন করা হবে এ সাকরাইন উৎসব। এজন্য সাজতে শুরু করেছে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা। সাকরাইনে ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি ও রঙবেরঙ ফানুশে ছেয়ে যাবে বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী শহরের আকাশ।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সরজমিনে দেখা যায়, সূত্রাপুর, নবাবপুর, ধূপখোলা, শ্যামবাজার, শাঁখারি বাজার, তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, সদরঘাট, গেন্ডারিয়া, লালবাগ, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে সাকরাইনের আমেজ। চলেছে ঘুড়ি বিক্রি এবং ছাদ সাজানো।
ধূপখোলার ঘুড়ির দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে চোখদার, রকদার, গরুদার, মাছলেঞ্জা, ফিতালেঞ্জা, একরঙা, চানতারা, বাক্স ঘুড়িসহ নানান নামের ঘুড়ি। আঁতশবাজির মধ্যে আছে পাঁচ শট, বারো শট কদম ফুল, তাঁরা শট। বোম পাওয়া যাচ্ছে, ব্যাটারি, চকলেট, শলতা, রকেট, পাতা ইত্যাদি বাহারি নামে। গোল ফানুস, হার্ট ফানুস, চারকোণা ফানুস নামে রয়েছে হরেক নামের ফানুস। তবে পুলিশের ভয়ে দোকানীরা লুকিয়ে লুকিয়ে এসব বিক্রি করছেন।
রাধামাধব ভাণ্ডারের শ্রী কাক্কেশ্বর জানান, বিভিন্ন রঙের, দামের ও ধরনের ঘুড়ি রয়েছে। সর্বনিম্ন ৬ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২০ টাকার ঘুড়িও আছে। তবে এক হাজার বা বেশি সংখ্যক নিলে ১ টাকা করে কম রাখা হচ্ছে। সুতার দাম সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকার পর্যন্ত রয়েছে।
প্রতিবছর সাকরাইনে কয়েক লাখ টাকার ঘুড়ি বিক্রি করেন শাঁখারি বাজারের ব্যবসায়ীরা। শঙ্খ শ্রী ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী তারক রায় বলেন, ভালোই বেঁচাকেনা চলছে। আমাদের পাইকারি কাস্টমার বেশি। ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা আসেন। দোকানে ৮ থেকে ১০ রকমের ঘুড়ি রয়েছে। নাটাই, সুতাও ভালো বিক্রি হচ্ছে।
শাখারি বাজারে গেন্ডারিয়া থেকে ঘুড়ি কিনতে এসেছে মিরাজ ও তার বন্ধু আরমান। দুইজনই স্কুল শিক্ষার্থী। তারা জানান, আমাদের কাছে এই উৎসব অনেক ভালো লাগে। প্রতিবছর জানুয়ারি মাস আসলে আনন্দ লাগে। ঘুড়ি উড়াই বন্ধুদের সাথে কাটাকাটি করে আনন্দ পাই।
নারিন্দার থেকে হৃদয় বাবু তার সন্তানকে নিয়ে এসেছেন ঘুড়ি কিনতে। তিনি জানান, এক সময় আমরা ঘুড়ি উড়িয়েছি। এখন আমাদের বচ্চাদের সময়, তাই তাদের জন্য প্রতিবছর ঘুড়ি কিনে দিতে হয়।
আবু জাফর নামের স্থায়ী এক বাসিন্দা জানান, ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি তারা পৌষ সংক্রান্তির পিঠা উৎসব করে থাকেন। এই উৎসবে তারা নিজেদের আত্নীয় স্বজনদের দাওয়াত ও দিয়ে থাকেন।
পুরান ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা রইছউদ্দীন বলেন, 'উড়ন্ত আগুন" তথা ফানুস, ডিজে-লাউডস্পিকার, আতশবাজি ও শব্দ দূষণমুক্ত সাকরাইন (ঘুড়ি উৎসব) চাই।'
ঢাকা সিটি দক্ষিণ কর্পোরেশনের ৩৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুর রহমান মিয়াজি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে মহল্লাভিত্তিক সাকরাইনের উৎসব হয়, সেটা অনুষ্ঠিত হবে। তবে সিটি কর্পোরেশন থেকে আমরা এখনও কোনো প্রোগ্রাম পাইনি।
পুরান ঢাকায় পুরনো যেসব উৎসব যুগের পর যুগ পালিত হয়ে আসছে, তার মধ্যে সাকরাইন অন্যতম। ১৭৪০ সালের পৌষ মাসের শেষ এবং মাঘ মাস শুরুর সন্ধিক্ষণে মোঘল আমলে নায়েব-ই-নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের সময়ে ঘুড়ি উৎসবের প্রচলন শুরু হয় বলে জানা যায়। কালের পরিক্রমায় এই দিনটি পুরান ঢাকাইয়াদের একটি অন্যতম উৎসব এবং আমেজে পরিণত হয়েছে।
এর বাইরে দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই এই উৎসব পালিত হয়ে থাকে।